শেষের পাতা
এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিতদের লংমার্চে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ জুন ২০২৫, সোমবার
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের ‘লংমার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকের কাছে এ ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। এ সময় আহতরা রাস্তায় বসে পড়লে পুলিশ তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সরজমিন দেখা যায়, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) আওতায় ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার সুযোগের দাবিতে প্রেস ক্লাব থেকে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি সচিবালয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রথমে পাঁচটি ও পরে আরও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ চালানো হয়। এতে প্রেস ক্লাব এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং পরে আন্দোলনকারীরা পিছু হটে প্রেস ক্লাব মোড়ে অবস্থান নেন। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল শিক্ষা সচিবের সঙ্গে আলোচনার জন্য সচিবালয়ে প্রবেশ করেন।
আন্দোলনকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২০ সালে দেয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে তা সম্পন্ন করতে চার বছর লেগেছে। এতে আমাদের জীবন থেকে ৪ বছর নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি হওয়ার কারণে আমরা আবেদনের সুযোগ পাচ্ছি না। আমাদেরকে বিশেষভাবে আবেদনের সুযোগ দেয়া হোক।
আরেক আন্দোলনকারী মোহাম্মদ বাকিবিল্লাহ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার বারবার উপেক্ষা করছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা হলেও এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে না। এনটিআরসিএ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উদ্যোগ নিচ্ছে, অথচ আমাদের ১৭তম ব্যাচের সমস্যার সমাধান করছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, সচিবালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অঞ্চল হওয়ায় সেখানে আগে থেকেই সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ছিল। মিছিলকারীরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের কিছুটা শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। সচিবালয় কিংবা যমুনা অভিমুখে কেউ আন্দোলন করলে আর ছাড় দেয়া হবে না বলেন জানান তিনি। তিনি আরও জানান, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের ৫ জন প্রতিনিধিকে আলোচনার জন্য আমরা সচিবালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের জন্য আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দেয়া, ১৭তম ব্যাচের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখা এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএ-র সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া। এদিকে ঘটনাকে ঘিরে সচিবালয় ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।