শেষের পাতা
ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনা
বাড়ছে রোগী শয্যা সংকট
বরগুনা প্রতিনিধি
১৬ জুন ২০২৫, সোমবার
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৯৩ জন। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ফলে অনেককে ঠাঁই নিতে হচ্ছে হাসপাতালের বারান্দাসহ মেঝেতে। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসকসহ জনবল পদায়ন ও ওষুধ সরবরাহ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বরগুনাকে ডেঙ্গুর নতুন হটস্পট হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জেলার পৌর শহর ও গৌরীচন্না ইউনিয়নকে। জেলা শহরের কাঠপট্টি এলাকার প্রতি ঘরেই ২-৩ জন করে রোগী রয়েছেন। এরমধ্যেই মারা গেছেন ১৩ জন। এলাকাভিত্তিক একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে জেলায় প্রায় ১৬০০ ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ৪১৪ জনই সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের। যার মধ্যে ইউনিয়নের লাকুরতলা গ্রামেরই ১৩৬ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন ১৯৩ জন। আর জানুয়ারি থেকে ১৩ই জুন পর্যন্ত বরগুনায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৩১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ৪৩৮ জন। অন্যদিকে একই সময়ে বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ২৭৫ জন। সে অনুযায়ী বিভাগের মধ্যে শুধু বরগুনা জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৬১ দশমিক ৮০ ভাগ।
গুরুতর রোগীদের অনেককে বরিশাল কিংবা ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। সমপ্রতি কলেজ ব্রাঞ্চ রোড এলাকার পাপড়ি বেগম (৬৫)কে ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান। এর আগে খামারবাড়ির স্কুলছাত্র ওমর আল আরাবি বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। একইভাবে নারী উদ্যোক্তা আজমেরী মোনালিসা জেরিনও ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেন।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা থাকলে নিশ্চিত করে বলা যায় ওই এলাকায় জীবাণুর সংক্রমণ বা বিস্তার ঘটবে। সেখানে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি, লোকজনও বেশি। এজন্য ওই এলাকার মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে ৬ মাস আগে থেকেই সতর্ক করলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এডিস মশা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। ২০২১ সালে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনা পৌর শহরের বর্জ্য শোধনাগার এখনো চালু হয়নি। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। নদী, খালে ময়লা ফেলছে- এর কারণে বেশি করে রোগ ছড়াচ্ছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, বরগুনাতে ডেঙ্গুর পিক সিজন চলছে। ৫৫ বেডের অনুকূলে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসকসহ নার্স সংখ্যাও কম। আমরা বর্তমানে মহা বিপর্যয়ের সম্মুখীন, চিকিৎসাসেবা আমাদের সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ জানান, চলতি বছর শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৫ জন। তিনি বলেন, হাসপাতালের ধারণক্ষমতার তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, গত দুই মাস ধরেই বরগুনায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্স সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।