নির্বাচিত কলাম
খোলা চোখে
প্রশ্নবিদ্ধ নাগরিক তথ্য এবং ইউরোপ ও সিঙ্গাপুর হওয়ার স্বপ্ন
লুৎফর রহমান
২৯ আগস্ট ২০২২, সোমবার
উন্নত দেশগুলোতে অপরাধ নির্মূলে বড় ভূমিকা রাখে নাগরিকদের পরিপূর্ণ তথ্য। যেকোনো অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ থাকে না বলে এসব দেশে অপরাধ প্রবণতা কম। অপরাধ হলে অপরাধীদের মুহূর্তে শনাক্ত করা যায়। বিচারের আওতায় আনা যায়। আমরা যখন সিঙ্গাপুর বা ইউরোপ হওয়ার স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের এসব উন্নত দেশের জনতথ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাসে পাশাপাশি সিটে বসা কয়েক জন কথা বলছিলেন। তারা সবাই নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাকেন্দ্র থেকে ফিরছিলেন। ৩৪ বছর বয়সী একজন বলছিলেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রে যে বয়স লেখা হয়েছে সে হিসেবে তিনি তার মায়ের থেকেও চার বছরের বড়। তার এই তথ্যে পাশে বসা অনেকে হাসছিলেন। কাজ নিয়ে প্রবাসে যেতে চান ওই যুবক। তাই আবেদন করেছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা বয়সের এই ভুল সংশোধন করতে। এক বছর আগে আবেদন করে বহুদিন ধরনা দিয়েছেন জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাকেন্দ্রে। সবশেষ তার বয়স সংশোধন হয়েছে। ওই যুবকের পাশে থাকা আরও কয়েকজন এমন ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করছেন। কারও নামে ভুল। কারও বাবার নাম ঠিক নেই। কারও বয়স কম বা বেশি। তাদের সবার কথায় দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা পোহানোর বিষয়টি বুঝা গেল। নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডিতে এমন ভুল নিয়ে ভোগান্তির বিষয় নতুন নয়। দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা এই জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে থাকেন। ভোটার হতে যাচ্ছেন এমন নাগরিকদেরও এখন এই পরিচয়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি বিভাগ এই সেবাটি দিয়ে আসছে। নিজস্ব সার্ভারে এনআইডি থাকা নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষণ করে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগ। নানা ধরনের সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে এখন এই এনআইডি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দুই. ছেলেকে স্কুলে ভর্তির আগে তার জন্মনিবন্ধনের সনদ পেতে দীর্ঘ লড়াই করতে দেখেছি অনেক অভিভাবককে। সন্তানের জন্মসনদ পেতে এতদিন জমা দিতে হতো বাবা-মায়ের জন্মসনদ। এখন যাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর তাদের অনেকেই জন্মসনদ নেননি আগে। নেয়ার ব্যবস্থাও ছিল না ওই অর্থে। নতুন করে ওই সনদ নেয়ার পর দেখা যাচ্ছে সেখানে নানা ভুল। এই ভুল সংশোধনের জন্য আবার দৌড়ঝাঁপ। নিজের জন্মসনদ হলে এবার সন্তানের সনদের জন্য আবেদন। সেখানেও দেখা যাচ্ছে ভুলের কারণে বার বার যেতে হচ্ছে ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কেন্দ্রে। নাগরিক ভোগান্তির বিষয় সামনে আসায় সম্প্রতি সন্তানের জন্মনিবন্ধনে বাবা-মায়ের জন্মসনদ দেয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মানুষের যা ভোগান্তি হওয়ার হয়ে গেছে। জন্মনিবন্ধনের এই কাজটি হচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে। জন্মনিবন্ধনের সব তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে।
তিন. গত ২৭শে জুলাই জনশুমারি ২০২২ এর তথ্য প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন। নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬। গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। দেশে প্রথম বারের মতো ডিজিটাল জনশুমারি করা হয়েছে এবার। জনশুমারির তথ্য প্রকাশের পর অনেকে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলা হচ্ছে, জনশুমারির যে হিসাব এসেছে প্রকৃত জনসংখ্যা এর চেয়ে বেশি হবে। বিশেষ করে জনশুমারি যখন পরিচালিত হয় তখন দেশের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা ছিল। একারণে এসব জেলার হিসাব সঠিকভাবে এসেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ ছাড়া অন্য একটি তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রবলভাবে। জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী ঢাকা শহরের বর্তমান জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখের বেশি। রাজধানীর বাসিন্দাদের এই তথ্য সঠিক নয় দাবি করে অনেকে বিশ্বব্যাংকের একটি হিসাব সামনে আনছেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে এই সংখ্যা ২ কোটির বেশি দেখানো হয়। খোদ রাজধানীতে যদি জনতথ্যের এতবড় গরমিল হয় তাহলে পুরো দেশের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠাতো স্বাভাবিক। দেশের নাগরিকদের একটি অংশ প্রবাসে থাকেন। জনশুমারিতে তাদের তথ্য যুক্ত হয়নি। কারণ এই হিসাবে কেবল দেশে থাকা নাগরিকদেরই তথ্য যুক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশে থাকেন। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যাটি বেশি হতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন এবং জনশুমারির তথ্য থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আমাদের নাগরিকদের সঠিক তথ্য, পরিসংখ্যান এবং ব্যবস্থাপনা কোনোটিই আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। অথচ একটি দেশের উন্নয়নের সঠিক পরিকল্পনা নেয়ার আগে জনসংখ্যার পরিসংখ্যানটি গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ জনশুমারির তথ্য প্রকাশের পর আলোচনায় এসেছে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি। বলা হচ্ছে মাথাপিছু আয় বেশি দেখাতেই জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো জনগণকে হিসাব থেকে বাদ দিয়ে মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে কি লাভ? এভাবে মাথাপিছু আয় হয়তো বেশি দেখানো যাবে। কিন্তু এই ভুল তথ্যতো প্রকৃত উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় তৈরি করবে। মাথাপিছু আয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটা বিতর্ক হতে পারে। সেটি হলোÑ যে প্রবাসী কর্মীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রেমিট্যান্স পাঠান তাদের জনসংখ্যার হিসাবের বাইরে রেখে কীভাবে মাথাপিছু আয়ের হিসাব আসে। দেশে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা প্রবাসী আয় যে কতো গুরুত্বপূর্ণ তা বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকালে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। এই প্রবাসীদের একটি বড় অংশ বছর কয়েকের জন্য বিদেশে যান। একটা সময় পর তারা দেশে ফিরে আসেন। তাদের পরিবার পরিজন দেশেই থাকেন। তাদের পাঠানো অর্থেই মোট জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু আয়ের অংকটি স্ফীত হয়। দেশের মোট জনসংখ্যার হিসাবে তাদের বাইরে রেখে মাথাপিছু আয়ের হিসাব কতোটা যৌক্তিক তা এক বড় প্রশ্ন। জনসংখ্যার হিসাবে গরমিলের বিষয়ে অনেকে আবার দেশের খাদ্য চাহিদার হিসাবটি সামনে আনছেন। বলা হচ্ছে, সরকারিভাবে জনসংখ্যার হিসাব ধরে খাদ্যের চাহিদা বিবেচনা করা হয়। এ কারণে উৎপাদনের হিসাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও প্রতি বছরই বিপুল খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। জনসংখ্যার প্রকৃত হিসাব না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এবার আসি জন্মনিবন্ধনের বিষয়ে। জন্মসনদের ওপর ভিত্তি করেই এখন নাগরিকদের পরবর্তী সব সনদ হচ্ছে। শুধুমাত্র এই সনদটি যদি সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে দেয়া যায় এবং তথ্য সংরক্ষণ করা যায় তাহলে নাগরিক তথ্য নিয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তি ও সন্দেহ কেটে যাবে। একইসঙ্গে মৃত্যুনিবন্ধনের বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করা গেলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার হিসাব কষতে কোটি কোটি টাকা খরচে শুমারির প্রয়োজন হবে না। প্রশ্ন আসতে পারে ভাসমান মানুষের হিসাব নিয়ে। সরকার যেহেতু বলছে দেশের কোনো মানুষ গৃহ এবং আশ্রয়হীন থাকবে না। সেক্ষেত্রে ভাসমান মানুষের হিসাব হয়তো বেশিদিন রাখতে হবে না। সেটি করতে হলেও কেবল ভাসমান মানুষ বা জন্মনিবন্ধনের বাইরে থাকা মানুষকে শুমারি করলেই দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার হিসাবটি পাওয়া যাবে সহজে।
একইসঙ্গে শিশুর জন্মের পরপরই তার জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করতে পারলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য আলাদা অভিযান চালানোর প্রয়োজন হবে না। জন্মনিবন্ধনের সার্ভার থেকেই বয়সভিত্তিতে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। যারা নতুন ভোটার হওয়ার যোগ্য তাদের পরিচয়পত্র দেয়া যাবে। মৃত্যুনিবন্ধন তথ্য থেকে মৃত ভোটারদের তথ্য হালনাগাদ করা সহজ হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নাগরিক তথ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। একেক বিভাগ একেক ধরনের কাজ করায় নাগরিক ভোগান্তি ও হয়রানি হচ্ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির পথ তৈরি হচ্ছে। নাগরিক তথ্যের এইসব কাজ যদি একই ছাতার নিচে আনা যায়। তাহলে এই ভোগান্তি লাঘব এবং অপচয় দূর করা সম্ভব। এর একটি সমাধান হতে পারে জনসংখ্যা বিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন। জনসংখ্যার হিসাব, ব্যবস্থাপনা, দক্ষতা উন্নয়নে বিশ্বের অনেক দেশে এমন মন্ত্রণালয় রয়েছে। আলাদা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জন্মের পরপরই নাগরিক তথ্য সংগ্রহ করে ইউনিক নাগরিক আইডি প্রদান করা গেলে জনতথ্য নিয়ে প্রশ্ন ও বিভ্রান্তির অবসান করা যাবে। একই আইডি বা পরিচয়পত্র নাগরিকের সব তথ্য ধারণ করবে। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে শিক্ষাগত ও দক্ষতা বিষয়ক তথ্য, ভোটদানে উপযুক্ততার তথ্য, অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য। এ ছাড়া এখন নাগরিকদের পাসপোর্ট পেতে যে কয়েক ধাপের ভোগান্তি পোহাতে হয় একক নাগরিক আইডি থাকলে এটির অবসান করাও সম্ভব। একজন নাগরিকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকলে তাকে পাসপোর্ট প্রদানে আলাদা দপ্তর বা পরিদপ্তরের কয়েক ধাপের কাজের প্রয়োজন হবে না। এতে অর্থ, সময় এবং শ্রমের অপচয় কমে যাবে। একই ছাতার নিচে নাগরিক তথ্য সংরক্ষিত থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আইডি বা ইউনিক আইডি দেয়ার যে চিন্তা করা হচ্ছে সেটিরও প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন প্রদানের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এটি নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলার অবসান হবে। কারণ পেনশন নির্ধারণে বিদ্যমান ভোটার আইডি বা জন্মনিবন্ধনের ভুলের যে ভোগান্তি রয়েছে তা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। আর ভোটের আগে ভোটার তালিকা নিয়ে যে প্রশ্ন সামনে আসে বরাবর। ভুয়া ভোটার, বায়বীয় ভোটারের যে সমালোচনা হয় তারও একটা স্থায়ী সমাধান হতে পারে যদি ইউনিক নাগরিক আইডি’র ধারণা প্রচলন করা যায়। এ ছাড়া অনেকের আবার জন্মতারিখ নিয়ে নানা ঝামেলা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইচ্ছে মতো জন্মতারিখ বসিয়ে দেয়া। বয়সের সুবিধা নিতে বয়স বাড়ানো বা কমিয়ে থাকেন অনেকে। এতে প্রকৃত জন্মতারিখ এবং সাল নিয়ে কেউ কেউ সমস্যায় ভোগেন। জন্মতথ্যের ভিত্তিতে ইউনিক আইডি হলে এই সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে সহজে।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শেষ ধাপগুলো পার করছে। ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে এই কাতারে যুক্ত হবে দেশ। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নের ধারাকে অনেকে ইউরোপ বা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করছেন। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে যদিও সিঙ্গাপুর বা ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর চেয়ে আমাদের এখনো যোজন যোজন ফারাক। এসব দেশের উন্নয়নের অনেক উপাদানের সঙ্গে জনতথ্যের বিষয়টি বড় করে বিবেচনা করা হয়। জনসংখ্যার সঠিক হিসাব এবং পরিসংখ্যান রয়েছে এসব দেশের। প্রতিটি নাগরিকের সব ধরনের তথ্য রাষ্ট্রগুলো সংরক্ষণ করে। এজন্য নাগরিকের চাহিদা, সমস্যা সমাধান এবং অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো ঝুট ঝামেলা পোহাতে হয় না। অন্যদিকে নাগরিকরা রাষ্ট্রদ্বারা নিবন্ধিত এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার মধ্যে থাকায় রাষ্ট্রীয় সুবিধা পেতে যেমন কোনো ধরনের ভোগান্তি বা বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে না।
উন্নত দেশগুলোতে অপরাধ নির্মূলে বড় ভূমিকা রাখে নাগরিকদের পরিপূর্ণ তথ্য। যেকোনো অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ থাকে না বলে এসব দেশে অপরাধ প্রবণতা কম। অপরাধ হলে অপরাধীদের মুহূর্তে শনাক্ত করা যায়। বিচারের আওতায় আনা যায়। আমরা যখন সিঙ্গাপুর বা ইউরোপ হওয়ার স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের এসব উন্নত দেশের জনতথ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি নাগরিকের তথ্য সরকারের কাছে থাকতে হবে। তা না করে যদি জনসংখ্যার অংকের মারপ্যাঁচে মাথাপিছু আয় বাড়ানোর কৌশল নেয়া হয় তাহলে মাথাপিছু আয় হয়তো বাড়বে। কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন বা সব নাগরিককে নিয়ে বৈষম্যহীন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে না। হিসাব আর পরিসংখ্যানে উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশ হওয়া যাবে কিন্তু এই উন্নয়নের ফল হয়তো সব মানুষ পাবে না। মুখে সিঙ্গাপুর বা ইউরোপ হওয়ার কথা বললেও বিদ্যমান ব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো চিন্তা বা পরিকল্পনার চিহ্ন কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। বরং জনতথ্যের অসঙ্গতির বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষ যে প্রশ্ন তুলছে তা নিয়ে যৌক্তিক উত্তর না দিয়ে উল্টো কটাক্ষ করা হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ নামের ছোট্ট যে বদ্বীপে বিপুল জনগোষ্ঠীর বাস সেখানে বড় সম্ভাবনা এখানকার ভূমি এবং মানুষ। বড় কোনো প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস না থাকায় এই দুই সম্পদে ভর করেই আমাদের উন্নত দেশের কাতারে যেতে হবে। ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর এই উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রতিটি নাগরিকের শক্তি ও মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। এখানেও সঠিক জনতথ্যের বিষয়টি সমান গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে কেবল পরিসংখ্যানের ওপর ভর করে উন্নত দেশ হওয়ার চিন্তা করলে হোঁচট খাওয়ার সমূহ ঝুঁকি থেকে যায়। মামুলি বৈশ্বিক পরিস্থিতিও হঠাৎ করেই সামনে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। আর ভুল পরিসংখ্যান নিয়ে এমন পরিস্থিতি এড়ানো দুঃসাধ্য।
লেখক: মানবজমিনের নগর সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক।