ঢাকা, ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দু’টি বিষয়ে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকে ২টি বিষয়ে একমত পোষণ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়  প্রথম পর্বের বৈঠকে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি সেসকল বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের ওপর আলোচনা করা হয় এবং সেগুলোর মধ্যে দু’টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। তবে গতকালকের বৈঠকে অংশ নেয়নি জামায়াতে ইসলামী।  
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় আগামী জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করা হবে। মঙ্গলবারের  আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো দু’টি বিষয়ে একমত হয়েছে- আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন এবং সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোর সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে আসনের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে সব দলই একমত পোষণ করেছে। তবে এই আসনগুলোর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। আলী রীয়াজ আরও জানান, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে। বৈঠকে জামায়াতের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে আগামীকাল (বুধবার) থেকে তারা বৈঠকে অংশ নিবেন।  
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো দু’টি বিষয়ে একমত হয়েছে।  আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন, এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে প্রায় সব দলই একমত পোষণ করেছে। তবে এই আসনগুলোর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা। তিনি আরও বলেন, সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোর (যেমন পাবলিক একাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি)সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে আসনের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে বলেও সবাই একমত হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়ে বিএনপি একমত দিয়েছে তবে উচ্চ কক্ষের আসন সংখ্যা ১০০ করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। এ বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত দিয়েছে তবে এর নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার সংরক্ষণ রেখে, নির্দিষ্ট কিছু যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনার বিষয়েও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিএনপি’র প্রস্তাবের মিলের অভিযোগ এনসিপি’র: এ দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব অভিযোগ করে বলেন, লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক প্রসঙ্গে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের তারিখ ও সংস্কার ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি’র প্রস্তাবের মিল রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন পরবর্তী সংসদই সংস্কার কার্যক্রম করবে। এই বক্তব্য বিএনপি’র প্রস্তাবের সঙ্গে মিলে গেছে, যা পক্ষপাতদুষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী প্রায় সব রাজনৈতিক দল দু’টি বিষয়ে একমত হয়েছে। প্রথমত, আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন এবং দ্বিতীয়ত, সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে আসনের আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে বলে সবাই একমত হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবও অধিকাংশ দলের সমর্থন পেয়েছে।

এনসিপি নেতা আরও বলেন, আমরা ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দল নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এখনো পরিষ্কার নয়। কমিশন কোন কাঠামো অনুসরণ করে অগ্রসর হচ্ছে, এবং কোন কোন বিষয় আলোচনায় আসছে, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। আরিফুল ইসলাম আদীব অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,  জুলাই আন্দোলনে সাধারণত জনগণ ও ছাত্রসমাজের বড় অংশগ্রহণ ছিল, অথচ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় তাদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এতে প্রক্রিয়াটি জনগণনির্ভর না হয়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলনির্ভর হয়ে পড়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান জানান, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের বড় শক্তি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি না থাকায় আমরা কমিশনের কাছে প্রশ্ন তুলেছি। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় ২টি বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর একমত পোষণ করেছে। এরমধ্যে রয়েছে, আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবে এবং সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোর (যেমন পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি) সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে আসনের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত করা। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ইস্যুতে তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ফ্যাসিবাদি শক্তি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে নারী আসনের সম্পর্ক নেই। বিগত সময়ে বাংলাদেশে নারী দেশ শাসন করেছে এরপরেও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন এর জন্য আমরা প্রস্তাব জানিয়েছি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বৈঠকে সকল দল ২টি বিষয়ে একমত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবে এবং সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে থেকে আসনের আনুপাতিক হারে নির্বাচিত করা। এ ছাড়া সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সংখ্যা ১০০তে উন্নীত করার ক্ষেত্রে সকল দল একমত পোষণ করেছে যদিও নির্বাচন পদ্ধতি চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংসদের নিম্ন কক্ষের নাম জাতীয় সংসদ এবং উচ্চ কক্ষের নাম জাতীয় পরিষদ রাখার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখবে বলে জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, বৈঠকে অর্থ বিল ও আস্থা ভোটে ছাড়া অন্যান্য সকল বিষয়ে সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট প্রদানের বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি। সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে নিয়োগের বিষয়ে সকল দল একমত পোষণ করেছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসন ১০০তে উন্নীত করতে সকল দল একমত হয়েছে। তবে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও জানান, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দল নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গণভোটের মাধ্যমে এ সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। নির্বাচন কবে হবে তা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে। 

বৈঠকে বিএনপি, সিপিবি, বাসদ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), জাসদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণফোরামের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status