ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

৭২-এর সংবিধান

ইতিহাস ও পর্যালোচনা

শহীদুল্লাহ ফরায়জী
৪ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর আপনা আপনি গণতন্ত্র বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না। শাসক দলের উচ্চতম নৈতিকতাবোধ, গণতন্ত্রের প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্য এবং ত্যাগের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের পথে আগানো, সকল ধরনের দমনমূলক পথ পরিহার করা, সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা, শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে তুলতে আইনগত ও নৈতিক সহায়তা প্রদান করা, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং সম্মোহনী শক্তির অধিকারী নেতৃত্বকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান না দেয়ার উপর নির্ভর করে সংবিধানের অপরিহার্যতা


আজ ৪ঠা নভেম্বর ‘সংবিধান দিবস’। ১৯৭২ সালের এই দিনে গণপরিষদে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ গৃহীত হয়। এবার এ দিবস ৫০ বছর পর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলো। ‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষে ৭২ এর সংবিধানের ইতিহাস ও সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা।
১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগরে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়।
গণপরিষদের কাজ ছিল দুটি:
১) জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সময় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণয়ন ও এর ভিত্তিতে সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা এবং
২) বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বাংলার মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের দলিল হিসেবে সংবিধান প্রণয়ন করা।
১০ই এপ্রিল’৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটিই (Proclamation of Independence) বাংলাদেশের ‘অন্তবর্তীকালীন’ সংবিধান। 
স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ২২শে মার্চ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ’ জারি করেন, 
১) ১৯৭০ সালের ৭ই ডিসেম্বর ও পরবর্তী বিভিন্ন তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আসনগুলোতে বিজয়ী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘গণপরিষদ’ গঠিত হবে।
২) পরিষদ প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি ‘সংবিধান’ প্রণয়ন করবে।
এভাবেই শুরু হয় প্রজাতন্ত্রের সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া।

১০ই এপ্রিল’৭২ স্বাধীন বাংলাদেশে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের অধিবেশন উদ্বোধন করেন এবং প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মজলুম নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ।
১১ই এপ্রিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট একটা খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। 
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি সর্বমোট ৭৪টি বৈঠকে মিলিত হন, সংবিধানের খসড়া রূপ প্রণয়নে ৩০০ ঘণ্টা কাজ করেন।
সংবিধান সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা লাভের জন্য ড. কামাল হোসেন ভারত ও ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। ১২ই অক্টোবর’৭২ গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ডক্টর কামাল হোসেন ১৫৩টি ধারা সংবলিত ৭২ পৃষ্ঠার খসড়া সংবিধানটি বিল আকারে গণপরিষদের সামনে পেশ করেন। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়।

৭২ সালে প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি ভাগ, ১৫৩টি অনুচ্ছেদ ও ৪টি তফসিল অন্তর্ভুক্ত ছিল। 
এই সংবিধান রচনায় মোট সময় লেগেছিল ২০৮ দিন, তথা ৬ মাস ২৮ দিন, ৭৪টি বৈঠকে ৩০০ ঘণ্টা ব্যয় করেন।
সংবিধান প্রণেতাগণ ৭২ এর সংবিধান ৭২টি কার্যদিবস এবং হাতে লেখা মূল অংশ ৭২ পৃষ্ঠায় শেষ করেছিলেন।
অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাঙালিরা ইতিহাসে এটাই প্রথম নিজেরা নিজেদের সংবিধান প্রণয়ন করতে পেরেছে।

৭২ সনে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য: একটা লিখিত সংবিধান, যাহা গণপরিষদ কর্তৃক পাশকৃত।

বিজ্ঞাপন
ইহা একটি দুষ্পরিবর্তণীয় সংবিধান। সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা রয়েছে, যাকে সংবিধানের দিকনির্দেশনা বলা হয়। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন, তা ঘোষণা করা হয়েছে। ১ম অনুচ্ছেদে একক প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা বহাল করেছে।  

ক্ষমতার কোনো সাংবিধানিক বিভাজন করা হয়নি। এজন্য স্থানীয় সরকারকে সংবিধানের ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে ‘স্থানীয় শাসন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ৪৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার ক্ষমতা প্রদান করে এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ বাধ্যতামূলক ছিল।

এ ছাড়া ৭২ এর সংবিধানে ৬৫ অনুচ্ছেদে এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কথা বলা হয়েছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার প্রচলন রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ৭২ সালের মূল সংবিধানে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ না বোধক বৈশিষ্ট্য ছিল। প্রথমটি নিবর্তনমূলক আটক সংক্রান্ত বিধানের অনুপস্থিতি এবং দ্বিতীয়টি জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও মৌলিক অধিকার স্থগিত করণ সংক্রান্ত বিধানের অনুপস্থিতি।

উল্লেখ্য, ৭২ সালের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বা সংবিধানের কোথাও  বাংলাদেশে ‘গণহত্যা’ সংঘটিত হয়েছে এমন একটি শব্দও নেই।
যেহেতু সংবিধান প্রণেতাগণ গণহত্যার কথা ভুলে গিয়েছিলেন তাই গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতা বিরোধী অপরাধ বা অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো আইনের বিধানও সংযোজন করা হয়নি। আরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে নাগরিকত্ব প্রশ্নে বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতির অতীত ঐতিহ্য, আত্মদান বা বীরত্বের কোনো ঘটনা উল্লেখ করা হয় নাই। এমনকি ৫২’ এর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে টু শব্দটিও উচ্চারিত হয় নাই। ইতিহাসের বাক বদলের ঘটনা পতাকা উত্তোলন বা ইশতেহার পাঠ কোনোটাই প্রস্তাবনায় ঠাঁই পায়নি।

 

 

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিনটি আদর্শ যথা ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’ সংবিধানের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অথচ এই ত্রয়ী আদর্শই প্রজাতন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি।
অন্যদিকে ৭২’র সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয়নি, এমনকি ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকেও বঙ্গবন্ধুর নামে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

বঙ্গবন্ধুকে জাতির স্থপতি বা জাতির পিতার কোনো 
মর্যাদাও সংবিধানে দেয়নি। কোনো তফসিলেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বা ৭ই মার্চের ভাষণ কোনোটাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
৭২ সালের সংবিধানে যা প্রয়োজন মনে হয়নি, এখন কেন জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন, ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন পড়লো তা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কোনোদিন হয়তো পাওয়াও যাবে না।
সংবিধান প্রতিষ্ঠার পর আপনা আপনি গণতন্ত্র বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না। শাসক দলের উচ্চতম নৈতিকতাবোধ, গণতন্ত্রের প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্য এবং ত্যাগের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের পথে আগানো, সকল ধরনের দমনমূলক পথ পরিহার করা, সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা, শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে তুলতে আইনগত ও নৈতিক সহায়তা প্রদান করা, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং সম্মোহনী শক্তির অধিকারী নেতৃত্বকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান না দেয়ার উপর নির্ভর করে সংবিধানের অপরিহার্যতা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল বলেছেন, সংবিধান হলো এমন একটি জীবন পদ্ধতি যা রাষ্ট্র তার নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।
সংবিধানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে, রাষ্ট্রের তিনটি মৌলিক কাঠামোর মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন এবং ক্ষমতা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, দেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও মর্যাদা কীভাবে সুরক্ষিত হবে। সংবিধানই সরকারের ক্ষমতা এবং দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষার ক্ষমতা অর্পিত করে।
সংবিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ পরিচালনায় জনগণের ক্ষমতাকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের কাছে সাংবিধানিক ক্ষমতা অর্পণ করা এবং রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য একটি অংশীদারিত্বমূলক অভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করা।
সাংবিধানিক নৈতিকতা চর্চা ছাড়া সংবিধানে যত ভালো কথা   লিপিবদ্ধ হোক সংবিধানের  ক্রিয়াপদ্ধতি স্বেচ্ছাচারী ও অযৌক্তিক হয়ে উঠবে। সংবিধান কেবল মাত্র আইনি কাঠামোর যোগান দিতে পারে, পরিবর্তনের প্রয়োজনীয় শর্ত হতে পারে কিন্তু আইন প্রণেতা, বিচারক, মন্ত্রিপরিষদ, আমলাতন্ত্র সকলের মাঝে সাংবিধানিক নৈতিকতার অনুপ্রবেশ না ঘটলে সংবিধান ক্ষমতাসীন তস্করদের খেলার পুতুল হয়ে ওঠে মাত্র।

ডক্টর আম্বেদকর সাংবিধানিক নৈতিকতার প্রশ্নটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন সাংবিধানিক নৈতিকতা একটি স্বাভাবিক অনুভূতি নয়, এটা চর্চার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। সাংবিধানিক নৈতিকতার উপস্থিতি যত বেশি শক্তিশালী হবে, সংবিধানে লিখে রাখার প্রয়োজনীয়তা তত কমে যাবে।

৭২ সালে সংবিধান প্রবর্তনের পর আওয়ামী লীগ অতি দ্রুত সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র হরণ কওে বিরোধী দলগুলোর প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’ এবং জরুরি অবস্থা জারির বিধান। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকা অবস্থায়ই সংবিধানের উপর চরম আঘাত আসে, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী অর্থাৎ সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রপতির হাতে নির্বাহী আইন প্রণয়ন ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে সংবিধানের ‘মৌলিক কাঠামো’ পরিবর্তন করে ফেলে।

এরপর দুইবার সামরিক শাসন জারি করা হয়। একবার আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোস্তাক এবং একবার এইচ এম এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেন। ১৯৭৫ সালের ২০শে আগস্ট খন্দকার মোস্তাক ফরমানের মাধ্যমে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করেন। সামরিক ফরমানকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ সেনাবাহিনী প্রধানের নেতৃত্বে সারা দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয় এবং সংবিধান স্থগিত ঘোষণা করা হয়। 

বিদ্যমান সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে।
ব্যক্তি এবং দলীয় স্বার্থেও অনেকবার সংশোধন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৬ বার, জাতীয় পার্টি ৪ বার সংবিধান সংশোধন করেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪ বার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সংবিধানকে সবাই ক্ষমতায় থাকার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ফলে অগণিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভয়ঙ্কররূপে মূর্তিমান হয়ে উঠেছে।
সংবিধান ক্রমাগত দলের বা ব্যক্তির ইচ্ছাধীন হয়ে পড়েছে, যা জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। নির্বাচন ছাড়াই জনগণের সম্মতি সমর্থন ছাড়াই সরকার পরিচালিত হচ্ছে, এতে জনগণের সার্বভৌমত্বকে ‘ধ্বংস’ করা হয়েছে। সরকারের বৈধতা সংবিধানের আলোকে পরীক্ষিত হচ্ছে না।

সংবিধান বিদ্যমান  নাগরিকের জীবন, ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার কোনো কিছুই সুরক্ষা দিতে পারছে না বরং সাংবিধানিক স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করছে। 
বিদ্যমান সংবিধানে একদলীয় শাসন, সামরিক শাসন, ১/১১ এর সরকার এবং সর্বশেষ ভোটারবিহীন সরকার সবকিছুই গ্রহণযোগ্য। বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি থেকে রাষ্ট্রপতি এবং জেনারেল থেকে রাষ্ট্রপতি তবু সংবিধান লংঘন হয় না। যারা নিয়মিত সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারাও সংবিধানের বিশ্বস্ত।
এজন্যই হয়তো ৭২ সালের সংবিধানকে অনেকেই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। কী নির্মম তামাশা।
জাতীয় স্বার্থেই স্বাধীনতার ‘ঘোষণাপত্রের চেতনার আলোকে’ সংবিধানের মৌলিক সংস্কার অনিবার্য হয়ে পড়েছে। জনগণই একমাত্র রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের অধিকারী। সাংবিধানিক নৈতিকতার দায়বদ্ধতা আমাদের সকলকেই বহন করতে হবে। নয়তো ‘সাম্য’ ‘মানবিক মর্যাদা’ এবং ‘সামাজিক সুবিচার’ এর আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মিত হবে না।
যে বিপদগুলোর মাধ্যমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আক্রান্ত হতে পারে তার সবকিছুই সামগ্রিকভাবে বিদ্যমান সংবিধানে সংরক্ষিত আছে।
তাই ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’ এখন নাম সর্বস্ব অর্থহীন বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে।

লেখক: গীতিকবি
[email protected]

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status