শেষের পাতা
মানবজমিনকে বিরূপাক্ষ পাল
খেলাপি ঋণের বিষয়ে গভর্নরকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন
সিদ্দিকুর রহমান সুমন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
খেলাপি ঋণের বিষয়ে গভর্নরকে প্রশাসনিক ক্ষমতা না দেয়া হলে এ খাতের কোনো উন্নতি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল। যুক্তরাষ্ট্রে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই খেলাপি ঋণের আইনে কোনো সংস্কার করা হয়নি। যার কারণে সুযোগ নিচ্ছে ঋণ গ্রহীতারা। একটা খেলাপি ঋণ যখন চলছে তখন দীর্ঘদিন ধরে চলছে, তাতে তারা আইনের সুরক্ষাও পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিরূপাক্ষ পাল জানান, আগে যে সমস্ত কারখানা কৃত্রিমভাবে লোকসান দেখানো হতো সেগুলো বর্তমানে সত্যি সত্যি লোকসানে চলে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অধ্যাপক পালের মতে আইনের সংস্কার না হলে খেলাপি ঋণের কোনো উন্নতি হবে না- তাই গভর্নরকে প্রশাসনিক ক্ষমতা দিতে হবে, ম্যাজেস্ট্রেসি পাওয়ার দিতে হবে যাতে খেলাপি ঋণের বিষয়গুলো তিনি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারেন।
তিনি জানান পাচারকৃত অর্থ যেটা চলে গেছে, বিদেশে বিনিয়োগ হয়েছে সেই দেশের সরকার তা উদ্ধারে সহায়তা করবে কিনা তাও চিন্তার বিষয়। অর্থ পাচারের বিষয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার, যাতে আর না হয়। যেটা চলে গেছে সেটা কতোটুকু উদ্ধার করা যাবে তা নিয়েও সন্দেহ আছে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, একটি অর্থনীতির জন্য মূলত ৪টি বিষয় থাকে। ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, বিনিয়োগ এবং রাজস্ব। এই চার সেক্টরেই বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। এটি একটির সঙ্গে অন্যটির সংযোগ রয়েছে। শেয়ার বাজারে পতনের ব্যাপারটি কিছু গবেষণার বিষয়, কারণ তা ক্রমেই মন্দের দিকে যাচ্ছে যেটা অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। এখানে আস্থার অভাবও আছে বলে মনে করেন তিনি।
হুন্ডি রোধ করা, ডলারের বাজার স্থিতিশীলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহকে সন্তোষজনক মনে করেন অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ। তবে সম্প্রতি ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে ৫% ট্যাক্স দেয়ার কথা বলেছেন তাতে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা তার। এতে আবারো হুন্ডির তৎপরতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাই প্রতিকার স্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে রেমিট্যান্সে ডলারের যোগ্যমূল্য দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া।