ঢাকা, ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২০ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বিএনপি নেতা সাধন হত্যা

ভাড়াটে খুনিরা অধরা

স্টাফ রিপোর্টার
১৮ জুন ২০২৫, বুধবার
mzamin

ঢাকার বাড্ডা এলাকার বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যার ২৩ দিন পরেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও র‌্যাব তদন্ত করছে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু ক্লু নিয়ে কাজ করছেন। যে দুই শুটার সাধনকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করা হলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দুই শুটারকে ভাড়া করে আনা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তারা গা-ঢাকা দিয়ে আছে। পাশাপাশি এই হত্যার নির্দেশদাতারাও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের অবস্থান ঢাকায় না হওয়াতে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। তবে তদন্তে সাধন হত্যার নেপথ্য কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্ব। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধনকে ভাড়া করা অন্য এলাকার কিলার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাই ফুটেজে তাদের চেহারা দেখা গেলেও তাদের অবস্থান ও পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া সাধন হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কয়েকটি গ্রুপের চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি, আধিপত্য বিস্তার, দখল, হত্যার বদলে হত্যাসহ বেশ কিছু দ্বন্দ্বের কারণে সাধনকে হত্যা করা হয়। গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে তোলা চাঁদার টাকা জমা থাকতো নিহত বিএনপি নেতা সাধনের কাছে। পরে সেই টাকা বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীর কাছে যেতো। ফলে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চাঁদার টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে সাধন খুন হতে পারেন বলে ধারণা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

সূত্র বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে বসে তার গ্যাং ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। আর মেহেদী গ্রুপের মেহেদী যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। অপরদিকে রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপের এই তিন সন্ত্রাসী মালয়েশিয়ায় রয়েছে। তিনটি গ্রুপই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। যখন যারা ক্ষমতায় আসে, তাদের সঙ্গে সখ্য রেখে তারা অপকর্ম করে। রাজনৈতিক নেতারাও তাদের কাছ থেকে সুবিধা নেন। সাধন হত্যায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই তিনটি গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা তদন্ত কর্মকর্তাদের। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, সাধন হত্যার পেছনে মেহেদী গ্রুপ ও রবিন গ্রুপসহ আরও কয়েকটি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের নাম উঠে এসেছে। 

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা, আধিপত্য, চাঁদাবাজি ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নানা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব দ্বন্দ্বের কারণে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। গত ২১শে মার্চ গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে। সুমন মিয়া ছিলেন বাড্ডার সন্ত্রাসী মেহেদী গ্রুপের অনুসারী। তাকে গুলি করে হত্যা করে রবিন, ডালিম ও মাহবুব গ্রুপের লোকেরা। আর এই মাহবুবের মামা ছিলেন সাধন।

সাধন হত্যা মামলার বাদী ও তার স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বলেন, হত্যার এতদিন পরেও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় অবাক লাগছে। স্বামীকে তো আর ফেরত পাবো না; তাকে হত্যার আসামিরা গ্রেপ্তার হলে সান্ত্বনা খুঁজে পেতাম। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ নিয়মিত খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইতো। এখন আর যোগাযোগ করে না। আমি নিয়মিত থানায় ফোন দিই। কোনো আপডেট তথ্য জানাতে পারে না। অনেক হত্যাকাণ্ডে দেখেছি, কবর থেকে হাড্ডি উদ্ধারের পর আসামি ধরে ফেলে, আর আমার স্বামীকে হত্যার ঘটনায় ফুটেজসহ এত প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ কিছুই করতে পারছে না।

নিহত বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন গুলশান থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২৫শে মে রাত ১০টার দিকে মধ্য বাড্ডার গুদারাঘাটের একটি চায়ের দোকানে ৪-৫ জন বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মাস্ক পরা দুই যুবক এসে সাধনকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি সাধনের ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, বুক ও পেটে লাগে। পরে বন্ধুরা উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সাধন নিঃসন্তান ছিলেন। স্ত্রীকে নিয়ে মধ্য বাড্ডা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তিনি গুলশান থানা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ইন্টারনেট ব্যবসার পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসাও করতেন।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম  বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি নাই। আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দুই আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status