নির্বাচিত কলাম
কাওরান বাজারের চিঠি
জামায়াত নিয়ে নয়া গুঞ্জন, জীবন চালাতে চাপা কান্না
সাজেদুল হক
৫ নভেম্বর ২০২২, শনিবার
বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে কী হবে? রাজনীতিতে এ ধরনের একটি সম্ভাব্য চালচিত্র অনেকদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের বেশিসংখ্যক দল যেন নির্বাচনে অংশ নেয় সে ধরনের উদ্যোগ রয়েছে। এমনটা হলে জামায়াত নেতারা কি নির্বাচনে অংশ নেবেন? স্বতন্ত্র কিংবা নিবন্ধন পেলে বিডিপি’র হয়ে? এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের নেতারা। নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে যেমন গুঞ্জন রয়েছে, তেমনি সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের যোগ দেয়া নিয়েও আলোচনা রয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াতের এক নেতা বিএনপি’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এখনই কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য। বলেছেন, পরে আর সময় পাওয়া যাবে না। বিএনপি নেতারাও যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের অংশ নেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু বিএনপি গেল কয়েক মাসে অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেনি। ফলে এ নিয়েও এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে
রাজনীতিতে এমন হয়। সবকিছু পর্দার সামনে আসে না।
এমনিতে বাংলাদেশে জামায়াতের প্রকাশ্য রাজনীতি কার্যত নিষিদ্ধ। এ নিয়ে অবশ্য আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নেই। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনেক বছর ধরেই তালাবদ্ধ। নগর-মহানগর কার্যালয়েরও একই পরিস্থিতি। নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশ করতে পারেন না। কখনো কখনো ঝটিকা মিছিল করে দলটির নেতারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠান। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান যদিও নানা সামাজিক কার্যক্রমে দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছেন। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগেরই ইতিমধ্যে মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। গ্রেপ্তার আছেন আরও কয়েকজন।
জামায়াত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। অনেকদিন থেকে দলটি ছিল খবরের বাইরে। অনেকটাই নীরব। তবে বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চলছিল। বিএনপি’র একটি অংশের শক্ত মত ছিল, জোটকে জামায়াত মুক্ত করা। তারা মনে করেন, জোটে জামায়াত থাকা আন্তর্জাতিক মিত্ররা কখনো ভালোভাবে নেয় না। এ নিয়ে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে অনেক। তবে মাস দুয়েক আগে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের একটি বক্তব্য প্রকাশ্যে আসে। মানবজমিনই প্রথম তা প্রকাশ করে। যেখানে জামায়াতের প্রধান এটা স্পষ্ট করেন যে, জামায়াত এখন আর বিএনপি জোটে নেই। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ জামায়াতের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানান। কিছুদিন পরে সরকার-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর একটি মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিবৃতিও দেয়া হয়।
তবে জামায়াত ঘিরে এখন রাজনীতিতে বেশকিছু প্রশ্ন নতুন করে উঠেছে। আলোচনা হচ্ছে, বিডিপি কি জামায়াতেরই নতুন কোনো দল। জামায়াত কি কেবল সামাজিক কার্যক্রমে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবে। রাজনৈতিক ফ্রন্টে থাকবে বিডিপি? যে ধরনের একটি দল গঠনের জন্য মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং মীর কাসেম আলী জামায়াতকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিবিসি বাংলার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা বিডিপি নামের নতুন দলটি তাদের ১৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির নামের যে তালিকা দিয়েছে এই তালিকার বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। এর মূল যে দু’জন নেতা তাদের মধ্যে দলটির চেয়ারম্যান এ. কে. এম. আনোয়ারুল ইসলাম এক সময় বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে তিনি জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন বলে জানা যায়। কিন্তু মি. ইসলাম তার নিজের জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেন। মি. ইসলাম বলেন, তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জহুরুল হক হলে ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন তিনি। এরপর মি. ইসলাম লম্বা সময় সৌদি আরবে ছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার দাবি করেছেন। তিনি আরও দাবি করেছেন, ২০১৮ সালে দেশে ফেরার পর থেকে তিনি কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। যদিও তিনি সৌদি আরবে থাকার সময় থেকেই জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন তথ্য জামায়াতের একাধিক সূত্র থেকেই পাওয়া যায়। সেক্রেটারি জেনারেল নিজামুল হকও এক সময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তারা বলছেন, এসবই এখন অতীত। জামায়াতের পক্ষ থেকে বিডিপি’র সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিডিপি’র নিবন্ধন নিয়ে কথা বলা হয়েছে। যে কথার শানেনজুল দাঁড়ায়, শর্তপূরণ করলে, গঠনতন্ত্রে সংবিধানবিরোধী কিছু না থাকলে জামায়াত নেতাদের দিয়ে গঠিত কোনো দলের নিবন্ধন পেতে বাধা নেই। তবে এটি যে নানা হিসাব আর অঙ্কের বিষয় তা না বললেও চলে। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। ২০১৮ সালে জামায়াত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। যদিও দলটির কোনো প্রার্থী বহুল আলোচিত ওই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে জামায়াত-বিডিপি’র রসায়ন উড়িয়ে দেয়া কঠিন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এক্ষেত্রে প্রথমত, দলটি নিবন্ধন পায় কিনা সেটিই হচ্ছে বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। তবে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র বলছে, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিডিপিতে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয় তবে কী হবে? রাজনীতিতে এ ধরনের একটি সম্ভাব্য চালচিত্র অনেকদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের বেশিসংখ্যক দল যেন নির্বাচনে অংশ নেয় সে ধরনের উদ্যোগ রয়েছে। এমনটা হলে জামায়াত নেতারা কি নির্বাচনে অংশ নেবেন? স্বতন্ত্র কিংবা নিবন্ধন পেলে বিডিপি’র হয়ে? এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে ৩০০ আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের নেতারা।
নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে যেমন গুঞ্জন রয়েছে তেমনি সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের যোগ দেয়া নিয়েও আলোচনা রয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াতের এক নেতা বিএনপি’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এখনই কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য। বলেছেন, পরে আর সময় পাওয়া যাবে না। বিএনপি নেতারাও যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের অংশ নেয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু বিএনপি গেল কয়েক মাসে অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেনি। ফলে এ নিয়েও এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
এটা নিঃসংশয়েই বলা যায়, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজনীতিতে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটতে থাকবে। এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত জামায়াত নিয়ে কী ঘটে কিংবা জামায়াতের অবস্থান কোন দিকে যায় তা নিয়ে কৌতূহল থাকবে বিশ্লেষকদের।
মানুষ ভালো নেই, চাপা কান্না
রাজনীতি মাঠে গড়িয়েছে। পালিত হচ্ছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। ডিসেম্বর ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। তবে এখন প্রধান সংকট অর্থনৈতিক। মানুষ ভালো নেই। দ্রব্যমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট মধ্য ও নিম্নবিত্ত। কেউ কেউ উপহাস করেছেন। তবে সম্প্রতি দুই মন্ত্রী মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দা এখন বিশ্বজুড়ে। তাই সারা বিশ্বেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। ফলে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে, সেটা অস্বীকার করার কিছু নেই। মানুষের কষ্ট বেড়েছে, সেই কষ্ট যাতে না থাকে, সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’ মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে মানুষের বেতন-ভাতা সেভাবে বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
কিন্তু মানুষ আসলে আছেটা কেমন? সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা সিপিডি’র এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা। এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট’ বা আপসের খাদ্য তালিকা। (সূত্র: ইত্তেফাক)
মানুষ আসলে বেঁচে আছে নিদারুণ কষ্টে। বিশেষ করে যাদের আয় সীমিত। এখনো এ দেশে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এরা জীবনের সঙ্গে লড়াই করে ক্লান্ত। ভয় পায় বাজারকে। প্রতিনিয়ত কাটাছেঁড়া করেন বাজারের তালিকায়। কিন্তু কতটুকু আর পারা যায়। দ্রব্যমূল্য যে লাগামহীন তাতো আর অল্প দিন হয়নি। বহুদিন ধরে চলছে এমনটাই। এখন আবার উচ্চারিত হচ্ছে দুর্ভিক্ষের হুঁশিয়ারি। বলা হচ্ছে, করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
পরিসংখ্যানে যাই বলা থাকুক না কেন মানুষ ভালো নেই। তারা কষ্টে আছে। এই কষ্ট কবে মুছবে বলা কঠিন। তবে মানুষকে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কঠিন এ সময় কেটে যাক। মুছে যাক দুঃসময়। আবার হাসি ফুটুক সবার মুখে। জীবন দুঃখ তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা। আমাদের বেঁচে থাকতে হবে আশা নিয়ে।
লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, মানবজমিন।
মন্তব্য করুন
নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন
নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ নির্বাচন ঘিরে একই প্রশ্ন, আমেরিকা কি ম্যানেজ হয়ে যাবে?
সাম্প্রতিক/ এখানেই শেষ নাকি আগামীকাল আছে
আন্তর্জাতিক/ হামাসের টানেলযুদ্ধে পরাস্ত হচ্ছে ইসরাইলি সেনারা
প্রেম এমনও হয়!/ সে যুগের লাইলী-মজনু এ যুগের খাইরুন-মামুন
সাম্প্রতিক/ রাজনীতি কি পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে যাচ্ছে?
আ ন্ত র্জা তি ক/ ভারত বিরোধিতায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের চমক
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন স্বার্থের খোঁজ কেন?
আন্তর্জাতিক/ গাজা যুদ্ধে সৌদি আরবের ভূমিকা কী, বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্য!
স্বপ্নের স্বদেশের সন্ধানে/ তফসিল ঘোষণা- এরপর কি সব সমাধানের সুযোগ শেষ?

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]