অনলাইন
সহযোগীদের খবর
কোটা প্রথার সেই পুরনো পথেই
অনলাইন ডেস্ক
(১৪ ঘন্টা আগে) ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:৫৩ অপরাহ্ন

বণিক বার্তা
‘কোটা প্রথার সেই পুরনো পথেই’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সংস্থাপন (বর্তমানে জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের সচিবের এক নির্বাহী আদেশে তা কার্যকর হয়। এর আগে খসড়া সংবিধানের ২৯-এর ৩ (ক) উপধারায় ‘নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না’ বলে বিধান রাখা হয়। একই বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এ সংবিধান গৃহীত এবং ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে দেয়া এ বিশেষ সুবিধা পরবর্তী পাঁচ দশকে তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নিলে ৫ আগস্ট পতন ঘটে তৎকালীন সরকারের। অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর কোটা আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী ও শহীদদের স্বজনদের অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সর্বশেষ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের চাকরিতে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। সুবিধা দেয়ার এ নীতিকে পুরনো কোটা ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের নেতা বর্তমানে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রত্যেকটা সফল আন্দোলন-সংগ্রামের পর বিজয়ীরা নিজেদের বেনেফিশিয়ারি গ্রুপ তৈরি করতে চায়। শেখ মুজিব মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালুর মাধ্যমে যেটা করেছিলেন। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর তেমন কিছু ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু যে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবন থেকে আন্দোলন করেছি, জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি, সে কোটা আর কখনই ফিরে না আসুক। তবে অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ভাই-বোনদের এককালীন বা মাসিক ভাতাসহ চাহিদামাফিক বিভিন্নভাবে পুনর্বাসন করা যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের চাহিদামাফিক সহযোগিতার মাধ্যমে অবশ্যই রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়ানো দরকার। কিন্তু কোনোভাবেই চাকরিতে কোটা বা বিশেষ সুবিধা দিয়ে নয়।’
গত ২৪ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রত্যেক জুলাই শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে অর্থাৎ আগামী জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। তাছাড়া শহীদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে ভাতা দেয়া হবে। শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি ও আধাসরকারি চাকরিতে।’
এ বিষয়ে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গতকাল রাতে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এটা ওইভাবে দেখার বিষয় না। চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেয়া কোনো কোটা ব্যবস্থা নয়। যদি চাকরির জন্য যোগ্য হয়, তাহলেই তাদের পুনর্বাসন করা হবে। ধরুন স্ত্রী রেখে একজন শহীদ হয়েছেন। তার বিধবা স্ত্রী যাবেন কোথায়? উনার মতো ক্ষতিগ্রস্তদের কথা ভাবা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে রকম কোটা ছিল, এটা সে রকম কোনো কোটা ব্যবস্থা না।’
উপমহাদেশে কোটা ব্যবস্থার ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রাচীন ভারতে পুরোহিত, যোদ্ধা, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জন্য পৃথক কোটা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। তবে ১৯০২ সালে মহারাষ্ট্রের কোলাপুর রাজ্যের মহারাজা ছত্রপতি সাহু প্রথমবারের মতো অ-ব্রাহ্মণদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেন। ব্রিটিশ-ভারতে সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের জন্য ১৯১৮ সালে আলাদা কোটার ব্যবস্থা করা হয়। অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে সিভিল সার্ভিসে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ ও যুদ্ধাহত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ জেলা কোটা চালু করা হয়। সে সময় মেধা কোটা রাখা হয়েছিল মাত্র ২০ শতাংশ। ১৯৭৬ সালে মেধা কোটা ২০ শতাংশ বাড়িয়ে বরাদ্দ হয় ৪০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আগের মতোই ৩০ শতাংশ রাখা হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ শতাংশ, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয়। সে বারও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। তবে প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা চালু করা হয়।
১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য তা বরাদ্দের আদেশ জারি করে। তবে ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০ শতাংশে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকার প্রার্থী থেকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে। যদিও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এ নির্দেশনা বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ করা সম্ভব না হলে পদ খালি রাখার নির্দেশ দেয়। পরে ২০১১ সালে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদেরও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অন্তর্ভুক্ত করে। আর ২০১২ সালে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটার বিন্যাস ছিল—মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান ছিল ৪৫ শতাংশ। তবে ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান চালু করা হয়।
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটার পরিমাণ বেশি থাকায় বরাবরই সাধারণ শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ থাকলেও ২০১৮ সালে তা বড় আকার ধারণ করে। তুমুল জনবিস্ফোরণের মুখে ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে সব ধরনের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বছরের অক্টোবরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদগুলোয় কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা থেকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
এদিকে, কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন আগের মতোই কোটা বহালের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। এর প্রতিবাদে ১ জুলাই থেকে কোটা বাতিলের আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ের প্রবল আন্দোলনের চাপে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মোট ৭ শতাংশ কোটা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে’ এ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হলে সরকারের পতন হয়। কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তী সরকার সেই ৭ শতাংশ কোটাই বহাল রাখে। সেই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের পাশাপাশি অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। যদিও সমালোচনার মুখে সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
সে সময় এ সিদ্ধান্তকে অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের অনানুষ্ঠানিক কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছাত্র কোটায় উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে বলা হয় তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখলাম যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল সব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম, সেখান থেকে সব ছাত্র সংগঠনের পদধারী নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চালু করা হয় সমন্বয়ক কোটা। এরপর আরেকটি কোটা চালু করা হয়, সেটি হলো বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে ছাত্র প্রতিনিধি কোটা। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কোটা চালু করেছে এবং করার চেষ্টা করছে, যা জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।’
এদিকে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য বিশেষ সুবিধার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। গত মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তিতে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গেজেটভুক্ত শহীদ এবং তালিকাভুক্ত আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলছে। শুধু তা-ই নয়, নাতি-নাতনিদের কোটা নিয়ে মন্তব্য করার জন্য শেখ হাসিনাকে যে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছিল, ঠিক এবার নাতি-নাতনিদের ভর্তি সুবিধা না দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, জুলাই শহীদের পরিবারের সদস্য হিসেবে স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে বিশেষ সুবিধা পাবেন। স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে না থাকলে শহীদ ও আহতদের ভাই-বোন এ সুবিধা পাবেন। যদিও সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, বিশেষ এ সুবিধা কোটায় নয়, বরং আর্থিক সুবিধায় সীমাবদ্ধ থাকবে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পোষ্য কোটা বিদ্যমান। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে পোষ্য কোটাসহ ১১ ধরনের কোটার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এগুলো হলো প্রতিবন্ধী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেলোয়াড়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, অ-উপজাতি (পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালি), বিদেশী শিক্ষার্থী, দলিত, চা-শ্রমিক, বিকেএসপি (বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ও উপাচার্য কোটা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মতো প্রকৃতপক্ষে অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোটা সুবিধা থাকা দরকার। কেননা, সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতেই কোটা ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর শুধু কোটাতে ভর করে না থেকে বৈষম্য দূরীকরণে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা উচিত। রাষ্ট্রীয় নীতি এমন হওয়া উচিত যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসে। তাহলে আর কোটার প্রয়োজন হবে না।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা রাখার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি সারা জীবন যেখানে শ্রম দেন সেখানে নিজের সন্তানকে পড়াতে না পারা আক্ষেপের। তাই অন্তত সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা রাখা যেতে পারে। তবে অবশ্যই ওই শিক্ষার্থীর ভর্তির মৌলিক যোগ্যতা থাকতে হবে।’
২০২৪ সালের ১ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে। এ সময় শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে ছিল ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিয়ে কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যূনতম কোটা রাখা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করা। যদিও ৫ আগস্টের পরও সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা বহাল রয়েছে।
বিদ্যমান এ কোটা শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্দোলন শুরুর আগে জরিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে মতামত জানতে চাই। ছাত্রদের দাবি ছিল কোটা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ রাখা। এর বেশি কোনোভাবেই না; কম হলে ভালো হয়। তবে আন্দোলন চলাকালে সরকার ৭ শতাংশ কোটার ঘোষণা দেয়ার পর নেগাসিয়েট করে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু আবু সাঈদসহ শতাধিক সহযোদ্ধা শহীদ হওয়ার পর আলোচনার আর সুযোগ ছিল না। তবে ৭ শতাংশ কোটা ছাত্রদের চাওয়ার সঙ্গে খুব বেশি সাংঘর্ষিক নয়। তবুও ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনলে ভালো হয়।’ বিষয়টি সরকারকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি।
প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘রাজনীতি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুনোখুনি’। খবরে বলা হয়, নরসিংদীতে খুনোখুনি থামছে না। জেলার একই পরিবারের চারজন সদস্য খুন হয়েছেন প্রতিপক্ষের হাতে। প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে ১৯৭২ সালে, সর্বশেষটি ২০২৩ সালে। পাঁচ দশকের ব্যবধানে ঘটা এসব খুনের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জের। এর পাশাপাশি জমিজমা নিয়ে বিরোধ, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, পারিবারিক কলহসহ নানা তুচ্ছ কারণেও ঘটছে খুনোখুনি। পুলিশের হিসাবে, গত ২০ বছরে এ জেলায় খুন হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ।
যে পরিবারটি তাদের চার সদস্যকে হারিয়েছে, সেটি শিবপুর উপজেলার খান পরিবার। ২০২৩ সালে খুন হন ওই পরিবারের সদস্য হারুনুর রশিদ খান, তিনি তখন শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে পরিবারটির কোনো সদস্য প্রথম খুন হন। তাঁর নাম মোক্তার খান, যিনি হারুনুর রশিদের চাচাতো ভাই। আশির দশকের মাঝামাঝিতে হারুনুর রশিদের আরও দুই চাচাতো ভাই সাজু খান ও সাবেক সংসদ সদস্য রবিউল আউয়াল খানকে (কিরণ) হত্যা করা হয়। এর মধ্যে সাজু খান ছিলেন দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁকে হত্যা করা হয় ১৯৮৫ সালে। পরের বছর হত্যা করা হয় রবিউল আউয়াল খানকে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, চারজনই খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে। যদিও খান পরিবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরিবারটির তিন সদস্যের সঙ্গে প্রথম আলোর আলাদাভাবে কথা হয়। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক কোন্দল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাঁদের পরিবারকে বারবার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁরা এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি বলে জানান।
যুগান্তর
‘প্রক্সি ভোটের বিপক্ষে বিএনপি জামায়াত ও এনসিপি’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে ‘প্রক্সি ভোটিং’ পদ্ধতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির সুপারিশ করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট-এ দুই পদ্ধতির পক্ষে তাদের মত জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পদ্ধতির বিষয়ে ২৪টি রাজনৈতিক দল মতামত দিয়েছে।
‘অনলাইন’, ‘পোস্টাল’ ও ‘প্রক্সি’-এই তিন পদ্ধতির মধ্যে মাত্র ৮টি রাজনৈতিক দল প্রক্সি ভোটিংয়ের পক্ষে মত দিয়েছে। অনলাইন পদ্ধতির পক্ষে ১৮টি এবং পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির পক্ষে ১৫টি দল তাদের সমর্থন থাকার কথা জানিয়েছে। একই দল একাধিক পদ্ধতির পক্ষে সুপারিশ করেছে। যদিও ইসি ‘প্রক্সি ভোটিং’ পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে মতামত চেয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জানিয়েছে। তাদের মতামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে, ইসি সচিবালয় সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
কালের কণ্ঠ
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ‘শান্তি সূচকে পেছানোর বড় কারণ অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা’। খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) এ বছরের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই) বা শান্তি সূচক প্রকাশ করেছে। এ সূচকে গতবারের চেয়ে ৩৩ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১২৩তম, যা রীতিমতো উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও লুটপাট, সামাজিক অস্থিরতা, নাগরিক অসন্তোষ, মব সন্ত্রাস এবং বিশ্বের অনেক দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি এই অশান্তির জন্য দায়ী। এ অবস্থায় শান্তি নিশ্চিত করতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
আইইপির তথ্য মতে, ২০২৩ সালে কিছুটা উন্নতি হলেও ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্কোর ১৩.২ শতাংশ কমে যায়। এর প্রধান কারণ দেশে ব্যাপক নাগরিক অসন্তোষ, যা পরবর্তী সময়ে প্রাণঘাতী সহিংসতায় রূপ নেয়। ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটে এবং তিনি দেশত্যাগ করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি।
বরং বিশ্বজুড়ে অশান্তির মধ্যে বাংলাদেশেও উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনায় এই উদ্বেগ আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বৈশ্বিক শান্তি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩ ধাপ পিছিয়ে যাওয়া, নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। বিষয়টি উদ্বেগের।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বৈশ্বিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইপি যেহেতু মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা, সামরিক উত্তেজনা ইত্যাদি বিবেচনায় এই রেটিং করে থাকে, ফলে এই রেটিং থেকে বাংলাদেশের ইমেজ (ভাবমূর্তি) সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা যাবে। একই সঙ্গে শান্তি সূচকের মানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই অবনতির দায় কার, সেই প্রশ্নও সামনে আসবে। বাংলাদেশে চলমান মব সন্ত্রাস, আইনের শাসনের অবনতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি, শান্তি সূচকের এই অবনতির কারণ হতে পারে; যা সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সমকাল
‘সরকার বলছে সম্ভাবনা, দলগুলোর সন্দেহ’-এটি দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে চালু থাকা চারটি কনটেইনার টার্মিনালের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এই টার্মিনালেই গত বছর বন্দরের মোট কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ ওঠানামা হয়েছে এককভাবে। একসঙ্গে এতে চারটি সমুদ্রগামী কনটেইনার জাহাজ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচল উপযোগী একটি ছোট জাহাজ নোঙর করা যায়। বন্দরের অন্য কোনো টার্মিনালে নেই এত সুবিধা।
জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামার জন্য এ টার্মিনালে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যধুনিক যন্ত্র ‘গ্যান্ট্রি ক্রেন’ রয়েছে ১৪টি। অন্যান্য টার্মিনালে এ সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। বছরে ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানামার সক্ষমতা থাকা এই টার্মিনাল গত বছরও হ্যান্ডল করেছে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার। এই টার্মিনাল থেকে প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্বও পাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
‘সোনার হরিণ’ হিসেবে পরিচিত এই টার্মিনাল ঘিরেই এসেছে বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব। এনসিটি ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করতে সরকারের পরিকল্পনায় পক্ষে-বিপক্ষে সরব হয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীসহ বিভিন্ন মহল। বিদেশি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা দেখছে সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এতে পাচ্ছে ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’।
বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করার উদ্যোগের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেছে বিভিন্ন বাম ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল-সংগঠন। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আগামী সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর গেটে বৃহত্তর শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
ইত্তেফাক
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ‘গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি, মশার বংশ বিস্তারও ব্যাপক’। খবরে বলা হয়, শহর থেকে গ্রামে এখন ব্যাপক হারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এডিস মশা দুই ধরনের। কামড়ালে ডেঙ্গু হয়। একটা হলো এডিস এলবোপিকটাস। এটাকে জঙ্গলের মশা বলা হয়। আরেকটি হলো এডিস ইজিপটাই। শহরাঞ্চলে এ মশার প্রকোপ বেশি। তার পরও মশা মারার কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো না। বিশেষ করে মশক নিধন কার্যক্রম গ্রামাঞ্চলে চোখেই পড়ে না।
সম্প্রতি বরগুনায় একটা জরিপ করে আইইডিসিআর। মশার ঘনত্বের ওপরে পরীক্ষা করে জরিপে উঠে এসেছে, বরগুনা পৌরসভায় এডিস এলবোপিকটাস মশার ঘনত্ব ৪৭.১০। ঐ জেলার সদর উপজেলায় সূচকের মান ১৬৩.৪। তার মানে শহর থেকে একটু গ্রামে ভয়ংকর অবস্থা মশার বংশ বিস্তারে। সাধারণত সূচকের মান ২০ হলেই ধরা হয় মশার ভয়াবহ অবস্থা।
এদিকে সারা দেশে ডেঙ্গু নিয়ে সরকারি যে হিসাব, সেটা দেওয়া হয় সরকারি হাসপাতালের তথ্যের ভিত্তিতে। একাধিক সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এটা স্বীকার করেছেন। বেসরকারি হাসপাতালে কতজন ভর্তি হচ্ছে তার হিসাব নেই। তাদের মতে, গ্রামাঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার শহরের চেয়ে অনেক বেশি। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি পৌরসভা ও আশপাশ এলাকায় এ পর্যন্ত আট জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছে কয়েক শ। প্রথমে মানুষ বুঝতে পারেনি কীভাবে মারা গেছে। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায় মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু। এখানে ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর।
আজকের পত্রিকা
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘বিএনপির নজর নির্বাচনে, পা ফেলছে সাবধানে’। খবরে বলা হয়, লন্ডন বৈঠকের পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আপাতত কোনো সংশয় দেখছে না বিএনপি। দলটির বিশ্বাস, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কথা রাখবেন এবং যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন। তারপরও রাজনীতির মাঠে সব ইস্যুতে সাবধানে পা ফেলছে বিএনপি। পরিবর্তিত সময় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চায় দলটি।
দলীয় সূত্র বলছে, ১৬ বছর পর ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা দেখছে বিএনপি। তবে এ জন্য দরকার দ্রুত একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ যাতে কোনোভাবে হাতছাড়া না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা ও যত্ন নিয়ে নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে ইশতেহার রচনা, প্রচারসহ সব ক্ষেত্রেই সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নিতে চান তাঁরা। এর অংশ হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে নাকি জোটগতভাবে নির্বাচন করবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতে পারে, এমনটা ধরে নিয়েই নির্বাচনী যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ জন্য যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নতুন করে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কথা বলা হচ্ছে। তবে সেটা কোন কাঠামোতে হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। বিএনপির সঙ্গে বিগত দিনে যুগপৎ আন্দোলন করেছে এমন দলগুলোকে নিয়ে জোট হবে, নাকি তাদের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
লন্ডন বৈঠকের আভাস অনুযায়ী যথাসময়েই জাতীয় নির্বাচন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি যেটা চলছে, এটা চলবে। প্রস্তুতি সব সময়ই চলমান।’
দেশ রূপান্তর
‘কৌশলের গ্যাঁড়াকলে নির্বাচন’-এটি দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক রক্ষা করে এগিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। দলটি যখন নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার তখন অন্তর্বর্তী সরকার নিজস্ব গতিতে এবং নীতিতে পথ চলতে চাচ্ছে; তারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া যথেষ্ট মাত্রায় এগিয়ে নিতে চায়। সংস্কারে ও বিচারে বিএনপিরও আপত্তি নেই। এ ব্যাপারে দুপক্ষের পার্থক্যটা হচ্ছে মাত্রাগত। দৃশ্যত ভোট কিছুটা কৌশলের গ্যাঁড়াকলে পড়েছে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদায় করে নিতে চায় বিএনপি; যদিও সরকার বলেছে, কিছু প্রস্তুতির সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন আদায় করা ও নির্বাচন অনুষ্ঠান করার মধ্যবর্তী ফারাক ঘোচানোর রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও যাতে জোরালোভাবে নির্বাচনের দাবি ওঠে সে কৌশলও রয়েছে বিএনপির। এর অংশ হিসেবেই জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ছোট ছোট দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে এবং তাদের আবদারে সায় দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
জানা গেছে, নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার বিএনপিকে শান্ত রাখার নীতি গ্রহণ করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার সংস্কার ও আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার বিচার সম্পন্ন করতে চায়। এ কাজে বিএনপি বাধা হতে চায় না; আবার বিচার করতে গিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে যাক সেটাও তারা চায় না। বিএনপি বলছে, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বলে আপাত বোঝাপড়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান শিরোনাম ‘আতঙ্কে তিন নির্বাচনের কুশলীরা’। খবরে বলা হয়, আতঙ্কে বিতর্কিত বিগত তিন সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার গ্রেপ্তারের পর অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিরা আতঙ্কে রয়েছেন। এ ছাড়া তিন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ইসির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, উপসচিব ও সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা; সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও আতঙ্কে রয়েছেন।
ইতোমধ্যে বিগত তিন নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে সরকার উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। এমনকি এ আতঙ্ক পৌঁছে গেছে তৃণমূলের ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা তথা প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্কুল শিক্ষক পর্যন্ত। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা এসআই, এএসআই ও পুলিশ সদস্যরাও চিন্তায় রয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তারও হতে পারেন। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের নজরদারিতে রেখেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিতর্কিত তিন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সবাই ভালো পারফরম্যান্সের কারণে প্রমোশন ও প্রাইজ পোস্টিংও পেয়েছেন।
এদিকে ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসিতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ। সচিব ছিলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক।