খেলা
সিরিজের সঙ্গে বিশ্বাস বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ
ইশতিয়াক পারভেজ (কলম্বো, শ্রীলংকা থেকে)
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
বাংলাদেশ ক্রিকেটে আজ যেন আশার প্রদীপ টিমটিম করে জ্বলছে। ভক্ত-সমর্থকরা হারাচ্ছেন আস্থা, হারিয়ে ফেলছেন বিশ্বাস, আর হারাবেন না-ই বা কেন? একের পর এক হার আর ভঙ্গুর পারফরম্যান্সের গল্প এখন আর অজানা নয়। জয় খরায় ভুগছে দল, বিশেষ করে নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী ফরম্যাট ওয়ানডেতে তারা যেন পথ হারিয়ে ছুটে চলেছে খাদের কিনারে। এমন এক দুঃসময়ে, কেবল জয়ই পারে দলের প্রতি হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। লঙ্কান মাটিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেটি মেহেদী হাসান মিরাজের দলের সামনে তাই এক অগ্নিপরীক্ষা। এটি শুধু একটি ম্যাচ নয়, এটি নিজেদের সম্মান আর ভক্তদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার এক মরণপণ লড়াই। এই ম্যাচে হারলে শ্রীলঙ্কার মাটিতে আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ হারের তিক্ত স্বাদ পাবে টাইগাররা। দীর্ঘ ২৩ বছরের ইতিহাসে, ৭টি সিরিজ খেলেও শ্রীলঙ্কায় একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো কোনো সিরিজ জিততে পারেনি। ২০০২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ যাত্রায় সাফল্য বলতে মাত্র দুটি ড্র (২০১৩ ও ২০১৭ সালে)। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর মতো অপ্রত্যাশিত ব্যাটিং ধসের পর বাংলাদেশ দল এখন সিরিজ হারের শঙ্কায়। তবে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের কঠিন পরিস্থিতিতেও আশাহত নন তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না আমি ভালো খেলেছি। আমি দলের প্রয়োজন পূরণ করতে পারিনি। যদি তা পূরণ করতে পারতাম, তাহলে বলতাম যে আমি ভালো খেলেছি। তবে ফিরে আসার সুযোগ আছে। এটা তিন ম্যাচের সিরিজ। একটি ম্যাচ শেষ হয়েছে। পরের ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ, আমরা এখনো টুর্নামেন্টে টিকে থাকব।’ প্রথম ম্যাচে হারের কারণ সকলেরই জানা- এক মুহূর্তের ব্যাটিং বিপর্যয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় দলের ব্যাটিং লাইন। এমনটাকে ‘দুর্ভাগ্য’ মনে করছেন তামিম। তানজিদ তামিম বলেন, ‘আমরা একটি ভালো জুটি গড়ছিলাম। দুর্ভাগ্য ছিল, কারণ তারা একটি অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছে, এবং তারপর শান্ত রান-আউট হয়ে গেছে। ওটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। যদি আমরা (শান্ত-তামিম) আরও ৩০-৪০ রান যোগ করতে পারতাম, তাহলে ম্যাচটি অনেক সহজ হয়ে যেত।’ তবে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য তারা পুরোপুরি প্রস্তুত বলেই জানিয়েছেন এই তরুণ ওপেনার। তিনি বলেন, ‘উইকেটের আচরণ যেমন, কেউ যদি সেট হয়, তাকে অবশ্যই লম্বা ইনিংস খেলতে হবে এবং দলকে জিতিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমি এবং শান্ত ভাই, আমরা তখন যেভাবে ব্যাটিং করছিলাম, যদি আরও ১০-১৫ ওভার থাকতে পারতাম, তাহলে ম্যাচটি অনেক সহজ হয়ে যেত। পরের ম্যাচের জন্য শুধু একটি বার্তা- যারা উইকেটে নতুন আসে, তাদের জন্য শুরুতে একটু কঠিন হয়, কিন্তু সেট হওয়া ব্যাটারদের লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে হবে, গভীরে যেতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত খেলাটা নিয়ে যেতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে টানা তিন সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। সবশেষ ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। তবে, ২০২৪-২০২৫ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১, আফগানিস্তানের কাছে ২-১ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছে তারা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে চলমান সিরিজে বাংলাদেশ কি তাদের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়তে পারবে, নাকি পরাজয়ের ধারা বজায় রাখবে- এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ দ্বিতীয় ম্যাচেই। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে দলে বেশ কিছু ইনজুরি দেখা দিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে জ্বরের কারণে মাঠে নামতে পারেননি লেগস্পিন অলরাউন্ডার রিশাদ হোসেন। এছাড়াও সেই ম্যাচে মাংসপেশিতে টান লাগে পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও স্পিনার তানভীর ইসলামের। তবে দলের চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখন সবাই ফিট আছেন এবং কারো দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে কোনো সমস্যা নেই। রিশাদ আজ খেলবেন তা অনেকটাই নিশ্চিত, সেক্ষেত্রে একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন তানভীর। তবে ফিট থাকলেও মোস্তাফিজের খেলার সম্ভাবনা কিছুটা কম বলে অনুমান করা হচ্ছে হয়তো প্রেমাদাসা উইকেট তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামাতে পাারে দল। সেই ক্ষেত্রে তানভীর খেললেও বাদ পড়তে পারেন ফিজ। কারণ প্রথম ম্যাচে স্পিনারের অভাবে বল তুলে দেয়া হয়েছিল পার্টটাইমার নাজমুল হোসে শান্ত হাতে। তিনি চার ওভার বল করেন একটি উইকেটও তুলে নেন।