ভিড় সামলাতে হিমশিম, বন্ধ হলো প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামের দরজা

বিশ্বের সর্বাধিক পরিদর্শন করা জাদুঘর-লুভ।  শিল্প, সৌন্দর্য এবং ধৈর্যের প্রতীক এই জাদুঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের কারণে নয়, সন্ত্রাসের কারণে নয়, বরং এর নিজস্ব ক্লান্ত কর্মীদের কারণে। যারা বলছেন,  নিত্যদিন এত মানুষের সমাগম হচ্ছে, যে ভিড়ের চাপ তারা সামাল দিতে পারছেন না।  লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শিল্পকর্ম এবং সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদের  আবাসস্থল প্রাচীন লুভর মিউজিয়াম সংগ্রহশালা হিসেবে যতটা জনপ্রিয়, বিখ্যাত, ফরাসি স্থাপত্য হিসেবেও তার কদর ততটাই। 

কাচের পিরামিড আকারের মিউজিয়ামে একাধিক নামী শিল্পীর আঁকা ছবি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কালজয়ী সৃষ্টি ‘মোনালিসা’, যে ছবির গবেষণার বিষয় হল মোনালিসার হাসি। তা দেখতেই রোজ কাতারে কাতারে শিল্পপ্রেমী ভিড় করেন লুভর মিউজিয়ামে। শুধু চিত্রশিল্পীই নন, আমজনতারও আকর্ষণ এই ছবি। সম্প্রতি সেই ভিড় আরও বাড়ছে। মিউজিয়ামের সামনে টিকিট কাউন্টার থেকে প্রবেশদ্বার – সর্বত্র দীর্ঘ লাইন সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত কর্মীরা। নিরাপত্তারক্ষীদের উপরও চাপ বাড়ছে। তিতিবিরক্ত হয়ে তারা পুরোদমে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে মিউজিয়ামে আপাতত তালা বন্ধ। 

জাদুঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে মিলওয়াকির ৬২ বছর বয়সী কেভিন ওয়ার্ড বলছেন, ‘হাজার হাজার মানুষ বাইরে অপেক্ষা করছে, কর্তৃপক্ষ কোনও যোগাযোগ করছে না, কেউ কোনও ব্যাখ্যা দিচ্ছে না।’

জনসাধারণের জন্য লুভর  দরজা বন্ধ করে দেয়া বিরল ঘটনা। যুদ্ধের সময়, মহামারীর সময় এবং হাতে গোনা কয়েকটি ধর্মঘটের সময় এমনটি ঘটেছে। তাই হঠাৎ জাদুঘরের দরজা বন্ধ দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত। কিছুটা হলেও বিরক্ত। তথ্য বলছে, লুভর মিউজিয়ামে ফি দিন কমবেশি ৮৭ লক্ষ পর্যটক ভিড় করেন। সমস্যা হচ্ছে, এত ভিড়ে পর্যাপ্ত দাঁড়ানোর জায়গা, বিশ্রামস্থলের অভাব ঘটছে। সবমিলিয়ে আজকের দিনের পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর মতো পরিস্থিতি নেই প্রাচীন মিউজিয়মের আশপাশে। 

লুভর সংস্কারে ১০ বছর ব্যাপী দীর্ঘ পরিকল্পনায় হাত দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। ‘লুভর নিউ রেনেসাঁ’ নামে সেই প্রকল্পের কাজ খুব ধীরে চলছে। ফলে ভিড়ের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের কোনও সুরাহা হয়নি। লুভর মিউজিয়ামের প্রেসিডেন্ট লরেন্স দে কারস জানিয়েছেন, ভিড়ের চাপে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে কাচের মিউজিয়ামের কোথাও কোথাও চিড় ধরছে। নষ্ট হচ্ছে বহুমূল্য সব সৃষ্টিকর্ম। তার উপর বিল্ডিংয়ের কিছু অংশ পানিতে  ভিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা কর্মী ও পর্যটক উভয়ের ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক হতে পারে। সব দিক খতিয়ে দেখে আপাতত মিউজিয়াম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল

সূত্র : সিএনএন