বাংলারজমিন
ঘাটাইল বিএনপিতে ‘বিতর্কিতরা’ তৃণমূলে ক্ষোভ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২২, শনিবার
সদ্য গঠিত টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) সংসদীয় এলাকায় বিএনপি’র কমিটি নিয়ে দলের তৃণমূলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, এ কমিটিতে বিতর্কিত, দলত্যাগী, নিষ্ক্রিয় ও সরকারের সঙ্গে আঁতাতকারীরা স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে ত্যাগী, সক্রিয় ও তৃণমূলকে উজ্জীবিত করে রাখা, তাদের পাশে থাকা নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন। আর এর প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচন ও বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে। কমিটি ঘোষণার পর ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নেতাকর্মীদের মধ্যে কয়েকদফা মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
তৃণমূলের কর্মীরা জানান, টানা দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা হামলা, মামলা, নির্যাতন, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। ঘাটাইলের নেতাকর্মীরাও এর বাইরে নয়। এই সময় দলের নির্যাতিত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি নেতা ও তরুণ শিল্পপতি শামীম মিয়া। করোনাকালীন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গোটা উপজেলার অসহায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে গেছেন তিনি। সম্প্রতি এ উপজেলায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও সকল সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। দলীয় সূত্র বলছে, এর দায়িত্ব দেয়া হয় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট ওবায়দুল হক নাছিরের ওপর। দলের একাংশের অভিযোগ নাছির সাবেক ও বর্তমান সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই কমিটি পুনর্গঠনের কাজে নেমে পড়েন। উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এতে দলের নিষ্ক্রিয়রা যেমন রয়েছেন তেমনি রয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন। হাতেগোনা ২-৪ জন ছাড়া অধিকাংশ ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। ফলে দলের ভেতরে দেখা দিয়েছে বিরোধ। পাল্টাপাল্টি মামলা-হামলার ঘটনা ঘটেছে। পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সিরাজুল হক ছানাসহ নবগঠিত কমিটির অন্তত ৬ জন যুগ্ম আহ্বায়ক বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন না। মামলা হামলার শিকার নেতাকর্মীদের পাশে এসেও দাঁড়াননি তারা। রাখেননি খোঁজখবর। অভিযোগ রয়েছে, তাদের কেউ আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী পার্টনার, কেউ আত্মীয়-স্বজন। কয়েকজন দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ৮ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন যুগ্ম আহ্বায়ক দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। এদের একজন আবুবকর সিদ্দিক, অন্যজন রফিকুল ইসলাম খান। অনেক সক্রিয় ও নির্যাতিত কর্মী সদস্য পদও পাননি। পৌর বিএনপি’র আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সদ্য বিএনপিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বিগত ৩৪ বছরে একটি মিছিল-মিটিংয়েও অংশ নেননি তিনি। এলাকায় সাংগঠনিক পরিচিতি বা জনবল নেই তার। দলের একাধিক নেতাকর্মী জানান, যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পাওয়া এসএম আ. লতিফ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের স্থানীয় এক বড় নেতার ডান হাত। এ ছাড়া ইখতিয়ার মাহমুদ রোবেজ দীর্ঘদিন ধরে দলে নিষ্ক্রিয়। কোনো এক নেতার আত্মীয়তার সুবাদে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়েছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুল আজীম রানা দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়ক আল হেলাল গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কামরুজ্জামান শোয়েব দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। তিনিও পদ পেয়েছেন। সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন হেলাল অনেকদিন ধরে দলে নিষ্ক্রিয়। তিনি পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব হওয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভ চলছে।
এ ছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা বুলবুলকে যুবদলের আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে, বিগত ঘাটাইল পৌর বিএনপিতে মঞ্জুরুল হক মঞ্জু সভাপতি ও ফারুক হোসেন ধলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনসহ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ দুই নেতা মামলা-হামলা এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। অথচ তাদের ঠাঁই হয়নি নতুন উপজেলা ও পৌর কমিটিতে। ঘাটাইল বিএনপি’র নেতাকর্মীরা বলছেন, নবগঠিত উপজেলা বিএনপি কমিটির ১নং সদস্য ওবায়দুল হক নাছির কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা হলেও ঘাটাইলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। উপজেলা বিএনপি’র কোনো কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যায়নি। ফলে ঘাটাইলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার চেনাজানা কম। অভিযোগ রয়েছেন, উপজেলা বিএনপি’র সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক কারা নির্যাতিত আ.খ.ম রেজাউল করিমকে উপেক্ষা করায় অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। ঘাটাইল পৌর বিএনপি’র সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মঞ্জুরুল হক মঞ্জু বলেন, দুঃসময়ে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন তাদের অবজ্ঞা করে দলকে যারা এড়িয়ে চলেছেন তাদের হাতে নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করেও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার রেওয়াজ চালু হলো। সদ্য বিদায়ী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আ.খ.ম. রেজাউল করিম বলেন, জেলা বিএনপি’র উচিত ছিল ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে কমিটি করা। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে যারা পদ পেয়েছেন তাদেরকে ঘাটাইলের মানুষ চিনে না। এরা লিয়াজোঁ রাজনীতির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি’র সাবেক অর্থ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম বলেন, ১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় যারা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকার ভোট প্রার্থনা করেছেন তাদের বর্তমান উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ঘাটাইল বিএনপিকে সংগঠিত করতে হলে এ কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দিতে হবে।