অনলাইন
সহযোগীদের খবর
‘ছায়াযুদ্ধে’ বিএনপি ও এনসিপি
অনলাইন ডেস্ক
(৪ ঘন্টা আগে) ২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯:১৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘ছায়াযুদ্ধে’ বিএনপি ও এনসিপি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও এনসিপির পৃথক কর্মসূচি হঠাৎ করেই রাজনীতিতে বেশ উত্তাপ তৈরি করেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র করার দাবি সামনে রেখে। এরপর এনসিপি কর্মসূচি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে। দল দুটির দাবি ভিন্ন ভিন্ন হলেও এটাকে কার্যত পাল্টাপাল্টি বা ছায়াযুদ্ধ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপি ইশরাকের ইস্যুতে জয়ী হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ধাক্কা দিতে চায়—যার চূড়ান্ত লক্ষ্য দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। পাশাপাশি এনসিপির ওপরও একটা রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে চায়। কারণ, বিএনপির নেতারা মনে করেন, এনসিপি একের পর এক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন পেছাতে চায়।
অপর দিকে ইশরাক ইস্যুতে আন্দোলনে বিস্তৃতি বাড়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পাল্টা চাপ তৈরির লক্ষ্যে কর্মসূচি নিয়েছে। তারা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলে। পরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিকে ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে টানা কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপি মৌলিক সংস্কার পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায়। তারা ইশরাক হোসেনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করতে চাইছে। এর পাল্টা বিএনপির ওপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করতে ইসির সামনে বিক্ষোভ করে এনসিপি।
দুই পক্ষের এই ছায়াযুদ্ধ ও পাল্টাপাল্টি বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাউকে কাউকে টেনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার জন্য বিএনপির নেতারা সরকারকে দায়ী করছেন। গতকাল বুধবার সকালে নির্বাচন ভবনের সামনে এনসিপির কর্মসূচির কয়েক ঘণ্টা আগে ইশরাক হোসেন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (স্থানীয় সরকার) ও মাহফুজ আলমের (তথ্য ও সম্প্রচার) পদত্যাগ দাবি করেন। দুপুরে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি ইসির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতায় সরকারের তিনজন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আসিফ নজরুলকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ দাবি করে হুঁশিয়ারি জানান, সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়িত না হলে তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রদল দুই দফা শাহবাগ অবরোধ করে। তারা উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও তুলেছিল। শুরুতে এটাকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যকে সরানোর পাল্টা হিসেবে মনে করেছিল রাজনৈতিক সচেতন মহলগুলো। কারণ, কুয়েটের ওই উপাচার্য বিএনপিপন্থী শিক্ষক ছিলেন। কুয়েটে ওই আন্দোলনে ছাত্রদল বা বিএনপির পরাজয় হয়েছে বলে জনপরিসরে ধারণা তৈরি হয়েছিল। তবে ঢাকায় ছাত্রদল নেতার হত্যার প্রতিবাদ ও ইশরাক ইস্যুতে আন্দোলনে পর্যায়ক্রমে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অংশগ্রহণ জোরদার হওয়া এবং এনসিপির পাল্টা সোচ্চার হওয়ায় নতুন করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এনসিপির শীর্ষ ও মধ্যম সারির অন্তত পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ইশরাকের বিষয়টিকে অজুহাত করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শিক্ষার্থীদের দুই প্রতিনিধিকে (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) সরাতে চাইছে। এর প্রতিক্রিয়ায় এনসিপিও অন্য তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এনসিপির নেতাদের অনেকে মনে করেন, ইশরাকের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ তৈরি করতে চাইছে। আর নির্বাচন কমিশন ইশরাকের মামলায় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে ‘তড়িঘড়ি’ গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে কার্যত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।
অন্যদিকে ইশরাকের সমর্থকেরা মনে করেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কারণেই ইশরাকের মেয়র পদে শপথের বিষয়টি আটকে আছে। এ জন্য আন্দোলনে আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে স্লোগানসহ নানাভাবে ক্ষোভ দেখানো হচ্ছে।
তবে শুরুতে ইশরাক সমর্থকেরা মাঠে নামলেও পরে বিএনপির নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে সমর্থন করে, যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা গেছে গতকাল বুধবার। এদিন ইশরাকের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা, এমনকি ঢাকার আশপাশের জেলার দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতির একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত সোমবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তৃতায়। তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে, আজকে-কালকের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আদালত ঘোষিত ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় ঢাকায় এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হয়তো আরও বৃহত্তর আন্দোলন করতে হতে পারে।’
১৭ মে নগর ভবনের সব ফটকে ইশরাক সমর্থকেরা তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর টানা আন্দোলন করে আসছেন। এনসিপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর প্রতিক্রিয়া হিসেবেই তাঁরা ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার দাবি সামনে আনেন।
যদিও বিএনপির নেতাদের সন্দেহ, সরকারের ভেতরে-বাইরে একাধিক গোষ্ঠী জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চায়। এনসিপিও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বলে তাঁদের ধারণা। তাই ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি একই সঙ্গে সরকার ও এনসিপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে।
এই পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজনীতিবিষয়ক লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলে আওয়ামী লীগও একটা পাল্টা কর্মসূচি দিত। এখনকার ব্যাপারটা দেখে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির যে ঝগড়াটা ছিল, সেটা এখন এনসিপি আর বিএনপির মধ্যে চলে এসেছে। উভয় দলই মাঠে সক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এতে যে জনভোগান্তি হচ্ছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো মাথাব্যথা নেই।
যুগান্তর
‘মেয়র পদে ইশরাকের শপথ ও দায়িত্ব প্রদান: দাবি না মানা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, দাবি না মানা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করবেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। তাকে মেয়রের শপথ পড়ানো এবং দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা ৬ দিন ধরে আন্দোলন করছেন সমর্থকরা। নগরভবনে শুরু হওয়া আন্দোলন এখন স্থানান্তর হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যুমনার সামনে। সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাক হোসেনও।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে হাজারো নেতাকর্মী ইশরাকের নেতৃত্বে ‘যমুনা’র সামনে অবস্থান নেন। এর ফলে হেয়ার রোড, মৎস্য ভবনের মোড়, কাকরাইল ও সার্কিট হাউজ সড়কসহ আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পুরো এলাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাত দেড়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
গত সপ্তাহের বুধবার প্রথমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন। সেই থেকে নগর সেবা কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ নগর সংস্থার প্রধান কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয় ও ওয়ার্ড কার্যালয় সবই তালাবদ্ধ। নগরবাসী সেবা পাচ্ছেন না। ভেঙে পড়েছে বর্জ্য অপসারণ, মশক নিয়ন্ত্রণ, সড়কবাতি প্রজ্বালন এবং সড়ক সংস্কারসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
কালের কণ্ঠ
দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ‘অসহযোগে অচল রাজস্ব খাত’। প্রতিবেদনে বলা হয়, কড়া নাড়ছে নতুন বাজেট। প্রায় সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। আরেকটি অর্থবছরের বড় তহবিল সংগ্রহের গুরুদায়িত্ব নিতে হবে রাজস্বকর্মীদের। অথচ বাজেট ঘিরে তাঁদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্যমের বদলে এখন ক্ষোভ আর হতাশা।
পুরো রাজস্ব খাত এখন নির্বিকার, ভূমিকাহীন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেশজুড়ে প্রতিটি অফিস স্থবির। থমকে রয়েছে সব কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি আদায়ে একাট্টা হয়ে মাঠে।
সেবা পাচ্ছেন না করদাতা, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। জমা হচ্ছে না রাজস্ব। বন্দরে কাজের ধীরগতি। দৈনন্দিন কাজে কারো মনোযোগ নেই। দেশের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রাজস্ব খাত বলতে গেলে প্রায় অচল। এর মধ্যে রাজস্বকর্মীদের নতুন কর্মসূচি এনবিআর বিভক্তির অধ্যাদেশ বাতিল আর সংস্থার চেয়ারম্যানের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার ‘অসহযোগ’ আন্দোলন।
কয়েক দিন ধরেই এনবিআর বিভক্তি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন সংস্থার কর্মীরা। আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস খাতের মাঠকর্মী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন। দেশের অর্থনীতির প্রাণ এই রাজস্ব খাতের বিভক্তি নিয়ে রাতের অন্ধকারে অধ্যাদেশ জারি করার বিপক্ষে তাঁদের অবস্থান।
সমকাল
‘জামায়াতের পর বিএনপির সঙ্গেও বিবাদে এনসিপি’-এটি দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, একাত্তর প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বানের পর বিএনপির সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছে রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিএনপির সঙ্গে দলটির বিরোধ তৈরি হয়েছে সরকারে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে এনসিপি। সর্বশেষ তা রাজপথে গড়ানোয় বিএনপির সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্য হয়।
সংস্কারের আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিরোধী ছিল এনসিপি। সার্চ কমিটিতে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের দেওয়া নাম থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চার কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। গত এপ্রিল থেকেই বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে এনসিপি বলছে, ইসি একটি দলের প্রতি অনুগত। তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। শুরুতে জামায়াতও একই সুরে কথা বলেছিল।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা তিন দিন জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের সময় মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগীত ইস্যুতে চাপের মুখে পড়ে এনসিপি। নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে আন্দোলন শেষে হতে না হতেই একাত্তর বিষয়ে জামায়াতকে অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানায় নবগঠিত দলটি। এ নিয়ে অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা পরস্পরকে আক্রমণ শুরু করে।
ইত্তেফাক
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর ‘এই ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা জানিয়েছেন, ইসি এখন আর কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহাল নেই। এটি বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয় হিসেবে পরিণত হয়েছে। এটা বিএনপির একটা মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
গতকাল বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে ইসি কার্যালয়ের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী এই হুঁশিয়ারি দেন। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচি দুপুর ২টা ১০ মিনিটে স্থগিত ঘোষণার মধ্যে শেষ হয়। ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ঢাকা মহানগর এনসিপির উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন হয়। বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের তীব্র সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এনসিপির দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কোনটি আগে, কোনটি পরে সেটি নির্বাচন কমিশনের হাতে নেই। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নির্বাচন আগে আর কোন নির্বাচন পরে হবে।
নয়া দিগন্ত
‘মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্তের এখতিয়ার এ সরকারের নেই’-এটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা কর্মকর্তাদের সাথে এক সভায় (অফিসার্স অ্যাড্রেস) সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেছেন, মানবিক করিডোরের মতো স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার বর্তমান সরকারের নেই। শুধু একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
তিনি আরো বলেন, করিডোর বিষয়ে কী ভাবছে অথবা জাতিকে একটি ছায়া যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না- এ বিষয়ে সরকার স্পষ্টভাবে কিছুই জানাচ্ছে না। অনুষ্ঠানের পরের অংশে এক অফিসারের প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেন, কোনো করিডোর দেয়া যাবে না। এর আগে না হলেও ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠানে কর্মকর্তাদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে কোনো করিডোর দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সেনাপ্রধান সর্বোচ্চ মহলে বার্তা দিয়েছেন।
বণিক বার্তা
দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম ‘জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির সাশ্রয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বাজেট প্রণয়নের সময় গত বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফলে এর আমদানি বাবদ বাজেটে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়েছিল। তবে এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে এসেছে। তাই সংশোধিত বাজেটে পণ্যটির আমদানি বাবদ বরাদ্দও সে হিসেবে কমেছে। এতে চলতি অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির সাশ্রয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বিপিসির চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট সম্প্রতি অনুমোদন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সংস্থাটির জন্য জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ মূল বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ বিপিসির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯৯ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা পরিশোধিত ও ১৬ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানির জন্য বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে সংস্থাটির জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ বরাদ্দ কমে ৭৫ হাজার ৯৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এর মধ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ৬১ হাজার ৭২৬ কোটি ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ বিপিসির বাজেট বরাদ্দ ২৩ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা কমেছে।
আজকের পত্রিকা
‘দুই ইস্যুতে মাঠ গরম’-এটি দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে কয়েক দিন ধরে টানা আন্দোলন করছেন তাঁর সমর্থকেরা। বিষয়টি নিয়ে সরব বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে গতকাল বুধবার ইসি কার্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই সমাবেশ থেকে এনসিপির নেতারা ইশরাক ইস্যুতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কর্মসূচির ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। দুই পক্ষের উত্তপ্ত বক্তব্য ও কর্মসূচিতে গরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ।
ইশরাক হোসেনকে মেয়রের চেয়ারে বসাতে চলমান আন্দোলনের সপ্তম দিন গতকাল বুধবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেন বিএনপির নেতা- কর্মীরা। ইশরাক সমর্থকদের আলটিমেটামে সরকার সাড়া না দেওয়ায় সকাল ১০টার পর থেকে মিছিল নিয়ে নগর ভবনসংলগ্ন সড়কে জড়ো হন তাঁর সমর্থকেরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইলে এসে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা কাকরাইল মোড়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার প্রবেশপথের কাছাকাছি অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে যমুনার দিকে যাওয়ার পথ আটকে দেয় পুলিশ। বাংলাদেশ পেশাজীবী জোটের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সড়ক অবরোধের কারণে রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, পল্টনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় সকাল থেকেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
দেশ রূপান্তর
দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ২ জুন টেলিভিশনের পর্দায় বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। সাধারণত জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হলেও গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিলুপ্ত হয়ে যায় দ্বাদশ সংসদ। এ বাজেট চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
জুনের প্রথম সপ্তাহে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ফলে প্রথমবারের মতো বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে সোমবার (২ জুন) বাজেট পেশ করা হবে। আসছে বাজেটে থাকবে না কোনো রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর ও বড় প্রকল্পের বাহাদুরি। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করায় সংকোচনমূলক বাজেটের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকবে সরকারের।
বাজেটে নাগরিকদের স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো ও সামজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। তবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলন।
বাংলাদেশ প্রতিদিন
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতার খবর ‘মেয়র ইস্যুতে রাজনীতিতে ভিন্ন মোড়’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা আট দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সমর্থকরা। আন্দোলন কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে পাল্টা বক্তব্যও এসেছে।
ইশরাক বলছেন, দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। সরকারের দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। অন্তত পাঁচজন উপদেষ্টা এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি কথা বলেছেন। মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশ গতকাল পিছিয়ে আজ দিন রেখেছেন হাই কোর্ট। মেয়রের এ ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে বিএনপির। দলটির শীর্ষ নেতারা সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন। এদিকে ইশরাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আলোচিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্য দলগুলোও এ বিষয়ে রয়েছে সরব। সব মিলিয়ে মেয়র ইস্যুতে রাজনীতি ভিন্ন মোড় নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের দাবিতে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে একযোগে মাঠে থাকা বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে কথার লড়াই চলছে। একে অন্যকে অনেকটা আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলায় দুই দলের সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ততার দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা না করার ইস্যু কেন্দ্র করে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অন্যদিকে শপথ নিতে অনড় ইশরাক হোসেনের জন্য প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিচ্ছে বিএনপি। দাবি উঠছে উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের।