নির্বাচিত কলাম
কাওরান বাজারের চিঠি
ইলেকশন হওয়া নিয়ে দিলীপ বড়ুয়ার মনে কেন সংশয়?
সাজেদুল হক
২৮ নভেম্বর ২০২২, সোমবারবিবিসি: নিশ্চয় ইলেকশন যেহেতু আসছে আপনাদের সঙ্গে আবার কথাবার্তা হবে? দিলীপ বড়ুয়া: একধরনের কথাবার্তা হবে মানে দায়সারা গোছের। ইলেকশন হবে কি না সেটাও তো একটা বিষয়। বিবিসি: কোনো সন্দেহ আছে? দিলীপ বড়ুয়া: আমার সন্দেহ আছে। বিবিসি: কেন? দিলীপ বড়ুয়া: ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল সমস্ত কিছু মিলিয়ে যে প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে সে প্রেক্ষাপটে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। বিবিসি: আপনি কি আশঙ্কা করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা, না আদৌ নির্বাচন হবে কিনা- এটা নিয়ে সন্দেহ আছে? দিলীপ বড়ুয়া: ওই তো সুষ্ঠু নির্বাচনের স্নোগানোর মধ্যদিয়ে দেখা যাবে যে আদৌ নির্বাচন নাও হতে পারে।
আগের কিছু লেখাতেও বলেছি, রাজনীতি অবশেষে মাঠে গড়িয়েছে। সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশ। দুঃখজনক কিছু ঘটনাও ঘটেছে। কথা বলছেন, কূটনীতিকরাও। জাপানের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য তো রীতিমতো বিস্ময়ই তৈরি করেছে। সতর্কবার্তা উচ্চারিত হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকেও।তো রাজনীতির এই বিরোধ নিষ্পত্তির পথ কী? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দু’টি পথই খোলা থাকে। সংলাপ এবং ব্যালট।বিজ্ঞাপন
এমন না যে, গতকালের আবিষ্কার। বহু পুরনো প্রযুুক্তি। তবুও কখনো কখনো বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। একটা সময় ছিল। আমরা তখন স্কুলে পড়তাম। ব্যান্ড গান ছিল বিপুল জনপ্রিয়। আজম খান, আইয়ুব বাচ্চু, জেমস। তাদের গান রিলিজ হলেই ধুম পড়তো ক্যাসেট বিক্রির। কনসার্টে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো আসতেন তরুণরা। তো দুই দিন আগে হঠাৎই আইয়ুব বাচ্চুর একটি পুরনো দিনের গান খুব মনে পড়ছিল। মুহূর্তে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে পেয়েও গেলাম। প্রযুক্তি সবকিছু কতোই না সহজ করে দিয়েছে। ‘প্রতিদান চায় না এমনও কিছু কিছু প্রেম হয়। কিছু প্রেম দূরে সরিয়ে দেয়। দূর থেকে শুধু ভালোবেসে যায়...।’ সুর আর মিউজিকের অপূর্ব খেলা। গানে নিশ্চিত করেই নর-নারীর প্রেমের কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কখনো কখনো ভালেবাসা সীমানা ছাড়িয়ে যায়। মুছে যায় মানুষ, প্রকৃতি আর দেশের পরিচয়। দূর থেকে ভালোবাসলেও কি প্রিয় মানুষটির সুখ-দুঃখ ছুঁয়ে যায় না? ম্যারাডোনাকে কখনো দেখিনি। টিভিতে সরাসরি তার খেলাও নয়। তারপরও আমরা ম্যারাডোনাকে ভালোবেসেছিলাম। রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের বিদ্যুৎ ও টেলিভিশনবিহীন একটি গ্রামে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা কেন ম্যারাডোনায় মজেছিল। এটা এক অর্থে ব্যাখ্যাতীতও। তবে বহু পরে বুঝেছি ম্যারাডোনা তো আসলে শুধু ফুটবল সুপারস্টার ছিলেন না। ছিলেন অনেকটা গেরিলা যোদ্ধার মতো। সামনে যা পেয়েছেন ধুমড়ে মুচড়ে এগিয়ে গেছেন।
কখনো কখনো জন্ম দিয়েছেন বিতর্কের। সত্যিকারের এক ক্যারেক্টার। সেদিন আনন্দবাজার পত্রিকার নিজস্ব ঢঙ্গে লেখা রিপোর্টে পড়ছিলাম আর্জেন্টাইনরা কীভাবে স্মরণ করছেন দিয়েগোকে। দিনটি ছিল ম্যারাডোনার প্রয়াণ দিবস। আনন্দবাজার লিখেছে, ‘ম্যারাডোনা আর নেই, বিশ্বাস করেন না আর্জেন্টিনীয়রা। তারা মনে করেন, ফুটবলের রাজপুত্র নিশ্চয়ই বিশ্বকাপে লিওনেল মেসিদের সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী ও সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে ওয়াকিম সাইমন পেদ্রোসও জানিয়ে দিলেন, ম্যারাডোনা আর নেই তা তিনি মানেন না। তিনি ফুলের সঙ্গে মেসির ছবি নিয়ে গিয়েছিলেন বেসা ভিস্তায়। আর্জেন্টিনা শেষ ষোলোয় উঠলে কাতারে যাবেন ঠিক করেছেন তিনি। কিন্তু প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে প্রিয় দলের হার দেখার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ফোনে ওয়াকিম বলছিলেন, দিয়েগো ম্যারাডোনা আপনাদের কাছে প্রয়াত। আমরা তা মানি না।’’ আচ্ছা আর্জেন্টাইনদের না হয় এ আবেগ মানা যায়। কিন্তু আমরা কেন এতটা আবেগাপ্লুত। বছরের পর বছর ধরে আমরা মাঠে ম্যারাডোনাকে খুঁজে বেড়িয়েছি। কিন্তু তাকে পাইনি। নিঃসন্দেহে মেসিও সর্বকালের সেরাদের একজন। কিন্তু তিনি ম্যারাডোনা নন। এমনকি রোববার রাতে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে তার জাদুকরী সেই গোলের পরও।
মেসিকে মনে হয় পাশের বাড়ির ছেলে। শান্ত, দৃঢ়, সংসারী। যে যা বলার বলুক তিনি নিজের কাজ করে গেছেন। বল পায়ে এলে মেসি রীতিমতো শিল্পী। বলের সঙ্গে তিনি কথা বলেন, হাসেন, কাঁদেন। ক্লাবের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন মেসি। জাতীয় দলের হয়ে কোপার শিরোপা আছে ভাণ্ডারে। তবে বিশ্বকাপ তা আজও অধরা! সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন ২০১৪ সালে মারাকানাতে। একটি বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত মেসির দিনটি কোনোদিন ভুলতে পারার কথা নয়। বিশ্বকাপ এত কাছে! গঞ্জালে হিগুয়েইনের সেই অবিশ্বাস্য মিস। সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি নিজেও। কাজে লাগাতে পারেননি। মারিও গোটজের একটি অসাধারণ মুহূর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনালের ভাগ্য। গত শনিবার রাতে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার প্রথমার্ধে খেলা দেখার পর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেই। আমাদের বন্ধুদের কেউ কেউ তাৎক্ষণিক প্রশ্ন তোলেন, তুমি কি ফুটবল বুঝ! এককথায় যদি এর উত্তর দিতে হয় তবে বলতে হয় ‘না’। কিন্তু আমরা যারা স্পোর্টস ভালোবাসি তারা কি ভালো-মন্দ বলতে পারবো না! কেউ কেউ বলেন- এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মতোই বিভক্তি। বিশ্বকাপ শুরু হলেই দেশ ভাগ হয়ে যায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়। পতাকায় ছেয়ে যায় বাড়ির পর বাড়ি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এ বিভক্তিকে দিয়েছে নতুনমাত্রা। কেন এই উন্মাদনা? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজেছে ওয়াশিংটন পোস্টও। সম্ভবত, পরিষ্কার কোনো উত্তর পায়নি। এমনিতে মানুষ ভালো নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কোটি কোটি মানুষের জীবন জেরবার করে তুলেছে। এই কঠিন সময়ে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা কতোটা যৌক্তিক, কতোটা অযৌক্তিক সে প্রশ্ন থেকে যাবে। আবার কেউ কেউ এটাও বলেন, খেলা নিয়ে মেতে থেকে মানুষ ভুলে থাকতে চায় তার জীবন বাস্তবতাকে।
বিশ্বকাপ ফুটবল এগিয়ে যাচ্ছে। অন্য খেলা কি থেমে আছে? না, তা নয়। কেউ কেউ বলেন, রাজনীতিও একটা খেলা। কখনো কখনো নিষ্ঠুর খেলাও বটে। মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইব্রাহিমের কথাই ধরুন না কেন! ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠ। ভাবা হতো, মাহাথিরের পর তিনিই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু সম্পর্ক কীভাবে পাল্টে যায়। সেই মাহাথিরই তাকে নিক্ষেপ করে কারাগারে। বছরের পর বছর তার কাটে অন্ধকার কক্ষে। সেখান থেকে ফের তিনি মঞ্চে আসেন। মাহাথিরের সঙ্গে তার সম্পর্কের উত্থান-পতন হয়। তবে তার দীর্ঘ অপেক্ষার শেষ হয়েছে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। যদিও মালয়েশিয়ার রাজনীতি টালমাটাল। কতোদিন তিনি থাকতে পারবেন সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। অন্যদিকে, মাহাথির মোহাম্মদ দেখেছেন মুদ্রার উল্টা পিঠ। জীবনে প্রথমবারের মতো নির্বাচনে হার দেখতে হয়েছে তাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘খেলা হবে’ স্লোগানকে জনপ্রিয়তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ছুটে চলছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। যেখানেই যাচ্ছেন তার মুখে শোনা যাচ্ছে এ স্লোগান। বসে নেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। রাজনীতির ক্যারিয়ারে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। প্রতিদিনই অংশ নিচ্ছেন একাধিক প্রোগ্রামে। চষে বেড়াচ্ছেন সারা দেশ। রাজনীতিতে আপাত উত্তাপ ১০ই ডিসেম্বর ঘিরে। ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে কোথায় হবে সেই সমাবেশ তা নিয়েই চলছে বিতর্ক। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে।
এই যখন অবস্থা তখন হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া। বিবিসি বাংলায় তার সাক্ষাৎকার এবং ডয়চে ভেলের টকশোতে দেয়া তার বক্তব্য কৌতূহল তৈরি করেছে অনেকের। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী দৃশ্যত সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিবিসি’র আকবর হোসেনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের দূরত্বের বিষয়েও কথা বলেন দিলীপ বড়ুয়া।
সেই সাক্ষাৎকারের একটি অংশ এরকম-
বিবিসি: নিশ্চয় ইলেকশন যেহেতু আসছে আপনাদের সঙ্গে আবার কথাবার্তা হবে?
দিলীপ বড়ুয়া: একধরনের কথাবার্তা হবে মানে দায়সারা গোছের। ইলেকশন হবে কি না সেটাও তো একটা বিষয়।
বিবিসি: কোনো সন্দেহ আছে?
দিলীপ বড়ুয়া: আমার সন্দেহ আছে।
বিবিসি: কেন?
দিলীপ বড়ুয়া: ন্যাশনাল-ইন্টারন্যাশনাল সমস্ত কিছু মিলিয়ে যে প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে সে প্রেক্ষাপটে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।
বিবিসি: আপনি কি আশঙ্কা করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা, না আদৌ নির্বাচন হবে কিনা- এটা নিয়ে সন্দেহ আছে?
দিলীপ বড়ুয়া: ওই তো সুষ্ঠু নির্বাচনের স্নোগানোর মধ্যদিয়ে দেখা যাবে যে আদৌ নির্বাচন নাও হতে পারে।
আগের কিছু লেখাতেও বলেছি, রাজনীতি অবশেষে মাঠে গড়িয়েছে। সমাবেশ-পাল্টা সমাবেশ। দুঃখজনক কিছু ঘটনাও ঘটেছে। কথা বলছেন, কূটনীতিকরাও। জাপানের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য তো রীতিমতো বিস্ময়ই তৈরি করেছে। সতর্কবার্তা উচ্চারিত হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকেও। তো রাজনীতির এই বিরোধ নিষ্পত্তির পথ কী? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দু’টি পথই খোলা থাকে। সংলাপ এবং ব্যালট।
লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, মানবজমিন।