ঢাকা, ২৯ জুন ২০২৫, রবিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

আর জি কর মেডিকেল কলেজের পর এবার কলকাতার আইন কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৪

সেবন্তী ভট্টাচার্য্য, কলকাতা

(৬ ঘন্টা আগে) ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:০১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ কলকাতার একটি ল কলেজে গত বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগকারিণী ওই কলেজেরই ছাত্রী। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি সেখানে গেলে তাঁর উপর চড়াও হন তিনজন। গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। কাউকে কিছু না বলতে হুমকিও দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রী দক্ষিণ কলকাতার কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেন পুলিশ আধিকারিকরা। প্রথমে দু’জনকে পাকড়াও করে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। তাঁদের থেকেই মূল অভিযুক্তের খোঁজ পাওয়া যায়। কালবিলম্ব না করে মূল অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে কলকাতারই একটি সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু কীভাবে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা কলেজের মধ্যে হতে পারে? কলেজের নিরাপত্তারক্ষীরা কোথায় ছিলেন? তাঁদের ভূমিকা কী ছিল? সেই সময় অন্য কেউ কলেজে কি ছিল? একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

ধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি নির্যাতিতার। তিনি নিজেও টিএমসিপির সদস্য ছিলেন। নির্যাতিতা অভিযোগপত্রে মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন ‘জে’ নামে। এ ছাড়া ‘এম’ এবং ‘পি’ নামের দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিতা জানিয়েছেন, প্রথমে ইউনিয়ন রুমের ভিতর তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করা হয়। পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন ‘জে’। বাইরে পাহারায় ছিলেন বাকি দু’জন। কলেজের মেইন গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রীকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। রক্ষীর কাছে তিনি সাহায্য চেয়েও পাননি। 

নির্যাতিতা অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে রক্ষী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন ‘অসহায় সাক্ষী’। তাই নির্যাতিতাকে কোনও সাহায্য করতে পারেননি। এমনকি, রক্ষীর ঘরে (গার্ডরুমে) নিয়ে গিয়েই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। সে সময়ে ঘরের বাইরে রক্ষীকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে পুলিশ ওই নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি ছিল। ইতিমধ্যেই কসবা কাণ্ডের তদন্তে সিট (বিশেষ তদন্তকারী টিম) গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। চার সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অ্যাসিট্যান্ট কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি)। ইতিমধ্যে নির্যাতিতা ও তাঁর বাবা-মার গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় আমরা হতবাক। কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালকে জেনারেল বডি মিটিং ডাকতে বলেছি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও গাফিলতি থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” 

তিনি আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিচার পাইয়ে দিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। জাতীয় মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টিতে রাজনীতির রঙও লেগেছে। ল কলেজের ঘটনার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। শনিবার কসবা থানার সামনে কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে, পথে নেমেছে বিজেপিও। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন। শুক্রবার বিকেলেই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে ধৃতের পরিচয় স্পষ্ট করে দেন টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। স্পষ্ট জানান, যে কলেজের ঘটনা, সেই কলেজে টিএমপিসির রানিং ইউনিটই নেই। তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যর বক্তব্য, ”আমি দায়িত্ব সহকারে বলছি, যে কলেজে এই ঘটনা ঘটেছে, ওই কলেজে ছাত্র পরিষদের কোনও রানিং ইউনিট নেই। তাই ইউনিট প্রেসিডেন্টও ছিল না। তবে ওই অভিযুক্ত যখন ছাত্র ছিল, তখন ছাত্র সংগঠনে তার একটা ছোট্ট পদ ছিল। সেটা অবশ্য টিএমসিপির ব্যর্থতা, তা মেনে নিচ্ছি।' টিএমসিপি রাজ্য সভাপতির বক্তব্য, ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিকারের চেয়ে  তৃণমূল এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে কলুষিত করার চেষ্টা চলছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status