অনলাইন
মোবাইল ফোনের ব্যবসায় নামছে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন
মানবজমিন ডিজিটাল
(৫ ঘন্টা আগে) ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:০৬ অপরাহ্ন

নতুন সেক্টরে পা রাখতে চলেছে ডনাল্ড ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবার একটি নতুন ফোন পরিষেবা চালু করছে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন-নাম ‘ট্রাম্প মোবাইল’।
ট্রাম্প পুত্রদের পরিচালিত ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে যে, তারা ৪৯৯ ডলারে সোনালী রঙের একটি ‘বিল্ট ইন আমেরিকা’ স্মার্টফোন বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছে। সেইসঙ্গে থাকছে, মাসিক ৪৭.৪৫ ডলারের মোবাইল ফোন পরিষেবা। তবে এই উদ্যোগ দুর্নীতি এবং স্বার্থের সংঘাতের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
একজন সাপ্লাই চেইন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন যে, সম্পূর্ণ আমেরিকান উপাদান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের ফোন তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। সিটিজেনস ফর রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড এথিক্স ইন ওয়াশিংটন (CREW) এর যোগাযোগ পরিচালক মেগান ফকনার বলেন, এটা অবিশ্বাস্য যে ট্রাম্প পরিবার প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার আরেকটি উপায় তৈরি করেছে।
ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি তার ব্যবসায়িক স্বার্থ একটি ট্রাস্টে রেখেছেন, যা তার সন্তানরা পরিচালনা করে। হোয়াইট হাউস বলে আসছে যে, তিনি সমস্ত আমেরিকানদের স্বার্থে কাজ করেন। কিন্তু ফকনার বলেন, প্রেসিডেন্ট কীভাবে এমন একটি শিল্পের জন্য নীতি নির্ধারণ করবেন যেখানে তার পরিবারের এখন অংশীদারিত্ব রয়েছে।
আমেরিকায় তৈরি?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের হ্যান্ডসেট সম্পর্কে ‘বিল্ট ইন দ্য ইউনাইটেড স্টেটস’ দাবির অর্থ কী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে স্মার্টফোন তৈরি করা সম্ভব নয়। জনস হপকিন্সের ক্যারি বিজনেস স্কুলে অপারেশন ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক টিংলং দাই বলছেন, ‘তাদের কাছে কোনও কার্যকরী প্রোটোটাইপও নেই। এটা একেবারেই অসম্ভব। এই ধরণের পণ্যের জন্য টেকসই চাহিদা থাকা দরকার।’
মার্কিন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হওয়া আইফোন আমেরিকায় তৈরির জন্য অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুককে চাপ দেয়ার চেষ্টা করার পর ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিলেন। গত মাসে ট্রাম্প আমেরিকায় তৈরি না হওয়া আইফোনের উপর ‘অন্তত’ ২৫% আমদানি কর আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।
সিসিএস ইনসাইট-এর বিশ্লেষক লিও গেবি উল্লেখ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে স্মার্টফোন অ্যাসেম্বলির জন্য প্রয়োজনীয় ‘উচ্চ প্রযুক্তির সরবরাহ শৃঙ্খল নেই’, বিশেষ করে আগস্টের মধ্যে এই ফোন তৈরি সম্ভব নয়, যেমনটি ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে। তবে, এটা সম্ভব যে বিদেশ থেকে আমদানি করা যন্ত্রাংশের সাথে ডিভাইসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা যেতে পারে। ট্রাম্প অর্গানাজেশনের ঘোষণায় বিস্তারিত তথ্যের অভাব রয়েছে। পরিষেবাটি কে পরিচালনা করবে এবং কোন ব্যবসায়িক অংশীদার লাইসেন্স দিচ্ছে তার নাম উল্লেখ নেই।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশন তার ব্যবসায়িক অংশীদার সম্পর্কে বিবিসির প্রশ্নের তাৎক্ষণিকভাবে কোনো জবাব দেয়নি। শুধু পরিকল্পনাটি ঘোষণার সময় বলা হয়েছে, আমেরিকানরা এমন একটি ওয়্যারলেস পরিষেবা পাওয়ার যোগ্য যা সাশ্রয়ী মূল্যের, তাদের মূল্যবোধ প্রতিফলিত করে এবং তারা নির্ভরযোগ্য মানের পরিষেবা পেতে পারে।
এটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের পরিবারগুলোতে বিশেষ ছাড়ে আন্তর্জাতিক কলের সুবিধা দেবে। ঘোষণায় বলা হয়েছে গ্রাহকদের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সহায়তা কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। সোনালী রঙের ফোনটি বর্তমানে প্রি-অর্ডারের জন্য উপলব্ধ বলে জানানো হয়েছে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের তরফে।
ট্রাম্পের মোট সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে
এই চুক্তিটি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে বসার অনেক আগে থেকেই গৃহীত একটি ব্যবসায়িক কৌশলের সম্প্রসারণ, যেখানে তিনি ফি এবং রয়্যালটির বিনিময়ে হোটেল মালিক এবং গল্ফ কোর্স অপারেটরদের কাছে তার নাম বিক্রি করার চুক্তি করেছিলেন। এক দশক আগে রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকে তার ব্র্যান্ড থেকে লাভের সুযোগ বেড়েছে। জানা গেছে, ট্রাম্প গত বছর ৬০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছেন। ট্রাম্প-ব্র্যান্ডের বাইবেল, ঘড়ি, স্নিকার্স এবং সুগন্ধির মতো পণ্য থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার আয় করেছেন তিনি। গত মার্চ মাসে ফোর্বস তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫.১ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করেছিল, যা এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এতে বলা হয়েছে যে, এই বৃদ্ধির কারণ ছিল ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের ‘বিশাল অনুসারীর সংখ্যা’, যা ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল ফোন বাজারে বর্তমানে তিনটি কোম্পানির আধিপত্য রয়েছে: AT&T, Verizon এবং T-Mobile, যারা প্রত্যেকেই মাসে ৪০ ডলারেরও কম দামে ফোন পরিষেবা প্রদান করে। ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটিরও কম। রায়ান রেনল্ডসের সমর্থিত মিন্ট মোবাইল ২০২৩ সালে টি-মোবাইলের কাছে ১.৩৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়ে যায়। সেই সময়ে, একজন বিশ্লেষক অনুমান করেছিলেন যে পরিষেবাটির প্রায় দুই মিলিয়ন থেকে তিন মিলিয়ন গ্রাহক ছিল।
সূত্র : বিবিসি