ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য করোনার দোহাই কেন?

তারিক চয়ন
১৬ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

‘করোনা মহাসংকটের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক’ মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বুধবার (১০ই আগস্ট) বলেছেন, ‘গ্রাম-গঞ্জের কোনো মানুষ না খেয়ে নেই। প্রত্যেকে খেতে পারছে। প্রতিটি মানুষের গায়ে জামাকাপড় আছে। গ্রামের প্রায় সব রাস্তাঘাট পাকা হয়ে গেছে। প্রত্যেক গ্রামে প্রাইমারি স্কুল করা হয়েছে, ঘর না থাকলে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। আমি মনে করি না, আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি।’ শুধু মো. তাজুল ইসলাম-ই নন, সরকারের অনেক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেই ইদানীং দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে কথা বলার সময় করোনাভাইরাস মহামারির দোহাই টানতে দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু, এমন তো হওয়ার ছিল না! কারণ, দেশে করোনাভাইরাস আগমনের একেবারে শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে ‘করোনা আমাদের কিছুই করতে পারবে না’ ধরনের কথাবার্তা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করোনাকালের একেবারে শুরুতেই (২০২০ সালের ২১শে মার্চ) বলেছিলেন, ‘আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী’। গত মার্চ মাসেও (২৯ তারিখ) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা ও নিরলস কর্মতৎপরতায় বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তেমন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েনি; বরং মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।’

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে, সরকারের নীতি এবং পদক্ষেপের কারণে যদি করোনা বাংলাদেশের কোনো বড় ধরনের ক্ষতি নাই করতে পারে, তাহলে এতদিন পর এসে সরকার দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে কথা উঠলে কেন করোনার দোহাই দিচ্ছে অথবা ইনিয়ে বিনিয়ে করোনা প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসছে? মেনে নিচ্ছি- কোনো সরকারই ব্যর্থতার দায় নিতে চায় না, নিজের কৃতিত্বের কথাই শুধু জাহির করতে চায়। সুতরাং, সরকার বলতে না চাইলেও আমরা সবাই বুঝি, করোনা মহামারিতে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করে ক্ষতির পরিমাণ না জানলেও এক্ষেত্রে সংসদে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর একটি ভাষণ সহায়ক হতে পারে।

গত বছর (২৯শে জুন) ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাভাইরাসজনিত কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।’

একটু পেছনে তাকালেই দেখা যাবে ওই দুই অর্থবছরেই রেকর্ড পরিমাণ ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে (তখন পর্যন্ত) সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ এসেছিল। ওই বছর ৭৩৮ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া গিয়েছিল, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর পরের (২০২০-২১) অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭১০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা হিসাবে)। 

এর মধ্যে ঋণ ছিল প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। আর বাকি টাকা পাওয়া গিয়েছিল অনুদান হিসেবে। ওই অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে (তখন পর্যন্ত) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছিল। ৩০শে জুন শেষ হওয়া সদ্য বিদায়ী (২০২১-২২) অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ১ হাজার কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই সময়ের বিনিময় হার হিসেবে (প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ বিদেশি ঋণ আসেনি। অর্থাৎ, সদ্য বিদায়ী (২০২০১-২২) অর্থবছরেই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের ১৪ই এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়: টিকাদান এবং করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সুতরাং, পরিসংখ্যান বলছে, যে সময়টাতে করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতির উপর পড়তে শুরু করেছিল বা পড়েছে, সে সময়েই বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিদেশি ঋণ নিয়েছে বা পেয়েছে। শুধু কি তাই! ওই সময়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ টাকা বা রেমিট্যান্সের কথা নিয়মিতভাবেই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে ৩০শে জুন (২০১৯-২০) শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ বা ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যেটি তার আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে ১০.৮৫ শতাংশ বেশি ছিল। ওই (২০১৮-১৯) অর্থবছরে মোট ১৬.৪২ বিলিয়ন রেমিট্যান্স এসেছিল। ৪ঠা জুলাই ২০২০ প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়: রেমিট্যান্সে তৈরি হওয়া নতুন রেকর্ডের ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। শুধু জুন মাসেই এসেছিল ১৮৩ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স, যেটি ছিল মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ। অবশ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও এআইআইবির ঋণ সহায়তার ভূমিকা ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে যাওয়ায় আমদানি খরচ কমে আসার ভূমিকার কথাও বলছিলেন অর্থনীতির গবেষকরা।

যাই হোক, দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার ঘটনা শুধু ২০১৯-২০  অর্থবছরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এরপরের (২০২০-২১, ২০২১-২২) অর্থবছরগুলোতেও কদিন পরপরই দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন (সমকাল, ৩রা জানুয়ারি ২১)। ২০২১ সালে রেকর্ড ২ হাজার ২০৭ কোটি (২২ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে কোনো বছর এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে (জানুয়ারি ০৩, ২০২২ বণিক বার্তা)। এমনকি গত বছরের চেয়ে এ বছর রেমিট্যান্স বেশি আসার দিকটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার (আগস্ট ১১, ২০২২) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত যে রেমিট্যান্স এসেছে, এ বছর ওই সময়ে তা ২০ শতাংশ বেশি হবে।’

বিদেশি ঋণ বা রেমিট্যান্সের কথা বাদ দিলেও পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ সাহায্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বিনামূল্যে উপহার দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ এবং সংস্থা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে (২৬শে মার্চ, ২০২১) লেখা এক নিবন্ধে এদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার জানান, বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় ৭৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ বছরের ৪ঠা এপ্রিল এক নিবন্ধে জানান, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া টিকা ডোজের বৃহত্তম প্রাপক। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে কোটি কোটি ডোজ টিকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের টিকার পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া, অন্যান্য কিছু দেশও করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে কমবেশি সাহায্য করেছে।

ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস (৮ই আগস্ট, ২০২২) জানাচ্ছে: বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে প্রাপ্ত করোনার টিকা অনুদানের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকার জনগণের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশে করোনা বিষয়ে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ১৪ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছে।

এদিকে, করোনা মোকাবিলায় বিদেশি ঋণ নেয়ার বিষয়টি থেমে নেই। কিছুদিন পরপরই এ ধরনের খবর চোখে পড়ছে। এই সেদিনও (৭ই আগস্ট) ঢাকার পত্রিকাগুলোতে খবর প্রকাশিত হয় যে, করোনা সংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০ কোটি ডলার বা প্রায় (প্রতি ডলার সমান ৯৫.১৬ টাকা ধরে) ২৮৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিচ্ছে সরকার। এই ঋণ দেয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এর মাত্র আড়াই মাস আগে (১৯শে মে ২০২২) মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, করোনা মোকাবিলার সাফল্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য বিশ্বব্যাংক ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। এর মাত্র সপ্তাহখানেক আগে (১১ই মে ২০২২) গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ঃ করোনার টিকা ক্রয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় করা অর্থের বিপরীতে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রিইম্বার্স করার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

তার আগে (১৮ই এপ্রিল ২০২২) প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়ঃ সবচেয়ে কম সুদে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (এআইডিএ) তহবিল থেকে বাংলাদেশ সরকারকে ২৫ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। করোনা মহামারির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, কৃষি খাত ও রপ্তানিমুখী শিল্পে প্রণোদনা এবং খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে এ ঋণ দেবে তারা। তারও আগে (১লা এপ্রিল ২০২২) প্রকাশিত হয়: করোনাভাইরাসের কারণে দেশের যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তা কাটাতে ২৫ কোটি ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এর মাসখানেক আগে জানা যায়: করোনাভাইরাস মহামারি সংকট থেকে উত্তরণে জরুরিভিত্তিতে বাংলাদেশকে আড়াই হাজার কোটি টাকা (৩০ কোটি ডলার) জরুরি ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। 

উপরোক্ত খবরগুলো করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিদেশি ঋণ  বা সহায়তা সংক্রান্ত। এগুলো সব চলতি (২০২২) বছরের খবর। এর আগের বছরগুলোতে (২০২১, ২০২০) গৃহীত বিদেশি ঋণ বা সহায়তা সংক্রান্ত খবরগুলো প্রকাশ করলে এই নিবন্ধটি পাঠকের নিকট অতিদীর্ঘ এবং বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই, ওই খবরগুলোর কথা উল্লেখ না করাই শ্রেয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে সরকার। এই ঋণ চাওয়ার বিষয়টি শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হলেও বাংলাদেশ থেকে ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব যাওয়ার বিষয়টি’ আইএমএফ প্রকাশ করার পর সরকার সেটি স্বীকার করে নেয়। দেশে নগদ অর্থের অভাব ঠেকাতে বেইল আউটের আবেদনের পর আইএমএফ এর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার, প্রভাবশালী বৃটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান সহ আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হলেও আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়টিকে ‘বেইল আউট’ থেকে বাঁচার প্রয়াস হিসেবে দেখানোর বিষয়টিকে সামগ্রিকভাবে জাতিগত অপমানের শামিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা জনাব কায়কাউসের বক্তব্যকেই বিশ্বাস করতে চাই। কারণ, গার্ডিয়ান বলছে: মহামারি চলাকালীন প্রায় ৯০টি দেশ আইএমএফের কাছে সাহায্য চাইলেও মাত্র কয়েকটি দেশ ঋণ খেলাপি হওয়া বা বিল পরিশোধ করতে অক্ষম হওয়ার জন্য বেইল আউট চাইতে বাধ্য হয়েছে। কেউ নিশ্চয়ই চাইবেন না, নিজের দেশ ওরকম পরিস্থিতিতে পরুক। 

উল্লেখ্য, আর্থিক সমর্থন খোঁজার জন্য সরকারের সাহায্য প্রার্থনা কেবল আইএমএফের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বব্যাংক, জাইকা সহ বেশ কিছু বহুজাতিক সংস্থা এবং দাতা দেশের কাছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।

সুতরাং, আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যে এখন খুব খারাপ সেটি বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে সর্বত্র, ছেলেবুড়ো সকলেরই আলোচনার বিষয় এখন দেশের নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন মজা করে লিখেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন এতই করুণ যে রাজনীতি বুঝতে অনীহা প্রকাশ করা রাজনীতিবিদদেরও এখন অর্থনীতির জ্ঞান রাখতে হচ্ছে। কিন্তু, পুরো আলোচনা থেকে পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, দেশের অর্থনীতির এই দশার জন্য আর যাই হোক, বেচারা করোনাভাইরাসকে দোষ দেয়া যাচ্ছে না।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status