অনলাইন
ইসরাইলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর সীমিত ক্ষতি, তেজস্ক্রিয় লিক নিয়ন্ত্রণে
মানবজমিন ডিজিটাল
(১০ ঘন্টা আগে) ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:০৬ অপরাহ্ন

শুক্রবার ইরানের বৃহত্তম পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে বিমানহানা চালিয়েছে ইসরাইল। তার পর থেকেই ওই পরমাণুকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করে। ইরানি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার ও শনিবার ইসরাইলি হামলায় ইরানের ফোরদো এবং নাতানজে পারমাণবিক শক্তি স্থাপনাগুলোর সীমিত ক্ষতি হয়েছে। ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার (AEOI) মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দিকে উদ্ধৃত করে ISNA সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ‘ফোরদো কেন্দ্রের কিছু অংশে সীমিত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই সরঞ্জাম এবং উপকরণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরিয়ে নিয়েছি এবং কোনও ব্যাপক ক্ষতি হয়নি। দূষণের কোনও উদ্বেগ নেই।’
এর আগে পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বলেছিলেন যে, হামলার ফলে ইরানের কেন্দ্রীয় প্রদেশ ইসফাহানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার উপরিভাগের ক্ষতি হয়েছে। ইরানের তাসনিম সংবাদ সংস্থা অনুসারে, এক বিবৃতিতে কামালভান্দি বলেন, ‘নাতানজে স্থাপনার ভেতরে রাসায়নিক ও তেজস্ক্রিয় দূষণ শনাক্ত করা হয়েছে, তবে তা বাইরে ছড়িয়ে পড়েনি। আমাদের নাতানজ স্থাপনার ভেতরে থাকা বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তারপর ক্ষতির মূল্যায়ন করতে হবে।’
তাবরিজ শহরের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোও ইসরাইলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো রাতভর নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় নির্ভুল বিমান হামলা চালিয়েছে।আইডিএফের মুখপাত্র এফি ডিফ্রিন একটি ভিডিও ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে, ইসরাইলি বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো শুক্রবার মধ্য ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আইডিএফ গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় এই হামলা চালানো হয়েছিল।
শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনের পর এক সংবাদমাধ্যমের বিবৃতিতে ইরানের জাতিসংঘের দূত সাঈদ ইরাভানি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই ইসরাইল সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ করেছে। এটি ছিল একটি বেপরোয়া, অপরাধমূলক কাজ যা ইরানের সীমানা ছাড়িয়েও একটি তেজস্ক্রিয় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারত। এই ধরনের আক্রমণ কেবল জাতিসংঘ সনদ, আইএইএ-এর সংবিধি এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তির জন্য সরাসরি হুমকি।’
ইরাভানি মনে করেন, এটি কেবল ইরানের উপর আক্রমণ ছিল না। এটি ছিল আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার উপর আক্রমণ, জাতিসংঘের উপর আক্রমণ, বলপ্রয়োগের চেয়ে আইনের শাসনে বিশ্বাসী প্রতিটি জাতির উপর আক্রমণ। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি সংস্থার গভর্নর বোর্ডকে বলেছেন যে, ‘প্রেক্ষাপট বা পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে কখনই আক্রমণ করা উচিত নয়, কারণ এটি মানুষ এবং পরিবেশ উভয়েরই ক্ষতি করতে পারে।’
এক বিবৃতিতে গ্রোসি বলেন, ইসরাইলের বিমান হামলার পর সংশ্লিষ্ট পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অবস্থা নিশ্চিত করতে এবং পারমাণবিক নিরাপত্তার উপর এর প্রভাব মূল্যায়ন করতে আইএইএ বর্তমানে ইরানের পারমাণবিক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছে। আইএইএতে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি লি সং বলেছেন, চীন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপের নিন্দা করে এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সশস্ত্র হামলার বিরোধিতা করে।
শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ফোনে কথোপকথনের সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেন যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র কখনও পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করেনি এবং এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষকে তারা আশ্বস্ত করতে চায় ।
সূত্র : চায়না ডেইলি