ভারত
কলকাতার সিরাজ রেস্তোরাঁয় ইমরান বলেছিলেন...
জয়ন্ত চক্রবর্তী, কলকাতা
(১ বছর আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ২:৫৩ অপরাহ্ন

আজ যেন বড় বেশি করে মনে পড়ে যাচ্ছে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ গড়ার সেই প্রথম দিনগুলোর কথা। ইমরান তখন চুটিয়ে ক্রিকেট খেলছেন। মা শওকাত খানম ক্যান্সার আক্রান্ত হলেন। মারাও গেলেন। মায়ের স্মরণে ইমরান প্রতিষ্ঠা করলেন শওকাত খানম ক্যান্সার হাসপাতাল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন ইমরান। আমরা ক’জন ভারতীয় সাংবাদিককে পছন্দ করতেন ইমরান।
একদিন টেস্ট ম্যাচের ফাঁকে কলকাতার সিরাজ রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানি খেতে খেতে ইমরান বলেছিলেন, মায়ের নামে হাসপাতাল করতে গিয়ে বুঝলাম রাজনীতিবিদরাই শেষ কথা। আমাকে রাজনীতিতে আসতে হবেই।
সেদিনই হয়তো নিজে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের ত্রাস এই পাক ফাস্ট বোলার।
এই ঘটনার বেশ ক’দিন পরে পাকিস্তানের নির্বাচন কভার করতে গেছি। ইমরান খেলা ছেড়ে দস্তুরমত রাজনৈতিক নেতা। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এর প্রধান।
এই ভোটে জিতবো না ঠিকই। কিন্তু একদিন না একদিন উজির ই আজম এর তখতে বসবোই। ইমরানের ভাষণ সেদিন পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। চার বছর আগে ইমরান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। লোকটা সেদিন লাহোরের বাড়িতে বসে ভুল বকেনি।
পাকিস্তানের রাজনীতির ধরণটি এই উপমহাদেশের ধারার থেকে আলাদা। দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকার থাকে বটে কিন্তু, সর্বশক্তিমান হলো সেনা ছাউনি বা ক্যান্টনমেন্ট, পাক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই এবং কট্টরপন্থী রাজনৈতিক শক্তি।
ক্যান্টনমেন্টই পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগের ( নাওয়াজ ) প্রবল পরাক্রমে আতঙ্কিত হয়ে পিটিআইএর ইমরানকে অন্য রাজনৈতিক দলের সমর্থনে গদিতে বসায়। কিন্তু চার বছরের মধ্যেই তাদের মোহভঙ্গ হয়। আমেরিকাকে ছেড়ে ইমরানের রাশিয়া কিংবা চীনপ্রীতি, ভারত সম্পর্কে নমনীয়তা সর্বোপরি দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি তাদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার বাজওয়াকে কেন্দ্র করে তারা ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে। শনিবার মধ্যরাতে ইমরানের গদি হারানোর চিত্রনাট্যটি এই রকমই। যে সেনারা ইমরানের সমর্থনে ছিলেন তারাই তার সব থেকে বিরোধী হয়ে যায়। জুডিসিয়ারি বিরোধী, লেজিসলেচার এ বিদ্রোহের আগুন, এক্সিকিউটিভ ক্ষিপ্ত, মিডিয়া বিভ্রান্ত, গণতন্ত্রের এই চার স্তম্ভ ইমরানকে আর চায়নি।
তাই, মধ্যরাতের সোপ অপেরা ইমরানকে ইসলামাবাদ ছেড়ে হেলিকপটারে করে চলে যেতে হলো। নুনের পুতুল আবার সাগরে ভাসলো।