ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

ভেতর বাহির

কোণঠাসা পুতিন কি বিপর্যয় ঘটাবেন?

ডা. জাহেদ উর রহমান
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

একনায়কতন্ত্রের নানা রূপ আছে। এটা হতে পারে একটি পার্টির, একটি পরিবারের কিংবা একজন ব্যক্তির। পরিবার কিংবা পার্টির একনায়কতন্ত্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তত কয়েকজন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্রে সেটা থাকে না। সেই কারণেই একনায়কতন্ত্রের আলোচনায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্রকে সবচেয়ে খারাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে মানা হয়। পুতিন একজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়ক। তার দেশে দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই যিনি তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য শক্তিশালী চাপ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন


‘মিডিয়া ফ্যাটিগ’ বলে একটি টার্ম আছে মিডিয়ায়। কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ক্রমাগত কাভার করতে করতে মিডিয়া ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন ক্রমান্বয়ে সেই বিষয় থেকে মনোযোগ সরে যেতে থাকে; মনোযোগের মধ্যে আসেন নতুন কোনো বিষয়। ইউক্রেন যুদ্ধ গত বেশ কিছুদিন ধরে মিডিয়া ফ্যাটিগ এ আক্রান্ত ছিল কিন্তু সম্প্রতি এই যুদ্ধ আবার মিডিয়ার মনোযোগ পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
এই মনোযোগের কারণ রণাঙ্গনে ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ান বাহিনীর বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সাফল্য পাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি মঙ্গলবার দাবি করেন যে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণে তার সেনাবাহিনী রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে ৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে। যদি এই দাবি সত্যি হয়, তাহলে গত পাঁচ মাস ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের যতটা জায়গা দখলে নিয়েছিল, ইউক্রেনীয় সেনারা মাত্র ৭ দিনে তার চেয়ে বেশি এলাকা পুনর্দখল করেছে। ইউক্রেনের ওপরে একটি পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনকে ভ্লাদিমির পুতিন যতই ‘স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন’ বলুন না কেন, এটি আদতে একটি যুদ্ধ। খোদ ইউরোপের মাটিতে এই মাত্রার একটি যুদ্ধ পুতিন শুরু করবেন, সেটা কল্পনাও করেননি অনেকেই।  

সময় পুতিনের পক্ষে নেই। সর্বাত্মক আক্রমণের মাধ্যমে কয়েক দিনের মধ্যে কিয়েভ দখল করে সেখানে বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মতো একজন ‘পুতুল’ শাসক বসিয়ে রুশ বাহিনী ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে সুন্দরভাবে দেশে ফিরে যাবে, সে আশায় একেবারেই গুঁড়েবালি হয়েছে যুদ্ধ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই। ইউক্রেন আগ্রাসনে কমপক্ষে দশ জন জেনারেলসহ বহু হাজার রুশ সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে (সংখ্যাটি স্পষ্ট নয়)। রাশিয়ার শত শত ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূপাতিত হয়েছে অনেক হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান। এমনকি ইউক্রেনে আক্রমণ পরিচালনাকারী রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের নেতৃত্বদানকারী জাহাজ, যেখানে কমান্ডার থাকেন (ফ্ল্যাগশিপ) সেই মস্কোভাকে নিজের তৈরি ‘নেপচুন’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। দীর্ঘদিন ধরে অধিকৃত ক্রিমিয়ায় সামরিক কৌশলগত স্থানে সফল আক্রমণ চালিয়েছে ইউক্রেন। পুতিনের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরামর্শক যাকে কেউ কেউ ‘পুতিনের মস্তিষ্ক’ বলে থাকেন, সেই আলেকজান্ডার দুগিন কয়েকদিন আগে তিনি একটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান। শেষ মুহূর্তে গাড়ি পরিবর্তনের কারণে তিনি বেঁচে গেলেও মারা যান তার কন্যা দারিয়া দুগিন। দারিয়াও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক রাশিয়ান জাতীয়তাবাদ উস্‌কে দেয়ার কাজ করেছেন নিয়মিত। সাম্প্রতিক সময়ে দুগিন পুতিন সম্পর্কে বেশ সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন, তাই পুতিন তার আর সব সমালোচকের মতো দুগিনকে শাস্তি দিতে চেয়েছেন, তাই এই হত্যাকাণ্ড-এই তত্ত্ব আছে বেশ জোরেশোরে। কিন্তু রাশিয়া সরকারিভাবে যথারীতি দায়ী করেছে ইউক্রেনকে। 

এই ব্যাপারে রাশিয়ার ন্যারেটিভ যদি সত্য হয়, তাহলে রাশিয়ার মাটিতে এত গুরুত্বপূর্ণ মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে এমন হামলা করার সক্ষমতাও ইউক্রেনের জন্য এক বিরাট সাফল্য। এটাও রাশিয়ার জন্য এক বিরাট পরাজয়। কাগজে-কলমে অ-পারমাণবিক অস্ত্রের (কনভেনশনাল উইপন) বিচারে পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী রাশিয়ান সেনাবাহিনীর এই পরিণতি হবে, এটা অনেকেই ভাবেননি। কাঁধে বহনযোগ্য ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (বিশেষত জ্যাভলিন) এবং নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (বিশেষত স্ট্রিংগার) আর তুরস্কের অত্যাধুনিক সশস্ত্র ড্রোন রীতিমতো জাদু দেখিয়েছে। এরপর আমেরিকা থেকে কিছু ভারি অস্ত্র, যেমন হাউইটজার কামান, জাহাজ বিধ্বংসী হারপুন ক্ষেপণাস্ত্র এবং একেবারে নিখুঁত লক্ষ্যভেদী হাইমার্স রকেট সিস্টেম দেয়া হয় ইউক্রেনকে যাতে পরিস্থিতি রাশিয়ার বেশ বিপক্ষে চলে যায়।  ন্যাটোর সরবরাহ করা তুলনামূলক অনেক হালকা যুদ্ধাস্ত্রের সামনে রাশিয়ার ভারী সামরিক যন্ত্র যেভাবে নাকানিচুবানি খেয়েছে, সেটা রাশিয়ার অস্ত্রের ওপরে বৈশ্বিক আস্থা কমাবেই। ভবিষ্যতে রাশিয়ার অস্ত্র ব্যবসা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। শেষ পর্যন্ত রুশ বাহিনী কতোটা সফল হবে, সেটা এখনো বলা কঠিন। কিন্তু গত প্রায় ৭ মাসের যুদ্ধে রুশ বাহিনী যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, সেটাকে তাদের সামরিক পরাজয় বলাই যায়। যাক, ফিরে আসি আমাদের মূল আলোচনায়।

 

 

 যেকোনো যুদ্ধে প্রথম মৃত্যুটি যার ঘটে সে কোনো মানুষ নয়, সে হচ্ছে ‘সত্য’-যুদ্ধ নিয়ে কথাটি বহুল ব্যবহৃত, কিন্তু সত্য। যুদ্ধ মানেই দুই পক্ষের চরম প্রোপাগাণ্ডা। তাই প্রোপাগাণ্ডার মধ্যে সত্য বের করা ভীষণ কঠিন। আর বর্তমানের তথ্য প্রযুক্তির যুগে তো এটা এখন আগের যেকোনো সময়ের চাইতে আরও অনেক বেশি জটিল। এই সমস্যা মাথায় রেখেও, প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকায় পুতিন সত্যিই সংকটে পড়েছেন। রাশিয়ানদের যে পিছু হটার কথা শুরুতে বললাম, সেটা রাশিয়া নিজেরাও অস্বীকার করেনি। বিবিসি’র এক রিপোর্ট বলছে- মস্কো থেকে বিবিসি’র স্টিভেন রোজেনবার্গ জানাচ্ছেন, রুশ রাষ্ট্রীয় যে টিভি নিয়মিত যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ সৈন্যদের সাফল্যের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে, শনিবার তারা তাদের সাপ্তাহিক সংবাদভিত্তিক ফ্ল্যাগশিপ অনুষ্ঠানটি শুরুই করে বিরল এক স্বীকারোক্তি দিয়ে। “আমাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের রণাঙ্গনে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় যাচ্ছে” ভাবগম্ভীর গলায় বলতে শুরু করেন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক। “খারকিভ ফ্রন্টে পরিস্থিতি খারাপ- শত্রু সৈন্যের (ইউক্রেনীয়) সংখ্যা ছিল আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে যেসব শহর আমাদের সৈন্যরা মুক্ত করেছিল, এমন অনেক শহর থেকে তাদের চলে যেতে হয়েছে।” এতো গেল একটি রণক্ষেত্রের কথা। 

এই যুদ্ধে কিন্তু রণক্ষেত্র আছে আরেকটি- অর্থনৈতিক রণক্ষেত্র। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপরে নানা রকম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেবার আগে সবাই যেটা ভেবেছিল, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত ভেঙে পড়বে সেটা কিন্তু হয়নি। বরং কিছুটা কৃত্রিমভাবে হলেও রাশিয়া এই নিষেধাজ্ঞার মুখে তার মুদ্রা রুবলের প্রাথমিকভাবে হারানো ভ্যালু শুধু পুনরুদ্ধার করেনি বরং আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী করেছে। আমাদের দেশের অনেক মানুষের ধারণা একটি দেশের মুদ্রা শক্তিশালী থাকা এবং আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠা মানেই সেই দেশের অর্থনীতি অসাধারণ চলছে। এটা ভুল ধারণা।  রাশিয়ার অর্থনীতিতে মধ্য মেয়াদে বড় সংকট শুরু হয়েছে; এটা অনিবার্যই ছিল। কেন, কীভাবে বলা হচ্ছে রাশিয়ার অর্থনীতির অবস্থা বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে, সে আলোচনা করাই যায়। কিন্তু এই কলামের পরিসরে সেটা সম্ভব হবে না। কিন্তু বিষয়টাকে আমরা ভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারি।

 কিছুদিন আগে পুতিন ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে গলায় খুব জোর নিয়ে বলেছিলেন রাশিয়ার উপরে দেয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় তার কোনো ক্ষতি তো হয়ইনি বরং তার ভালো হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পশ্চিমারা এবং পুরো বিশ্ব। মুখে কথা বলাই যায়, কিন্তু আচরণই আসলে বুঝিয়ে দেয় সত্যিকার অবস্থা। এই যুদ্ধের সূত্রে আমরা অনেকেই জেনে গেছি যে, ইউরোপ রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির ওপরে ভীষণভাবে নির্ভরশীল। যুদ্ধের আগে ইউরোপ তার গ্যাস চাহিদার ৪০ শতাংশের বেশি এবং জ্বালানি তেলের ৩০ শতাংশের বেশি নির্ভর করতো রাশিয়ার ওপরে। স্বাভাবিক কারণেই এখন তারা সেই নির্ভরতা কমাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এদিকে শীতকালকে সামনে রেখে পুতিন রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এবং সর্বশেষ নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন পুরো বন্ধ রেখেছেন। যেহেতু বরফে জমে যাওয়া শীতের ইউরোপের জন্য বাসা গরম রাখা অত্যাবশ্যক ব্যাপার এবং এর জন্য প্রধানত গ্যাসই ব্যবহৃত হয়, তাই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা রাশিয়ার দিক থেকে এক বিরাট ‘ঠ্যাক’। গ্যাস সরবরাহ কমানো নিয়ে শুরুর দিকে রাশিয়া বলার চেষ্টা করেছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এই সরবরাহ পাইপলাইনের জন্য জরুরি কম্প্রেসরসহ অনেক যন্ত্রাংশ তারা পাচ্ছে না। কিন্তু কিছুদিন আগে নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন পুরো বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে সবশেষে বেরিয়ে এলো ‘থলের বিড়াল’। এবার রাশিয়া পুরোপুরি খোলাসা করেই বলেছে, তাদের ওপরে থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে তারা আর গ্যাস সরবরাহ করবে না। তাহলে এটা আমরা এখন নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি ধুঁকছে। এ এক অপ্রত্যাশিত বাস্তবতা পুতিনের জন্য। অথচ এর আগের বহু বছর সবকিছু পুতিনের পক্ষেই ছিল।

 ভ্লাদিমির পুতিন জর্জিয়াতে আক্রমণ করেছেন এবং কার্যত দখল করেছেন জর্জিয়ার অংশ দক্ষিণ ওসেটিয়া আর আবখাজিয়া। যে জর্জিয়ার ন্যাটো সদস্য হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে এই দুর্যোগ, সেই যুদ্ধে জড়ানো দূরে থাকুক ন্যাটো জর্জিয়াকে অস্ত্র সাহায্যও দেয়নি। একতরফাভাবে জিতে যান পুতিন। এরপর ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নিলেন। ডনবাসের রুশ ভাষাভাষীদের উস্‌কে দিয়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া, এমনকি সেখানে বেসামরিক পোশাকে রাশিয়ান সৈন্য ঢুকিয়ে দেয়ার পরও তেমন কিছু হয়নি। এরপর তো অবিশ্বাস্যভাবে ইউরোপিয়ানরা (ফ্রান্স, জার্মানি) ইউক্রেনের জন্য চরম অবমাননাকর মিনস্ক চুক্তিতে মধ্যস্থতা করে। একের পর এক আক্রমণাত্মক পরিস্থিতিতে পুতিনের জয় নিশ্চিতভাবেই তার জন্য একটা ‘উইনার এফেক্ট’ তৈরি করেছে। পূর্ণাঙ্গভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করতে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। তিনি মানসিকভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন তিনি জিতবেন এবারো। কিন্তু এটা এখন একেবারেই স্পষ্ট তিনি চোরাবালিতে পড়ে গেছেন। পুতিন এখন চরম কোণঠাসা। কিন্তু পুতিন কোণঠাসা হবার পরিণতি কী হতে পারে? বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ক্ষমতাবান মানুষদের তালিকা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার, পরপর চারবার (২০১৩-২০১৬) এক নম্বর প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন পুতিন।

 অর্থনৈতিক এবং সামরিক সক্ষমতাকে একসঙ্গে বিবেচনা করলে নিশ্চিতভাবেই রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ নয়ই, তার অবস্থান হবে বেশ নিচে। কিন্তু ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ হিসাবে তার এতবেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ আসলে পুতিন সেই রাষ্ট্রের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। একনায়কতন্ত্রের নানা রূপ আছে। এটা হতে পারে একটি পার্টির, একটি পরিবারের কিংবা একজন ব্যক্তির। পরিবার কিংবা পার্টির একনায়কতন্ত্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তত কয়েকজন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্রে সেটা থাকে না। সেই কারণেই একনায়কতন্ত্রের আলোচনায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়কতন্ত্রকে সবচেয়ে খারাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বলে মানা হয়। পুতিন একজন ব্যক্তিকেন্দ্রিক একনায়ক। তার দেশে দ্বিতীয় কোনো মানুষ নেই যিনি তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য শক্তিশালী চাপ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। আসলে রাশিয়ায় আধুনিক রাষ্ট্র বলে কার্যত কিছু নেই। সেখানকার ভ্লাদিমির পুতিন ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই’র নামে প্রচলিত বক্তব্যটি বলতে পারেন একেবারেই নির্দ্বিধায়- ‘আই এম দ্য স্টেইট’।  কোনো পণ্য বা সেবা বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বাজারজাতকারীরা সেই পণ্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে আলাদাভাবে জানান ভোক্তাদের। সেই বৈশিষ্ট্যই সেই পণ্যকে বাজারে থাকা অন্য উৎপাদকের পণ্য থেকে আলাদা করে। এটাকেই বলে ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন/পয়েন্ট (ইউএসপি)। মানুষের ক্ষেত্রে যদি ইউএসপি খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়, তাহলে পুতিনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে অযৌক্তিক, অন্যায্য, বর্বর বল প্রয়োগ করার ক্ষমতাজনিত ভীতি।

 দেশের ভেতরে কেউ তার ক্ষমতার প্রতি ন্যূনতম চ্যালেঞ্জ তৈরি করলে তাঁকে কারারুদ্ধ করা, দেশে-বিদেশে গুলি করে কিংবা বিষ প্রয়োগে হত্যা করতে পারেন পুতিন- এটা দেশের ভেতরে তার ক্ষমতাকে অনেকটা নিরাপদ রেখেছে। দেশের বাইরেও এই ভীতিই পুতিনের ইউএসপি। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি, ইউক্রেন আক্রমণের পর পুতিনের ইউএসপি হুমকির মুখে পড়ে গেছে। ইউক্রেনে একটি স্বল্প শক্তির (ট্যাকটিক্যাল) পারমাণবিক বোমা হামলার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো দেশ আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধকে ছড়িয়ে দিয়ে বর্তমান সংকটপূর্ণ অবস্থা থেকে বেঁচে ইউএসপি রক্ষার স্বপ্ন দেখতেই পারেন পুতিন। এর যেকোনোটি ঘটলে সেটা পৃথিবীর জন্য কেমন পরিস্থিতি তৈরি করবে, সেটা নিশ্চয়ই আর আলোচনার প্রয়োজন নেই।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status