মত-মতান্তর
শহরে কাগজ, প্যাকেট ফেলবো কোথায়?
আরাফ আহমদ
(২ বছর আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ৩:২৭ অপরাহ্ন
বর্তমান বিশ্বের আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি পরিবেশ। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রত্যেকটি দেশ উদ্বিগ্ন। পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য, দূষণ কমানোর জন্য প্রত্যেকটি দেশই কাজ করছে। কিন্তু উদাসীনতা দেখা গেছে আমাদের দেশে। পরিবেশের প্রতি কোনোভাবেই আমাদের মানুষ যত্নশীল নয়। কেন জানি পরিবেশের বিষয়টিকে সবাই এড়িয়ে চলে। যেই সব কর্তৃপক্ষের পরিবেশের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কথা তারাও পরিবেশ দূষণ এবং বিপর্যয় না দেখার ভান করে থাকে। পরিবেশ একটি বিশাল বিষয়, লিখে শেষ করা যাবে না।
এখানে শুধু সিলেট শহর নিয়ে কিছু লিখেছি।
গত তিন বছর ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি পরিবর্তন এসেছে। তারা ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্য, কাগজ, চিপসের প্যাকেট রাস্তায় বা যেখানে সেখানে ফেলে দেয় না। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জয়গায় রাখা ডাস্টবিনের মধ্যে ময়লা রাখে।
কিন্তু কিছু মানুষের হাত ধরে সেগুলোর পরিবর্তন হলো। তাদের প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসে এখন আড়াই শতাধিক বড় বড় ডাস্টবিন রয়েছে। ৩২০ একরের এই ক্যাম্পাসে মেইন গেইট থেকে শুরু করে আবাসিক হল পর্যন্ত রাস্তায় একটু পরপর এই সব ডাস্টবিন চোখে পড়বে। যার ফলে ইচ্ছে করলেও কেউ রাস্তায় ময়লা ফেলতে পারবে না।
গত তিন বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই ময়লা বিনে ফেলে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যার ফলে কিছু খাওয়ার পর ময়লা ফেলানোর জন্য যদি বিন না পাওয়া যায় তাহলে সেই ময়লা ব্যাগে বা পকেটে রেখে দেয় পরবর্তীতে ডাস্টবিন পেলে সেখানে ফেলে দেয়। এটা রীতিমতো সবার অভ্যাস। কিন্তু এই অভ্যাস বিরক্তিতে রূপ নেয় সিলেট শহরে হাঁটতে গেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই কমবেশি শহরের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেখানে রাস্তায় কিছু খেয়ে কাগজ, প্যাকেট বা ময়লা ফেলার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না। ক্যাম্পাসের অভ্যাস মতো এখানেও ময়লা ফেলার জন্য বিন খুঁজি কিন্তু কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর যখন পাই না তখন বিরক্ত লাগে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ময়লা রাস্তার পাশে ফেলতে বাধ্য হই।
কিন্তু একটা বিভাগীয় শহরে এই অবস্থা কেন? কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন করা হচ্ছে কিন্তু শহরের ডাস্টবিন স্থাপন করতে কি খুব বেশি টাকার প্রয়োজন? এই শহরের উন্নয়নে এমপি, মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদসহ অনেকেই জড়িত। কিন্তু ছোট ছোট ডাস্টবিন স্থাপনের বিষয়টি কি তাদের কারো মাথায় আসে না? নাকি তারা গাড়ি দিয়ে চলেন, বলে রাস্তার ময়লা তাদের চোখে পড়ে না। রাস্তা হাঁটতে বের হলে এসব দেখে নিজের মনটা খারাপ হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে এটা নিয়ে একটা পোস্ট দেই। কিন্তু একজন শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এসব বিন স্থাপন করলে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তু আমার কথা হলো চুরির ভয়ে কি আমরা পরিবেশ রক্ষা করবো না? রাতে নগরীর পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। প্রতিদিনই তারা একই কাজ করে। যদি প্রশ্ন করি তারা কি সারা শহরের প্রত্যেকটি জায়গা পরিষ্কার করে? উত্তর আসবে না। পরিচ্ছন্নকর্মীরা শুধু মেইন রোড এবং মার্কেটের সামনের এলাকা পরিষ্কার করে। এভাবে প্রতিদিন পরিষ্কার করলে নগরীর পরিচ্ছন্নকর্মীদের পিছনেও তো অনেক টাকা খরচ করতে হয়। যদি বিন স্থাপন করা হয় তাহলে পরিবেশ সুন্দরের পাশাপাশি খরচও কমবে। প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে না।
এখন হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, কিছুদিন পর পুরোদমে বর্ষাকাল শুরু হবে। তখন দেখা যাবে ময়লা, বোতল, প্যাকেট, কাগজের কারণে ড্রেনের পানি ঠিকমতো যাচ্ছে না, রাস্তায় জমে আছে। তখন সবাই কর্তৃক্ষকে দোষ দেওয়া শুরু করবে আবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দোষ দিবে নাগরিকদের। নাগরিকরা অসচেতন, তারা পরিবেশ বুঝে না, যেখানে সেখানে ময়লা রেখে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো নাগরিকরা সেই ময়লা কোথায় রাখবে? নগরীর এই দূষণের কারণে নদী, নালা, খাল বিল সব দূষিত হচ্ছে। কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন লবণে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এই প্লাস্টিক লবণে সাধারণভাবে নিশ্চয় আসেনি, প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের অতি দূষণের কারণেই এই অবস্থা।
সিলেটের জিন্দাবাজার রোডে দেখলাম ডিভাইডার বসিয়ে লাল, নীল, হলুদের বাহারি রকমের বাতি লাগালো হয়েছে। আচ্ছা বাতি লাগালেই কি এটা লন্ডন হয়ে যাবে, নাকি উন্নত বিশ্বের শহরের মত হবে? ঢাকাকে দূষিত নগরীর শীর্ষ রেখে কিছুদিন আগে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে বিভাগীয় শহরগুলোও দূষিত নগরীর শীর্ষে চলে আসবে। একটি স্বচ্ছ নগরী গড়ে তুলতে হলে এর নাগরিক এবং নগর কর্তৃপক্ষকে সমানভাবে কাজ করতে হবে। পরিবেশটা সুন্দর রাখতে হলে নগরীতে ডাস্টবিন স্থাপন এখন সময়ের দাবি। ডাস্টবিন স্থাপন করতে খুব বেশি টাকা লাগার কথা নয়, শুধু সদিচ্ছার প্রয়োজন। চুরির ভয়ে যদি ডাস্টবিন স্থাপন করা না হয়, তাহলে এটা নগর কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিন চোরে যাতে না নিতে পারে সেইভাবে স্থাপন করা প্রয়োজন। নগরীর রাস্তার ১০০ মিটার পরপর একটি ডাস্টবিন থাকা দরকার। এই লেখাটা নগর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চোখে পড়বে কিনা জানি না। কিন্তু তাদেরকে অবশ্যই জানানো উচিৎ। তাদের নজরে নিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক: শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।