রাজনৈতিক কারণে আমাকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ করানোর আন্দোলন চলছে মাস খানেক ধরে। নগর ভবনে ঝুলছে তালা। নগর ভবনে গতকাল ইশরাক সমর্থকদের চলমান অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে দুপুর ১টায় সংবাদ সম্মেলন করেন ইশরাক হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মশক নিধন, ডেঙ্গু নিরাময়সহ কয়েকটি সেবা কার্যক্রমের পরিকল্পনার কথা জানান- সংবাদ সম্মেলনে। এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র হিসেবে তাকে শপথ না পড়ানোর বিষয়টি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেন। তাছাড়া ডিএসসিসি প্রশাসককে অবৈধ বলেও মন্তব্য করেন ইশরাক। তিনি বলেন, আমার এই বিষয় (শপথ পাঠ) সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটা সিদ্ধান্ত ছিল। রাজনৈতিকভাবে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাকে বা বিএনপি’র প্রার্থীকে এখানে বসতে দেয়া হবে না। এখানে তারা তাদের পছন্দের প্রশাসককে বসাবে এবং সেই প্রশাসককে বসানোর মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবে। এটি তাদের উদ্দেশ্য ছিল।

ইশরাক বলেন, আমি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে উচ্চ আদালতের রায় পেলেও সরকার প্যারালাল প্রশাসন চালাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যখন মেয়রের  গেজেট চ্যালেঞ্জ করে করা রিটটি খারিজ করেন, সেই মুহূর্ত থেকে ডিএসসিসি’র প্রশাসক অবৈধ হয়ে গেছেন। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি এবং আইন এবং আদালতের মাধ্যমে আমার যে বর্তমান অবস্থান সেটাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে অবৈধভাবে তারা প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। তারা এখানে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল।  
জনগণের ভোগান্তি না বাড়িয়ে ও কালক্ষেপণ না করে অতি দ্রুত তাকে মেয়র হিসেবে শপথ পাঠ করানোর আহ্বান জানান- ইশরাক।

তিনি বলেন, সরকার যেন আর জনদুর্ভোগ না বাড়িয়ে, একটা মিনিটও কালক্ষেপণ না করে আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটির বাস্তবায়ন করে আমাকে যেন মেয়র হিসেবে শপথ করায় এবং অচলাবস্থা যাতে কেটে যায় সেজন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বারবার বলেছি- আমাদের আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানে আসছে এবং তাদের দাবি জানাচ্ছে। সরকার যদি তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চায়, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা যদি দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং সেটি তারা জনগণকে বিশ্বাস করাতে চায় তারা অতিদ্রুত শপথ করানোর আয়োজন যাতে বাস্তবায়ন করে। অন্যথায় এই আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাবো। 
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন- ডিএসসিসিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে রায়, তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সিটির মেয়র হিসেবে আমাকে ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকার আমাকে বসানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাই আমরা গতকাল অবস্থান কর্মসূচি  বিরতিহীনভাবে ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবার বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। আন্দোলন চলার সময় সকল জরুরি সেবা চলমান ছিল। আমরাই সেটা নিশ্চিত করেছি। আমরা বলেছি- আমাদের আন্দোলনের জন্য যাতে জনগণের দুর্ভোগ না বাড়ে।  
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আমরা ঢাকা শহরে মশক নিধন কর্মসূচিকে বেগবান করার জন্য এবং সেটি যাতে চলমান থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য আজকে (সোমবার) থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করছি।  আজকে আমরা ৭০টি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের সঙ্গে বসেছি। তাদের আমরা উৎসাহ দিয়েছি। তাদের আমরা নিশ্চিত করেছি যে, ভবিষ্যতে তাদের সমস্যাগুলো আমরা দেখবো। ইশরাক হোসেন বলেন, আগামীকাল আমাদের ৭০টির বেশি ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। আমরা বলেছি দৈনন্দিন যে সেবা সেগুলো চলবে, কিন্তু আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। সেবাগুলো ওয়ার্ড সচিবদের মাধ্যমে জমা পরিচালনা করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড সচিবের কার্যালয়ে জন্ম-মৃত্যু সার্টিফিকেট, নাগরিক সার্টিফিকেট, ওয়ারিশ সার্টিফিকেটসমূহ ওয়ার্ড সচিবদের মাধ্যমে জমা নেয়া হবে। যাতে আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে পারি। আগামী পরশুদিন স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তার সঙ্গে আমরা বৈঠক করবো। যাতে ডেঙ্গুর বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমরা মনিটরিং টিম  তৈরি করবো।