শেষের পাতা
অর্থ পাচারের ২শ’র বেশি অভিযোগ অনুসন্ধানে
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ জুন ২০২৫, সোমবারদেশে অবৈধভাবে আয়ের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ছিল। কিন্তু কোনো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিতে সাহস করতো না। অবশ্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বর্তমানে অন্তত দুই শতাধিক অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। দুদক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অর্থ পাচারের। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৪টি অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ছিল। অনুসন্ধান শেষে ৫টি মামলা করা হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ৩৬টি অভিযোগ অনুসন্ধান করার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এখন মোট ২০৫টি অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে শিগগিরই এসব অভিযোগের মামলা দেয়া সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলা অনেক জটিল প্রক্রিয়া। চাইলেই মামলা দেয়া যায় না। আইনের বিষয়টি মাথায় রেখেই অনুসন্ধান চলছে। সে অনুযায়ী মামলা হবে।
সূত্র বলছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে অর্থ পাচার সংক্রান্ত ৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির তালিকায় আছেন- সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত, সাবেক এমডি এ এস এম মঈনউদ্দিন মোনেম, পরিচালক ফারহানা মোনেম ও বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ ছাড়া, ৩টি চার্জশিটে অভিযুক্তের তালিকায় আছেন- অ্যাপল গ্লোবালটেল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মজুমদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিউর রহমান খান, ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল মির্জা।
এদিকে, অনুসন্ধানাধীন ২০৫টি অভিযোগের অভিযোগসংশ্লিষ্টদের তালিকায় আছেন- সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান ওরফে সৈয়দ কামরুজ্জামান, আহসানুল করীম, আঞ্জুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা ওরফে হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, দুদকে যেকোনো অভিযোগ এলে তা প্রথমে যাচাই-বাছাই করা হয়। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হলে, দুদকের অপরাধের তালিকাভুক্ত বা তফসিলভুক্ত হলে এবং সার্বিক বিবেচনায় আমলযোগ্য হলে তা অনুসন্ধানের জন্য কমিশন অনুমোদন দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত শুধু অর্থ পাচার সংক্রান্ত ৩৬টি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সবমিলে দুদকে অর্থ পাচারের ২০৫টি অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।