শেষের পাতা
মুশফিক শান্ত’র কাঁধে বাংলাদেশ
স্পোর্টস রিপোর্টার, (গল) শ্রীলঙ্কা থেকে
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
পড়ন্ত বিকাল-গলফোর্টের লাইটহাউসে তখন আলো জ্বালার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু তার আগে গলের মাঠে বাংলাদেশের লাইটহাউস হয়ে আরও একবার পথ দেখালেন মুশফিকুর রহীম। শেষ বিকালে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। তার আগে দলের বিপর্যয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে পথ দেখিয়েছেন। তার অনুপ্রেরণায় শান্ত তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। দিন শেষে দু’জনই অপরাজিত আছেন। ক্রিকেটে পথ হারানোর বালাদেশকে যেন তারা দু’জন কাঁধে তুলে নিয়েছেন নতুন দিশা দেখাতে। শান্ত ১৩৬ আর মুশফিক ১০৫ রান নিয়ে গল টেস্টে আজ দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন। গতকাল যখন ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় সতীর্থরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানাচ্ছিলেন। কেন জানাবেন না! প্রথমদিন শেষে তাদের ব্যাটে চড়েই তো ৯০ ওভারে ২৯২ রান। অথচ দিনের শুরুতেই মাত্র ৪৫ রানে তিন উইকেট হারিয়েছিল দল। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে হোঁচট খাওয়া দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি দলের দুই অভিভাবক। এই টেস্টের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত যাই থাকুক মুশফিক চান নিজেদের অবদানটা আরও রাখতে। তিনি বলেন, ‘এখনই এই টেস্টের ভাগ্যে কী আছে তা বলা তাড়াহুড়া হয়ে যাবে। সম্প্রতি সব দিক থেকেই আমাদের কঠিন সময় যাচ্ছিল। বাংলাদেশ দলের যতটা যোগ্যতা বা দক্ষতা আছে সেই অনুযায়ী খেলতে পারছিল না। এটা আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ ছিল যে, কন্ডিশনই হোক আমরা যেন একটা ভালো শুরু করতে পারি। কালকেও (আজ) আমাদের চিন্তা থাকবে তিনটা সেশনের মধ্যে দুটি খেলতে পারি তাহলে ইনিংসটা আরও বড় হবে।’
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের প্রথম ম্যাচ এটি। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে সকালের সেশনে ৪৫ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলকে কাঁধে তুলে নিয়ে টানতে শুরু করেন মুশফিক ও শান্ত। দু’জনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ২৪৭ রান। চতুর্থ উইকেটে যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। দিন শেষে ২৬০ বলে ১৩৬ রানে অপরাজিত শান্ত, ১৮৬ বলে ১০৫ রানে মুশফিক। গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ওপেনার এনামুল হক আউট হন ১০ বলে শূন্য রান করে। জ্বরের কারণে দলের অলরাউন্ডার ও ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ একাদশে জায়গা পাননি। তাই একাদশের পরিকল্পনাতেও আনতে হয় পরিবর্তন। ব্যাটিং অপশন বাড়াতে বিজয়কে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়। যদিও মিরাজ খেললে হয়তো তার পরিবর্তে ওপেন করতে দেখা যেত শান্তকে। সুযোগটা লুফে নিতে পারেননি বিজয়। শুরুতেই দলকে হতাশ করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক সৌরভ যোগ করেন ৩৪ রান। কিন্তু লঙ্কানদের অভিষিক্ত স্পিনার থারিন্ডু রাত্নায়াকে পরপর দুই ওভারে ফেরান দু’জনকে। দু’জনই স্লিপে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি. সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন। সাদমান ১৪ ও মুমিনুলের অবদান ২৯ রানের। গলের ব্যাটিং উইকেটে তাদের এমন বিদায় দলকে ঠেলে দেয় বড় বিপদে।
তবে কথা রেখেছেন অধিনায়ক শান্ত। ম্যাচের আগে বলেছিলেন যেভাবেই হোক আমাদের ভালো খেলতে হবে। বিপদে নিজে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে জান। মুশফিকের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে তোলেন। সারা দিনে আর উইকেট পড়তে দেননি দু’জন। শান্ত সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে খেলেন ২০২ বল। ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ২০ ইনিংস পর দেখা পান জাদুকরী তিন অংকের। ব্যাটিংয়ের সময় শান্তকে পথ দেখান মুশফিক। ১২ বছর আগে তিনিও এখানে অধিনায়ক হিসেবে দেশের জন্য প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই শান্তকে তিনি বলেন, ‘আমার মনে আছে ২০১৩তে আমি আর আশরাফুল ভাই সারা দিন ব্যাট করেছিলাম। এবারও আমি শান্তকে বলেছি যে, স্কোর বোর্ডে কত রান এলো সেটি বিষয় না আমাদের সারা দিন ব্যাট করতে হবে।’ শান্তও তার সেই পরামর্শেই সাফল্যের দেখা পান। ৩৬ টেস্টে এটি তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি এটি। এই ইনিংসের পথে ২ হাজার টেস্ট রানও পেরিয়ে যান টাইগার অধিনায়ক। অন্যদিকে ৯৭ টেস্ট খেলা মুশফিক ১৭৬ বলে নিজের দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান। তার সবশেষ শতরানের ইনিংসটি ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে। অবশ্য পরের ১৩ ইনিংসে একবারও ফিফটিরও দেখা পাননি। গুঞ্জন ছিল হয়তো নিজের শততম টেস্ট খেলার আগেই দল থেকে বাদ পড়বেন কিংবা অবসর নিবেন। কিন্তু দলের এই অভিজ্ঞ ব্যাটার ব্যাট হাতেই জানিয়ে দিলেন তিনি শেষ হয়ে যাননি। নিজের প্রিয় মাঠে দলকে আরও একবার পথও দেখালেন তিনি।