ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

খেলা

এর মাঝেও মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ঋতুপর্ণার

স্পোর্টস রিপোর্টার
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
mzamin

বুধবার ইয়াঙ্গুনের থুওয়ান্না স্টেডিয়ামে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারিয়ে ২০২৬ এশিয়ান কাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু জায়গা করে নেয়াই নয়, ২০১৮ সালের ৫-০ গোলে হারের বদলাও নিয়েছে মেয়েরা। এটা সম্ভব করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। বাংলাদেশ নারী দলের এই ফুটবলার অবশ্য এখানেই থামতে চান না। যেতে চান বহুদূর। তার আগে ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে সুস্থ করতে চান ঋতুপর্ণা। 
বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমার র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে ৭৩ ধাপ। মুহূর্তের মধ্যে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা। মিয়ানমারের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২টি গোলই তার। দু’টি গোলই দেখার মতো। বাংলাদেশ ফুটবল দলে বেশ কয়েক বছর ধরেই খেলছেন ঋতুপর্ণা। ২০২২ ও ২৪ সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। জাতীয় ফুটবলার হিসেবে তার লক্ষ্য ছিল এশিয়া কাপে খেলা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ইচ্ছে ছিল এশিয়ায় খেলা। লক্ষ্য ছিল এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করা। সেটা পূরণ হয়েছে।’ বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশনে অবদান রয়েছে বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারেরও। মাস পাঁচেক আগে সিনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। সেটা ভুলে এখন অনেকেই বাংলাদেশ দলে খেলছেন। মিয়ানমার বধের পর ঋতুপর্ণাকে এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের লীগে খেলার যোগ্য বলে মন্তব্য করেছিলেন বাটলার। কোচের এই প্রশংসা নিয়ে যথেষ্ট বিনয়ী ঋতুপর্ণা। তিনি বলেন, ‘আমরা একজন ভালো কোচ পেয়েছি। উনি সব সময় ভালো চান। তিনি আমার প্রশংসা করেছেন, জানি না আমি কতটুকু প্রাপ্য।’ সমর্থকরা ফুটবলের প্রাণ। সেই সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আপনারা যেভাবে আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এভাবেই সাপোর্ট দিয়ে যাবেন। আপনাদের সমর্থনে আমরা বাংলাদেশের ফুটবল ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো।’ দুটি সাফজয়ী দলের সদস্য ঋতুপর্ণা। প্রথমবার আলো ছিল সাবিনা খাতুনের ওপর। ঠিক দুই বছর পর কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ যখন সাফ শিরোপা ধরে রাখে, তখন সেই আলোর কেন্দ্রে ঋতুপর্ণা। সাফের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি যেন তার বাঁ পায়ের শিল্পকেই স্বীকৃতি দিয়েছে নেপালের রাজধানীতে। গত অক্টোবরে কাঠমান্ডুতে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে ৮১তম মিনিটে তার জয়সূচক গোল গোটা দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছে। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম ভর্তি ২০ হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল সেই গোল। ওই গোলের পর মুখে আঙুল ছুঁইয়ে উদ্‌যাপন করেছিলেন ঋতুপর্ণা। সেই উদ্‌যাপন নিয়ে তিনি বলেন, ‘মনে হয়েছিল আমি গোল করে দর্শকদের চুপ করাতে পেরেছিলাম। এ কারণেই সেদিন ওইরকম ভাবে উদ্‌যাপন করেছিলাম।’ ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ক্যাম্পে সুযোগ পান রাঙ্গামাটির এই মেয়ে। ৮-৯ বছরের মধ্যে সাফল্যের শীর্ষে উঠে যান তিনি। এই শীর্ষে ওঠার পেছনে আছে অনেক কষ্টের গল্প। রাঙামাটির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বাধা জয় করে এগিয়ে চলার গল্প। আর্থিক বাধার দেয়াল টপকানোর গল্প। এর মধ্যেই ২০২২ সালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় ছোট ভাই পার্বণ চাকমা। আগে হারান বাবাকে। বড় তিন বোন বাপ্পি, পাম্পি আর পুতুলির বিয়ে হয়েছে। বাবা নেই, মাও ক্যান্সারে আক্রান্ত। পড়াশোনাতেও পিছিয়ে নেই ঋতুপর্ণা। ২০২৩ সালে খেলোয়াড় কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে ভর্তি হয়েছেন। ঋতুপর্ণার মনে আজ একটাই দুঃখ, তার এই সাফল্য বাবা-ভাই দেখে যেতে পারলো না। তবে নিশ্চয়ই দূর থেকে ঋতুপর্ণার সাফল্য দেখে তারা খুশি হচ্ছেন! ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমি যখন একা থাকি তখন ভাবি আমার বাবা হয়তো আমার সাফল্য দেখছেন আর হাসছেন।’ অসুস্থ মাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন জানিয়ে ঋতু বলেন, ‘আমার মা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমি মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। নিয়মিত ক্যামোথেরাপি দিচ্ছি। এবার দেশে ফিরে মায়ের অপারেশন করাবো। আশা করি মা দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।’ ঋতুপর্ণা বলেন, ‘মিয়ানমারের বিপক্ষে জয়ের পরেই আমি মাকে ফোন দিয়েছি। আমার মা পুরো খেলা দেখেছে। আমাকে বলেছে খেলা দেখে তার অসুস্থতা নাকি দূর হয়ে গেছে। তিনি ভালো হয়ে গেছেন। সত্যিই আমি মাকে ভালো করতে চাই। এটাই আমার এই মুহূর্তে একমাত্র লক্ষ্য।’

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

খেলা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status