ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চোখে

আমাদের একজন মাহবুব তালুকদার ছিলেন!

রুমিন ফারহানা
২৬ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
mzamin

একদিন হঠাৎ একটা ফোন পাই আমি। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় নির্বাচন কমিশনার জনাব মাহবুব তালুকদার আমার সঙ্গে কথা বলবেন। সংসদে যাবার ৩ মাসও তখন পূরণ হয়নি আমার। স্বাভাবিক কারণেই খুব বিস্মিত হই। কিছুটা ভয়ও পাই। আমার মতো নবীন সদস্যের সঙ্গে ওনার মতো বড় মানুষ কী বলবেন, ভেবে পাচ্ছিলাম না কিছুতেই। কিন্তু কণ্ঠ শুনেই আশ্বস্ত হই আমি। গভীর স্নেহভরা কণ্ঠ। কতো বড় মানুষ কিন্তু কি ভীষণ বিনয়ী। আমার পার্লামেন্টে বলা কথাগুলো চাইছিলেন আমার কাছে।  সেই শুরু। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই ফোন করতেন আমাকে। জানতে চাইতেন কেমন আছি, আমি একা চলি জানতেন বলেই হয়তো কথা হলেই বলতেন ‘তোমার জন্য খুব ভয় হয় আমার’। বলতেন সাবধানে চলার জন্য। বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন পরিস্থিতি, বিচারব্যবস্থা এই সবকিছু নিয়ে একটা বই লেখার কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। কথা ছিল তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হবে বইটা। আমাকে পড়তেও দিয়েছিলেন সেটা। জানতে চাইছিলেন আমার মতামত। কয়েকটা চ্যাপ্টার দেখার পর পুরোটা আর শেষ করে উঠতে পারিনি আমি। বেশ কয়েকবার বলার পর হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন নানা কারণে আমার অপারগতা। তাই আর জোর করেননি কখনো। কিন্তু ফোনে আমার খবর রাখতেন নিয়মিত। প্রতিবার কথা শেষে মাহবুব তালুকদার সাহেবের দোয়া চাইতাম আমি, প্রতিবারই বলতেন তার সকল প্রার্থনাতেই আমি আছি।

 শেষ কথা হয় মৃত্যুর অল্প কয়েকদিন আগেই। জানালেন বেশ লম্বা সময় হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। দুর্বল, ক্লান্ত কণ্ঠ বলছিল ভালো নেই স্যার। নানা কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। আমার কাছে রাজনীতি, নির্বাচনের বহু ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ছিলেন পিতৃতুল্য শ্রদ্ধার মানুষ। কিন্তু আমার আজকের এই লেখা স্যারের স্নেহধন্য কন্যাসম আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নয়; বরং একজন নবীন রাজনৈতিক কর্মীর দৃষ্টিতে বিপুল বৈরী স্রোতের বিরুদ্ধে একা দাঁড়ানো এক নির্ভীক যোদ্ধার কথা।  ভবিষ্যৎ ঠিক কেমন আছে জানি না, কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাসীন থাকার সময়টা, বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর থেকে এই দেশের পরিস্থিতির তুলনা চলে একমাত্র স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী লীগ সরকারটির সঙ্গেই। তৎকালীন সরকার রীতিমতো সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চরিত্র ধ্বংস করে একদলীয় রাষ্ট্র কায়েম করেছিল। আর বর্তমান সরকার সেই সরকারটির তুলনায় অনেক বেশি ধূর্ত, অনেক বেশি পরিপক্ব, তাই এবার আর বাকশাল নয়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মোড়কে বাংলাদেশকে একটি ডি-ফ্যাক্টো একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে।  এই বীভৎস সময়টা বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোটিকে ভেঙে ফেলেছে। আইন বিভাগ তো ছিলই, দেশের বিচার ব্যবস্থাকেও পুরোপুরি এক ব্যক্তির করায়ত্ত হয়েছে। এই দেশকে পরিণত করা হয়েছে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন আর লুটপাটের এক স্বর্গরাজ্য গোষ্ঠীতন্ত্রে (অলিগার্কি)। ভবিষ্যতের কোন সময় কোন গবেষক কিংবা ইতিহাসের কোন মনোযোগী ছাত্র অথবা শুধু একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক এমন একটি চিত্রই দেখবে বাংলাদেশের। 

 একটা জাতির জীবনে পচনের সময়গুলো স্খলনের সময়গুলো নিঃসন্দেহে ভীষণভাবে জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু এই সময়গুলোর আরেকটা দিক আছে- এটা প্রকাশ্যে নিয়ে আসে জাতির সাহসী সূর্যসন্তানদের। ভবিষ্যতের আগ্রহী কেউ অবাক বিস্ময়ে দেখবে বাংলাদেশের বর্তমান সময়টিতে হাতেগোনা যে ক’জন সূর্যসন্তান আলো দিয়েছিলেন, তাদের একজন ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তাদের বিস্ময়ের সীমা আকাশ ছোঁবে যখন তারা জানবে এই নির্বাচন কমিশনে কাজ করার পুরো সময়টা এই মানুষটার শরীরে বয়ে চলছিল ছড়িয়ে পড়া মরণব্যাধি ক্যান্সার। শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়া এই মরণব্যাধি এতটুকু কাবু করতে পারেনি তাকে। সত্যের নিজস্ব তেজ থাকে, থাকে শক্তি। সেই জোরেই হয়তো ভেতর-বাইরের সকল বাধা একা ডিঙ্গানোর সাহস পেয়েছিলেন তিনি। কেউ প্রশ্ন করতেই পারে, এই যে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা তছনছ হয়ে গেল, তাতে কি জনাব মাহবুব তালুকদার গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকা পালন করতে পেরেছিলেন? তিনি পারেননি। কেন পারেননি সেটার ব্যাখ্যাও নিজেই দিয়েছিলেন তিনি- “নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে আমি সর্বদাই সচেষ্ট ছিলাম। কিন্তু পাঁচজনের কমিশনে একজন কমিশনার এককভাবে কিছুই করতে পারেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের কাছে আমি হেরে গেছি। অনেক সময় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কারণে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারিনি। 

 

 

সংখ্যাগরিষ্ঠরা আমার হ্যাঁ বা না-এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে জয়যুক্ত হয়েছেন”। নির্বাচন কমিশনে থাকার সময়কার পাঁচটি বছর একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ একা লড়াই করে গিয়েছিলেন চরমতম বৈরী পরিবেশে। তার কথা সরকারকে নানাভাবে বিব্রত করে যাচ্ছিল কিন্তু তিনি হয়ে উঠেছিলেন জনতার মুখপাত্র। মানুষ যা বলতে চায় কিন্তু নানা চাপে বলতে পারে না সে কথাগুলোই উঠে আসছিল তার বক্তব্যে। এক পর্যায়ে সরকারি দলের লোকজন এবং নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে থাকা কিছু ‘সুশীল’ তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিল। তারা ভীষণ ভাবে চাইছিলেন তিনি পদত্যাগ করুন। সেটা তার ওপরে হয়তো চাপও তৈরি করেছিল। কিন্তু আমাদের দেশের //টিপিক্যাল মধ্যবিত্তদের মতো আচরণ করেননি তিনি- পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যুদ্ধের মাঠ থেকে পালিয়ে যাননি। কেন যাননি সে প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন-      “একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আমি আসন্ন নির্বাচনের বেহাল অবস্থা অনুধাবন করে পদত্যাগের চিন্তা করেছিলাম। বিষয়টি সম্পর্কে গভীরভাবে ভেবে দেখেছি আমার একক পদত্যাগ সমস্যার কোনো সমাধান নয়। আমার পদত্যাগে দেশ ও জাতির কোনো উপকার হবে বলে মনে হলে আমি তাই করতাম। বরং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে না গিয়ে এককভাবে যুদ্ধ করাই সমীচীন মনে হয়েছে।আমি পদত্যাগ করলে ভিন্নমত প্রকাশ সম্ভব হতো না এবং জনগণ তা জানতে পারতেন না। তাতে অনেকে স্বস্তিবোধ করতেন, কিন্তু যারা স্বস্তিবোধ করতেন না, সেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে অবশেষে পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছি”। 

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে একজন সাংবিধানিক পদধারীর পদ যেহেতু খুব সিকিওরড, তাই তিনি লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু তার পদত্যাগ না করে এভাবে ‘মাটি কামড়ে পড়ে থেকে’ তার লড়াই করে যাবার তাৎপর্য বোঝা যাবে এই সরকারের আমলের এক অতি আলোচিত ঘটনায়। সাংবিধানিক পদধারী তো বটেই রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ, বিচার বিভাগের মাথা, প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ঘটনা আমাদের মনে আছে নিশ্চয়ই। সরকারের বিরাগভাজন হবার কারণে সিটিং প্রধান বিচারপতিকে গায়ের জোরে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। নূরুল হুদা কমিশন গঠিত হবার কিছুদিন আগেই এমন উদাহরণ সামনে থাকার পরও যে মানুষটা লড়াই চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন, সে মানুষটার সাহস নিশ্চয়ই বহু যুগ অনুপ্রেরণা যোগাবে যারা দেশ-দশের স্বার্থে কাজ করতে চাইবে তাদের জন্য।  জনাব মাহবুব তালুকদার কমিশনে থাকা অবস্থায় প্রতিটি নির্বাচন শেষেই নিঃসংকোচে, সাহসের সঙ্গে সত্য উচ্চারণ করে গেছেন। হোক তা জাতীয় নির্বাচন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) পর্যবেক্ষণ শেষে মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, ভোটযুদ্ধে যুদ্ধ আছে, ভোট নেই। সেই যুদ্ধ সরকারি দলের নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেদের যুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধ যে কতো ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটি প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। ভোটারদের ভয় দেখানো, কেন্দ্র বিমুখ করা, স্বতন্ত্র বা ভিন্ন দলের প্রার্থী ভোটারদের শাসানো, অস্ত্র থেকে শুরু করে এলাকা ছাড়া করার ভয় দেখানো সবই বলা হয়েছিল স্থানীয় পর্যায়ের সেই নির্বাচনগুলোতে। 

 নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সমালোচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনার মিথ্যাচার করেন। কোনো বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নে জন্য ইসি নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথা বলেন।’ ইতিহাসই নির্ধারণ করবে কে সত্য আর কে মিথ্যার সঙ্গে ছিল, কার ভূমিকা কেমন ছিল। তবে সিইসি’র এই কথার উত্তর দিয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। বলেছিলেন ‘সিইসি ঠিকই বলেছেন, আমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করেছি। তবে এজেন্ডাটি আমার নিজস্ব নয়, জনগণের তথা দেশবাসীর। এই এজেন্ডা হচ্ছে সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আইনানুগ ও শান্তিপূর্ণ করা। কোথাও সহিংসতা হলে তার দায় এড়াবো না। সর্বশক্তি দিয়ে এর পুনরাবৃত্তি রোধ করবো। আমার এজেন্ডা হচ্ছে- ভোটাধিকারের মাধ্যমে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আমার এজেন্ডা হচ্ছে-গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা, যা সংবিধানের মূল পথনির্দেশ। ‘গণতন্ত্রহীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে, কে বাঁচিতে চায়?’ বাংলাদেশে নির্বাচনী যে গভীর সংকট সেটি একজন কমিশনার হয়েও অকপটে বলেছিলেন তিনি। সরকার, ক্ষমতাসীন দল, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে তা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন ‘প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন এখন আইসিইউতে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে’।

 তার মতো জায়গায় থেকে এই কঠোর কঠিন সত্য উচ্চারণ নিশ্চিত ভাবেই সহজ ছিল না। এই রূপকের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণু মনোভাব গণতন্ত্রকে অন্তিম অবস্থায় নিয়ে গেছে। খেলায় যেমন পক্ষ-বিপক্ষের প্রয়োজন হয়, তেমনি একপক্ষীয় কোনো গণতন্ত্র হয় না।’ জাতীয় থেকে স্থানীয় সকল নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি, নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা, পক্ষপাতমূলক আচরণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার, প্রশাসনের বৈরিতা, সহকর্মীদের প্রতি মুহূর্তের অসহযোগিতা নিশ্চিতভাবেই বিপর্যস্ত করেছিল তাকে। কিন্তু কোনোদিন ভেঙে পড়েছেন বলে মনে হয়নি। দেশ, দেশের পরিস্থিতি, রাজনীতির দৈন্যদশা পীড়িত করতো তাকে কিন্তু হতাশ হতে দেখিনি কখনো। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬৫ জনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ আর রাউজানে ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানসহ ১২৬ জন পুরুষ ও ৪২ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্যের সবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় বাংলাদেশের নির্বাচনে এক নতুন ইতিহাস রচনা করে। এসব নির্বাচনে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী বা প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচন ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ।  আর তাই হয়তো মাহবুব তালুকদার প্রকাশ্যে বলেছিলেন সারা দেশে যদি সন্ত্রাসমুক্ত এ ধরনের নির্বাচন করা যায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের বদলে একজন সচিবের অধীনে একটি সচিবালয় থাকলেই যথেষ্ট! বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক কলংকিত নির্বাচন ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

 দেশে বিদেশে এটি মধ্য রাতের নির্বাচন নামেই পরিচিতি পায়। আর এই নির্বাচনের সময় একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জনাব মাহবুব তালুকদার। তাই সেই নির্বাচনের কিছুটা দায় হয়তো তার ওপরও এসে পড়ে। কিন্তু আর সব কমিশনারের সঙ্গে তার পার্থক্যের জায়গাটা হলো নিজের দায় এড়ানোর জন্য কলংকিত এক নির্বাচনকে সুষ্ঠু বলার তামাশা মানুষের সঙ্গে তিনি করেন নাই। দায়িত্ব নিয়েছেন, দায়ও স্বীকার করেছেন। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে? এভাবে না অবাধ, না সুষ্ঠু, না নিরপেক্ষ, না আইনানুগ, না গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য কিছু পাওয়ার আশায় কিংবা হারানোর ভয়ে যাদের জাতির বিবেকের ভূমিকায় থাকার কথা ছিল তারা হয় নিশ্চুপ না হলে উল্টো কথা বলছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের কলংকিত ইতিহাসকে সামনে রেখে আরও একটি জাতীয় নির্বাচন দরজায় করা নাড়ছে আমাদের। কেমন হবে সেই নির্বাচন সে আলোচনা সর্বোত। সবাই অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচনের কথা বললেও আসল কথাটি কেউ বলছেন না। 

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া কেউ বলছেন না ২০১৪ আর ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইতিহাসের পর কারও আর বুঝতে বাকি নেই যে, এই সরকারের অধীনে ন্যূনতম কোনো সুষ্ঠু ভোট অসম্ভব। কিন্তু নিজের ৫ বছরের কমিশনের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন ‘বিগত দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না।’ ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। একদিন এই দেশের অন্ধকারময় এই সময়ের কথাও লিখবেন কোনো ইতিহাসবিদ, লেখক কিংবা গবেষক। নির্মোহ ভাবে তুলে আনবেন কুয়াশাচ্ছন্ন ভীতিকর এই সময়ের কথা। নির্ভয়ে লেখা হবে বাংলাদেশকে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে আসার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের নাম। তখন নিশ্চিতভাবেই লেখা হবে অন্ধকার এই সময়ে নক্ষত্রের আলোর মতো একা কিন্তু নির্ভয়ে জ্বলতে থাকা আলো ছড়ানো কিছু মানুষের কথাও। জনাব মাহবুব তালুকদারের নাম তাতে নিশ্চিত ভাবেই থাকবে। অনাগত প্রজন্ম জানবে- আমাদের একজন মাহবুব তালুকদার ছিলেন।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status