বিশ্বজমিন
গবেষণায় তথ্য
হার্টের রোগ, স্ট্রোক, মৃত্যুঝুঁকি কমায় কফি
মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৬:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১৫ পূর্বাহ্ন

দিনে দুই থেকে তিন কাপ কফি পান করলে তা আপনাকে হার্টের রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। কমিয়ে দিতে পারে আগেভাগে মৃত্যুর ঝুঁকি। নতুন এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। গবেষণারলব্ধ তথ্যের লেখক পিটার কিস্টলার। তিনি বেকার হার্ট অ্যান্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউটের ক্লিনিক্যাল ইলেকট্রোফিজিওলোজি রিসার্সের প্রধান এবং মেলবোর্নে আলফ্রেড হাসপাতালের ইলেকট্রোফিজিওলোজির প্রধান। পিটার বলেছেন, গবেষণা বলছে গ্রাউন্ড, ইন্সট্যান্ট এবং ক্যাফেইনমুক্ত কফিকে সুস্থ জীবনধারার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেয়া উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা থেকে মাঝারি মানে গ্রাউন্ড, ইন্সট্যান্ট এবং ক্যাফেইনযুক্ত কফিকে সুস্থ জীবনধারার অংশ করার কথা বিবেচনা করা উচিত। এসব কফি পান করলে হৃদযন্ত্রের করোনারি রোগে আক্রান্ত হওয়া, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলুর এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনে। শুধু গ্রাউন্ড এবং ইন্সট্যান্ট কফিতে ক্যাফেইনযুক্ত থাকলেও তা অনিয়মিত হার্টবিটের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এমন হার্টবিটকে বলা হয় অ্যারিথমিয়া। ক্যাফেইনমুক্ত কফি এই ঝুঁকিকে কমায় না। এ তথ্য বুধবার প্রকাশিত হয়েছে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলোজিতে।
এই গবেষণার আগে দেখা গেছে, দিনে তিন থেকে ৫ কাপ ব্লাক কফি পান করলে হার্টের রোগ, অ্যালজিমার্স, পার্কিনসন্স, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ এবং মূত্রথলির ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। বৃটেনের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানের লেকচারার চার্লটি মিলস বলেছেন, কফি সেবনের পর্যবেক্ষণমূলক ফল বলছে হৃদযন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে, যা আশাব্যঞ্জক। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিলসও। তিনি বলেন, অতীতের অনেক গবেষণার মতোই এই গবেষণাটি ছিল শুধুই প্রকৃতি পর্যবেক্ষণমুলক। ফলে সরাসরি এর কারণ এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তিনি প্রশ্ন করেন- কফি কি আপনাকে সুস্থ করে তোলে অথবা সুস্থ মানুষরা কি কফি সেবন করেন? কফি সেবন এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণ করতে প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত বিক্ষিপ্ত পরীক্ষা।
এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে ইউকে বায়োব্যাংকের ডাটা। এটি হলো একটি ডাটা ব্যাংক, যেসব ডাটা নেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কফি সেবন থেকে। গবেষণা শুরু থেকেই এসব মানুষ অ্যারিথমিয়া এবং অন্যান্য হার্ট বিষয়ক রোগ থেকে মুক্ত। এই মানুষগুলোকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি গ্রুপে রাখা হয় ওইসব মানুষকে যারা ক্যাফেইনযুক্ত গ্রাউন্ড কফি সেবন করেন। আরেকটি গ্রুপে রাখা হয় ওইসব মানুষকে যারা ক্যাফেইনমুক্ত কফি পান করেন। তৃতীয় গ্রুপে রাখা হয় ওইসব মানুষকে যারা ক্যাফেইনযুক্ত ইন্সট্যান্ট কফি পছন্দ করেন। আর চতুর্থ গ্রুপে রাখা হয় ওইসব মানুষকে যারা মোটেও কফি পান করেন না।
গড়ে সাড়ে বার বছর পরে গবেষকরা এসব মানুষের অ্যারিথমিয়া, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং মৃত্যু বিষয়ে মেডিকেল এবং অন্যান্য রেকর্ড সংগ্রহ করলেন। এরপর বয়সের সঙ্গে ডায়াবেটিস, জাতীয়তা, উচ্চ রক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়া, ঘুমে প্রতিবন্ধকতা, যৌনতা, ধুমপানের অবস্থা, চা এবং অ্যালকোহল পানের রেকর্ডের সমন্বয় করা হয়। তাতে গবেষকরা দেখতে পান যে, যেকোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়ে দেয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে সব রকম কফি।
ফলে বৃটেনের অ্যাস্টন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল ইন বার্মিংহামের সিনিয়র টিচিং ফেলো এবং পুষ্টি বিষয়ক রেজিস্ট্রার ডুয়ান মেলোর বলেছেন, প্রকৃতপক্ষে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ক্যাফেইনযুক্ত এবং ক্যাফেইনমুক্ত সব কফিই উপকারী। এর ফলে এটা বলা যায় যে, শুধু ক্যাফেইনযুক্ত কফিই সব ঝুঁকি কমিয়ে দেয়া এটাকে ব্যাখ্যা করে না। ডুয়ান মেলোর এই গবেষণার অংশ নন।
ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন এবং মোনাশ ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের প্রফেসর পিটার কিস্টলার বলেছেন, কফির সবচেয়ে পরিচিত উপাদান হলো ক্যাফেইন। কিন্তু এর মধ্যে কমপক্ষে ১০০ সক্রিয় জৈবিক উপাদান উপস্থিত। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যেসব মানুষ কফি পান করেন না তাদের তুলনায় নির্ধারিত সময়ের আগেই মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে দিনে দুই থেকে তিন কাপ কফি পান করার। গ্রাউন্ড কফি সেবন মৃত্যুঝুঁকিকে শতকরা ২৭ ভাগ কমিয়ে দেয়। ক্যাফেইনমুক্ত কফি পান করলে এই ঝুঁকি কমিয়ে দেয় শতকরা ১৪ ভাগ। আর ইন্সট্যান্ট ক্যাফেইনসমৃদ্ধ কফি পান করলে এই ঝুঁকি কমে যায় শতকরা ১১ ভাগ। কফি পানের সঙ্গে হার্টের রোগের ঝুঁকি এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাওয়ার সম্পর্ক অতোটা শক্তিশালী নয়। দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রাউন্ড কফি পান করলে এই ঝুঁকি কমে শতকরা ২০ ভাগ। একই পরিমাণ ক্যাফেইনমুক্ত কফি পান করলে এই ঝুঁকি কমে শতকরা ৬ ভাগ। ইন্সট্যান্ট কফি পান করলে কমে শতকরা ৯ ভাগ।
তবে অনিয়মিত হার্টবিটের ওপর কফির প্রভাব কি হয়, সে বিষয়ে ডাটা পরিবর্তিত হয়। দিনে চার থেকে ৫ কাপ ক্যাফেইনমুক্ত কফি পান করলে এসব ঝুঁকি কমে শতকরা ১৭ ভাগ। দিনে দুই থেকে তিন কাপ ইন্সট্যান্ট কফি পান করলে অ্যারিথমিয়ার ঝুঁকি কমে শতকরা ১২ ভাগ।