ঢাকা, ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

দু’উপদেষ্টার পথ ‘অবরোধ’ নিয়ে জাফলংয়ে জল্পনা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

(১৪ ঘন্টা আগে) ১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানকে অনেক আগে থেকেই সিলেটে আসার আহবান জানিয়েছিলেন সুধীজনেরা। এই আমন্ত্রণে কারন ছিলো; তিনি যখন বেলা’র প্রধান নির্বাহী ছিলেন তখন তার হাত ধরেই উচ্চ আদালতের রিটে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা জাফলং সহ কয়েকটি এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছিলো। এতে করে প্রাণ ফিরেছিলো ওইসব এলাকায়। কিন্তু ৫ই আগষ্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে অবাধে লুট চলেছে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে। অভিযোগ করা হচ্ছে; হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। এ কারনে দৃশ্যপট দেখতে রেজওয়ানাকে সিলেট আসার আহবান অনেক আগে থেকে ছিলো। উপদেষ্টা হওয়ার পর শনিবার প্রথমবারের মতো জাফলং গেলেন  উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। সঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানও। কিন্তু তারা এমন সময় সেখানে গেলেন তখন জাফলং কেয়ারিজুড়ে পানি আর পানি। লুটের সব চিহ্ন পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। আর এই পানিতেই নৌকাযোগে জাফলং ঘুরে দেখলেন দুই উপদেষ্টা। 

জাফলংয়ে বর্তমানে রাতের আধারে চলছে বালু লুট। পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলংয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বালু লুট হচ্ছে। আর লুটের নেপথ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপি নেতা স্ট্যালিন থারিয়াং। এবারই জাফলংয়ে কর্তৃত্ব তার হাতে এসেছে। প্রশাসনকে হাতে নিয়ে পিয়াইন নদীর উজানে খাসিয়া বস্তিতে বসেই বালু লুটের নিয়ন্ত্রণ করছেন। জাফলংয়ের বালু থেকে এখন প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হয়। স্ট্যালিনের নিজস্ব লোক জিয়ারত খান, জাহিদ খান ও কামাল মেম্বার সরাসরি বালু লুটের নেতৃত্বে রয়েছেন। দুই উপদেষ্টা জাফলং যাবেন। এ খবর দু’দিন থেকে জাফলংয়ে চাউর হচ্ছিলো। জাফলংয়ের মানুষ পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার পক্ষে। এখানকার একমাত্র জীবিকাই হচ্ছে পাথর ও বালু। লিজ বন্ধ থাকার কারনে মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা লুটপাট চান না। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বৈধভাবে পাথর তুলতে চান। কিন্তু লিজ না দেওয়ায় হরিলুট হচ্ছে। ওখান থেকে গত ১১ মাসে কোনো একটি টাকা পায়নি সরকার। উল্টো লুটের অর্ধেক টাকা প্রশাসনের পকেটস্থ হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে এলাকায়। দুই উপদেষ্টা জাফলং আসবেন- এমন খবরে তলে তলে মানুষের আবেগকে পুজি করে ওখানে সিনক্রিয়েট করার চিন্তা করে বর্তমান লুটেরা। যেটি ভেবেছিলো গতকাল তারা সেটাই করেছে। 

উপদেষ্টারা রাতে অবস্থান করেন তামাবিলের নলজুড়ি রেস্টহাউসে। সকালে তারা জাফলং পরিদর্শনে হন। সঙ্গে ছিলো পুলিশও। তারা বের হওয়ার আগে শতাধিক লোক নিয়ে বর্তমান বালুখেকোরা বল্লাঘাটের অদূরে সড়কে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা চালায়। ওই সময়ের দৃশ্যপটের কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা গেছে- বালুখেকো চক্রের সদস্যরা উপস্থিত লোকজনকে সড়কে শুয়ে পড়ার আহবান জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বসে পড়ার জন্য বলছেন। এ সময় ওই এলাকায় টহলে থাকা পুলিশ দল ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা উপস্থিত লোকজনকে সড়কে পাশে দাড়িয়ে থাকার অনুরোধ জানালেও কোন কাজ হয়নি। যখন দুই উপদেষ্টার গাড়ি খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন তারা সড়কে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা চালায়। 

সড়কে দাড়িয়ে গেলে এক পর্যায়ে গাড়িও থেমে যায়। তবে তাৎক্ষনিক পুলিশ দল এসে তাদের সরিয়ে দিয়ে সড়ক ক্লিয়ার করে দেন। এমন দৃশ্যে বিব্রত হন দুই উপদেষ্টা। তবে এ ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করেননি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন; জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টাকে ঘিরে আরো বেশি সিনক্রিয়েট করার পরিকল্পনা ছিলো। যে পরিকল্পনা আগের রাতেই প্রশাসনের কাছে পৌছে যায়। এই পরিকল্পনায় ছিলো গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর থেকে কয়েক হাজার মানুষ এনে জাফলংয়ে জড়ো করা হবে। দুই উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করেই তারা পাথর ও বালু মহাল খুলে দেওয়ার দাবি জানাবে। এজন্য জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের প্রতিটি এলাকায় তাদের পক্ষ থেকে দাওয়াত পৌছে দেওয়া হয়েছিলো। অনেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন জাফলং আসার। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর থাকার কারনে বর্তমান লুটপাটকারীদের ডাকে কেউ সাড়া দেননি। শ’খানেক লোকের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই জাফলংয়ের বাসিন্দা এবং বর্তমানে বালু লাইনের লোক। এদিকে; অবরোধের মুখেও গতকাল পূর্বের সিদ্বান্ত থেকে টলেননি উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ও ফাওজুল কবির। উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি পূর্বের নেওয়া উদ্যোগকে পুর্নব্যক্ত করে জানান- জাফলং সহ যেখানে যেখানে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে সে স্থানগুলোকে পর্যটনে রূপান্তরে চিন্তাভাবনা রয়েছে। 

পর্যটন দিয়ে যাতে জীবিকা নির্বাহ করা যায় সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে পাথর কোয়ারি লিজে দেওয়া হবে না বলে গতকালও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। জাফলংয়ের স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন- গতকাল দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহর অবরোধ করা ও তাদের ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান যারা দিয়েছে তাদের অনেকেই বালু ও পাথর লুটপাটকারী। ওরা গত দু’দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে জাফলংয়ের পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা ছিলো না। তারা জানান- পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ডাক দিলে হাজার হাজার মানুষ জাফলং নেমে আসে। শ’খানেক লোক হতো না। এখন অবরোধের দায় তাদের কাধেই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য তারা বিষয়টির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তারা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা জাহিদ খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- দুই উপদেষ্টা জাফলংয়ে আসায় আমরা দেখতে যাই। পরে সেখানে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়। তবে এতে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না বলে জানান। এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ওরা দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহরকে আটকাতে পারেনি। এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় সড়কের পাশ থেকে ওরা গাড়ির সামনে চলে এসেছিলো। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর উপদেষ্টাদের গাড়ি গন্তব্যে চলে যায়। কোনো বিশৃঙ্খল বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
 

পাঠকের মতামত

মাটির উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নিচু জমিতে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন বা শাকসবজি আবাদে বা ঘরের ভিটার জন্য মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এবার পাথরও বন্ধ। তারা কী নালা নর্দমায় থাকে?

আজাদ আবদুল্যাহ শহিদ
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ১০:২২ অপরাহ্ন

যারা ভুয়া ভুয়া বলছে আসলে তাদের মানসিকতাই ভুয়া।

আব্দুল্লাহ
১৪ জুন ২০২৫, শনিবার, ৯:৫৪ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status