ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

কাওরান বাজারের চিঠি

মাহবুব তালুকদারের ইতিহাস, ইভিএম ডাকাত এবং...

সাজেদুল হক
২৭ আগস্ট ২০২২, শনিবারmzamin

‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায়  দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৮৫)

তখনো তিনি নির্বাচন কমিশনার হননি। মানবজমিনে নিয়মিত লিখতেন ‘চাচার পাঁচালী।’ অফিসে আসতেন মাঝে-মধ্যে। কথা হতো টুকটাক। রসিকতা করতেন কখনো কখনো। সহজে টের পাওয়া যেতো না এত বিশাল একটা জীবন তার। সাদামাটা। সাধারণের মোড়কে মোড়া অসাধারণ।

বিজ্ঞাপন
কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে। সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আমলা, মুক্তিযোদ্ধা। নানা পরিচয়। তবে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পরই একদম বদলে যান মাহবুব তালুকদার। মেরুদণ্ড সোজা করে রুখে দাঁড়ান তাবৎ অসততার বিরুদ্ধে। পরিণত হন গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বরে। তার মুখে ভাষা পায় কোটি কোটি মানুষের কথা। হ্যাঁ, তিনি সফল হতে পারেননি। রুদ্ধ করতে পারেননি গায়েবি ভোটের পথ। কিন্তু তার প্রচেষ্টা, সাহস আর শক্ত মেরুদণ্ড এতে ম্লান হয়ে যায়নি।

এরই প্রমাণ পাওয়া গেল বুধবার। মাহবুব তালুকদারের মৃত্যুর পর। মৃত্যু কি একটি সাদামাটা শব্দ নয়? কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাহাড়ের মতো ভারী। এটিও তেমনি। তার মৃত্যু হয়েছে পুরো পরিণত বয়সে। ৮০ বছরের জীবন পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে অনেকদিন ধরে ভুগছিলেন ক্যান্সারে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। তাই সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কিন্তু অনুমান করতে পারি বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নির্বাচন কমিশনারের মৃত্যুতে এত প্রতিক্রিয়া কখনো হয়নি। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এই লেখকও বেশকিছু প্রতিক্রিয়া পড়েছেন। এবং আশ্চর্যের বিষয় প্রায় শতভাগই তার প্রশংসা, তার আখেরাতের মঙ্গল কামনা। দুই একজন অবশ্য বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করলে হয়তো আরও ভালো করতেন।

মাহবুব তালুকদার দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ যতই ফুরিয়ে আসছে নির্বাচন ব্যবস্থা ও অবস্থা দেখে ততই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি। আজও রূপকার্থে কিছু কথা বলতে চাই। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন এখন আইসিইউতে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে। খেলায় যেমন পক্ষ-বিপক্ষের প্রয়োজন হয়, তেমনি একপক্ষীয় কোনো গণতন্ত্র হয় না।’ একের পর এক তিনি বলে গেছেন। কমিশনের মিটিংয়েও জানিয়েছেন ভিন্নমত। সংখ্যাগরিষ্ঠতার খেলায় অবশ্য হেরে যান তিনি। আমারই পুরনো একটি লেখা থেকে ধার করে বলি, দুর্ভাগ্যবশত ওনার সহকর্মীরা ছিলেন ‘গণিতবিদ।’ ওনারা অঙ্ক করে দেখিয়ে দিতেন কী অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে! এবং সম্ভবত মানুষের অবাধ ভোটাধিকারে তারা বিশ্বাসও করতেন না। সেদিন ফেসবুকে রেকর্ড করা একটি টিভি আলোচনা শুনছিলাম। দুই আলোচকের একজন রাজনীতিবিদ। অন্যজন সিনিয়র সাংবাদিক। ওই রাজনীতিবিদ একপর্যায়ে বুঝাতে চাইলেন, আচ্ছা বিএনপি চাপ প্রয়োগ করতে পারেনি। এটা ঠিকই। কিন্তু একটা কলাগাছকে ভোট দেয়ার অধিকারও তো জনগণের আছে। জনগণ কেন তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। ওই সাংবাদিক বললেন, এগুলো টেক্সটবুকের কথা। তো যেটা দাঁড়ালো দেশের অনেক বিশিষ্ট মানুষরাও এটা বিশ্বাস করেন, অবাধ ভোটাধিকার কেতাবি কথা। এমন দেশে অবাধ ভোটাধিকারের জন্য মাহবুব তালুকদারের একার লড়াই বিস্ময়ও তৈরি করে।

তিনি হয়তো অনুমান করতে পেরেছিলেন মানুষ তাকে কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু পুরোটা দেখে যেতে পারেননি। আত্মীয়তার বন্ধন নেই, নেই ব্যক্তিগত পরিচয়, তবুও কতো মানুষ জানিয়েছেন তাদের নিখাদ ভালোবাসা। বিশিষ্টজনরা বলেছেন মাহবুব তালুকদারকে কেন আমরা মনে রাখবো সে কথা। খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ যেমন লিখেছেন, ‘আমরা তাকে মনে করবো নির্বাচন কমিশনের এক প্রতিকূল সময়ে এক সাহসী, বিবেকবান কণ্ঠস্বর হিসেবে। বাংলাদেশে যতদিন গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা থাকবে এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস লেখা হবে মাহবুব তালুকদারকে আমরা স্মরণ করবো।’
এটা আপসের সময়। অনেককে দাঁড়িয়ে দেখাতে হয় তাদের মেরুদণ্ড আছে। মাহবুব তালুকদারকে তেমন হাস্যকর চেষ্টা করতে হয়নি। তার কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে গেছে, একটি শক্ত মেরুদণ্ডের মালিক ছিলেন তিনি। মাহবুব তালুকদারকে আমরা তার সফলতা, ব্যর্থতা দিয়ে বিচার করতে পারবো না। তিনি ইতিহাসে টিকে থাকবেন তার প্রচেষ্টার জন্য, সাহসের জন্য। আমরা আজকের এইদিনে তার জন্য প্রার্থনা করি। তার আখেরাতের জীবন যেন সফল হয়। 

পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায়  দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৮৫)
 

ইসির নিজস্ব সিদ্ধান্ত, ইভিএম ডাকাত

এক সময়কার ডাকসাইটে সাংবাদিক। সবে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরেছেন। কাওরান বাজারে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। জানতে চাইলেন, আচ্ছা সাজিদ, জাফরুল্লাহ ভাই (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) কেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম প্রস্তাব করলেন? আমার কাছে উত্তর ছিল না। এখনো নেই। ওই আড্ডার সময় পর্যন্ত কাজী হাবিবুল আউয়াল সিইসি হননি। এক/দুই দিন পরই তিনি নিয়োগ পান। এরইমধ্যে তিনি কিছু ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেছেন। অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। এমনটাও বলেছেন, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন হলে চলে যেতেও তার আপত্তি নেই। কিন্তু ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত রাজনীতিতে রহস্য তৈরি করেছে। পরিস্থিতি করেছে আরও জটিল। অনেক কিছুই যেন পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। পুরনো ছায়া ফিরে এসেছে শেরে বাংলা নগরে। সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। নির্বাচন কমিশন থেকে দূরত্ব বজায় রাখা বিএনপি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। সব আসনে ইভিএম চাওয়া আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি অবশ্য এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলছেন, কারচুপির জন্যই এমন সিদ্ধান্ত। 

এমনিতেই আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা, অনিশ্চয়তা। সেখানে নতুন করে ইভিএম জটিলতা কেন তৈরি করা হচ্ছে তা বুঝা মুশকিল। এ নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নানা গুজব, তত্ত্ব রয়েছে। ইভিএম নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতের কিছু বক্তব্যে আমরা চোখ বুলিয়ে আসতে পারি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খানের একটি বক্তব্য ছিল তুমুল আলোচিত। তিনি বলেছিলেন, ‘ইভিএমে চ্যালেঞ্জ একটাই। এ ছাড়া আর কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না। একটা ডাকাত-সন্ত্রাসী গোপন কক্ষে একজন করে দাঁড়িয়ে থাকে। আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান। দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ।’’ একই সময়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর দেয়া একটি ভাষণও ভাইরাল হয়। তার কথা ছিল, ইভিএম কেন্দ্রে চাপ দেয়ার জন্য তার লোক থাকবে। ইভিএম না থাকলে যেভাবে পারেন ভোট মেরে দিতেন বলেও জানান তিনি। অবশ্য ‘স্মার্ট’ মানুষ। ভোট কাটার অতীত অভিজ্ঞতার কথাও গর্ব ভরে বলেন। গত জুলাইয়ে পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা জোবায়দুল হক ওরফে রাসেলের একটি বক্তব্য আলোচিত হয়। তিনি বলেন, ‘ভোট হবে ইভিএমে, কে কোথায় ভোট দেবে তা কিন্তু আমাদের কাছে চলে আসবে। অতএব ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই, টেনশনেরও কিছু নাই।’ 

 

প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার একটি তুলসী গাছের কাহিনী শেষ করেছেন এভাবে, ‘উঠানের শেষে তুলসী গাছটা আবার শুকিয়ে উঠেছে। তার পাতায় খয়েরি রং। সেদিন পুলিশ আসার পর থেকে কেউ তার গোড়ায় পানি দেয়নি। সেদিন থেকে গৃহকর্ত্রীর ছলছল চোখের কথাও আর কারও মনে পড়েনি। কেন পড়েনি সে-কথা তুলসী গাছের জানবার কথা নয়, মানুষেরই জানবার কথা।’ নানান কিসিমের ভোট দেখেছি আমরা। তবে ভোট উৎসবও কম দেখেনি এ জনপদের মানুষ। তার রং এখন অনেকটাই ম্লান। কথা হলো আগামী নির্বাচনে ইভিএম কী জাদু দেখাবে? সে-কথাটি আসলে ইভিএমের জানবার কথা নয়, মানুষেরই জানবার কথা। 

 

প্রধান নির্বাচন কমিশনারও জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব। ছোটবেলায় স্কুলে বাজা ছুটির ঘণ্টার ধ্বনি এখনো কানে বাজে। যদিও ঘণ্টা শুনেই দৌঁড় দিতাম। কোনো দিকে তাকানোর আর সময় থাকতো না। কিন্তু, এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কথা শুনে সবাই এভাবে দৌড় দিচ্ছেন না। বহু মানুষ প্রশ্ন তুলছেন। নির্বাচন কমিশন আসলে কি চায়? কমিশন কী আদৌ একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়? নাকি এতদিন তিনি কথার কথা বলেছেন। সুনির্দিষ্ট ছকেই এগুচ্ছে সবকিছু? কোনো কোনো নির্বাচন কমিশনারের ভাষার পরিবর্তনও ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো দলের জন্য নির্বাচন বসে থাকবে না এটি তারা বলার চেষ্টা করছেন। 
দুনিয়ার নানা দেশেই ইভিএম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশেও এ মেশিন নিয়ে তৈরি হয়েছে আস্থার সংকট, অবিশ্বাস। যদিও নির্বাচন নিয়ে সংকটটি পুরনো। গত নির্বাচনেও এক ধরনের সমঝোতার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সিল-ছাপ্পরের জোরে তা ভেস্তে যায়। আগামী নির্বাচন ঘিরেও নানা আলোচনা, গুজব। এমনটাও কেউ কেউ বলছেন, এই মেশিন রাজনৈতিক সমঝোতায় ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ তার একটি তুলসী গাছের কাহিনী শেষ করেছেন এভাবে, ‘উঠানের শেষে তুলসী গাছটা আবার শুকিয়ে উঠেছে। তার পাতায় খয়েরি রং। সেদিন পুলিশ আসার পর থেকে কেউ তার গোড়ায় পানি দেয়নি। সেদিন থেকে গৃহকর্ত্রীর ছলছল চোখের কথাও আর কারও মনে পড়েনি। কেন পড়েনি সে-কথা তুলসী গাছের জানবার কথা নয়, মানুষেরই জানবার কথা।’ নানান কিসিমের ভোট দেখেছি আমরা। তবে ভোট উৎসবও কম দেখেনি এ জনপদের মানুষ। তার রং এখন অনেকটাই ম্লান। কথা হলো আগামী নির্বাচনে ইভিএম কী জাদু দেখাবে? সে-কথাটি আসলে ইভিএমের জানবার কথা নয়, মানুষেরই জানবার কথা। 
 

লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, মানবজমিন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

বেহুদা প্যাঁচাল/ অর্থমন্ত্রীর এত বুদ্ধি!

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status