মত-মতান্তর
ইউক্রেনের প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ
কূটনীতির মাঠে রাশিয়া অনেকটাই পিছিয়ে আছে
আলী রীয়াজ
(১১ মাস আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ৩:২৪ অপরাহ্ন

জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে আজ বৃহস্পতিবার ইউক্রেন বিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে বাংলাদেশ ভোট দিয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে উত্থাপিত এই প্রস্তাবে রাশিয়ার সমালোচনা করা হয়েছে এই বলে যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে শোচনীয় মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের কথা বলা হয়েছে এবং ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার সৈন্যরা যে অবরোধ তৈরি করেছে তা তুলে নেয়ার দাবি করা হয়েছে, যা কার্যত রাশিয়ার সৈন্যদের প্রত্যাহারেরই আহবান। আজকে গৃহীত এই প্রস্তাব ২ মার্চ জরুরি বিশেষ অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাব থেকে ভিন্ন কিছু নয়। এই প্রস্তাবের পক্ষে মোট ভোট পড়েছে ১৪০টি, ভোট দানে বিরত থেকেছে ৩৮টি দেশ। বিপক্ষে রাশিয়া সহ ৫টি দেশ ভোট দিয়েছে।
এই প্রস্তাব গৃহীত হল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার একটি প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ার পরে। নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার প্রস্তাবে বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষা এবং সেখানে সাহায্য পাঠাবার জন্যে সুযোগ তৈরির কথা বলা হয়েছিল। কিন্ত ঐ প্রস্তাবে রাশিয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখিত ছিলোনা।
লক্ষ্যনীয় যে নিরাপত্তা পরিষদে ঐ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল রাশিয়া এবং চীন, বাকি ১৩টি সদস্য দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। ফলে প্রস্তাব পাশ হয়নি।
বাংলাদেশের আজকের ভোট সকলের মনোযোগ দাবি করে। কেননা ২ মার্চ এই বিষয়ে প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছিলেন বাংলাদেশ ‘যুদ্ধ টুদ্ধের’ বিরুদ্ধে বলে ভোট দানে বিরত থেকেছে। এই ভোট যে বাংলাদেশের অতীতের ভূমিকা ও আগে দেয়া ভোটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় সেই বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলাম (‘ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান কতটা যৌক্তিক’, প্রথম আলো, ১৫ মার্চ ২০২২)। অতীতের এই সব তথ্যাদির দিকে নজর না দিয়ে কোনও কোনও বিশ্লেষক সরকারের ভাষ্যকে সমর্থন করে অনেক ধরণের কথা বলেছেন। তাঁরা এই জন্যে সরকারের প্রশংসা করতে কুন্ঠিত হননি। তাঁরা বাংলাদেশের এই অবস্থানকে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে বাস্তবোচিত বলেও বর্ণনা করেছেন। এখন বাংলাদেশের এই অবস্থান বিষয়ে তাঁদের কাছে নিশ্চয় ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা শোনা যাবে। কিন্ত আজকের এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের সমর্থনসূচক ভোট গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিবেচনা করা দরকার। ১৫ মার্চ প্রকাশিত আমার লেখায় ইউক্রেন প্রশ্ন আবারও ফিরে আসবে এমন সম্ভাবনার কথা বলেছিলাম – “সেই কারণেই [ইউক্রেন] বিষয়টি আবারও ভিন্ন ভিন্নভাবে জাতিসংঘে ফিরে আসবে। তখনো বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সে নৈতিক অবস্থান থেকে ভোট দেবে, না তার বিবেচনা ভিন্ন কিছু দিয়ে প্রভাবিত হবে।”
বাংলাদেশের ভূমিকার বাইরেও আজকের ভোট আবারও প্রমাণ করছে যে, কূটনীতির মাঠে রাশিয়া অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এর আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ইউক্রেনের এই প্রস্তাবের পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা একটি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল, যেখানে রাশিয়ার ভূমিকা বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। সেই প্রস্তাব সাধারণ পরিষদ বিবেচনায় নেয়নি।
সূত্র: ফেসবুক থেকে নেয়া
(আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট)