ঢাকা, ১৪ মে ২০২৫, বুধবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

বিয়ের প্রস্তাবই কাল হলো রাজুর

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৫, বুধবার
mzamin

আত্মীয়তার সূত্র ধরেই পরিচয়, প্রেম, অতঃপর বিয়ের প্রস্তাব। আর এই বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোই কাল হলো রাজু আহমদের। জানা যায়, রমজান মাসের শেষ দিন ইফতারের পূর্বে স্থানীয় পীরেরবাজারে যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক তাকে তুলে নেয়া হয় প্রেমিকা সুমাইয়া আক্তারের বাড়িতে। পরে সুমাইয়ার পিতা সুলতান আহমদ পাখির নেতৃত্বে ৫/৬ জন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় চালায় নির্যাতন। হাত-পা ভেঙে ফেলে ও বেধড়ক হাতুড়ি পিটুনিসহ শরীরের নানা অঙ্গহানির লক্ষ্যে পাশবিক নির্যাতন করে। প্রকাশ্যে তুলে নেয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে রাজুর মা পরিজা বেগম (৪৫) ওই বাড়িতে গিয়ে বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে নিরুপায় তার মা ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। ততক্ষণে সুলতান গংরা রাজুকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপাড় গ্রামে। ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও গুরুতর আহত রাজু আহমদ (২০) পুরোপুরি সুস্থ হননি। নির্যাতনের দিন রাতে গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে অবগত করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ব্যস্ত থাকার সুযোগে উল্টো তার উপর পর্নোগ্রাফি মামলা করেন মেয়ের বাবা। দ্রুত পুলিশ মামলাটি এফআইআর করে।

 নিরুপায় পরিজা বেগম ৬ই এপ্রিল মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলি আদালতে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে বিলেরপাড় গ্রামের সুলতান আহমদ পাখি, সুফিয়ান মিয়া, সুরমান মিয়া, বালিয়াটিলার আবুল মিয়া, কমলগঞ্জের জুগিবিলের হারুন মিয়াকে আসামি করা হয়। আদালত বিষয়টি মামলা আকারে রুজু করার জন্য কুলাউড়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন এবং ৪ঠা জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের সময়সীমা বেঁধে দেন। আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, বিলেরপাড়ের সুলতান আহমদ পাখি ও ওমান প্রবাসী মনসুর মিয়ার স্ত্রী পরিজা বেগম সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন। সেই সুবাদে তাদের মেয়ে-ছেলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। মন দেয়া- নেয়ার একপর্যায়ে ছেলেপক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবটি রাজুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মেয়ের বাবা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পরিবারে মনোমালিন্য দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বসে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে ছেলেকে বারণ করা হয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে রাজুকে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতনের বিষয়টি জনমনে ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিকটিম রাজু জানায় আমি সবকিছু মেনে নিয়েছি। মেয়েটার অন্যত্র বিয়েও হয়েছে। কিন্তু আমাকে পঙ্গু করেও ওরা থামেনি। মিথ্যা অভিযোগে মামলা দেয়ায় আমি বাড়িছাড়া। পরিজা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে দেয়। থানায় মামলা করতে গেলে জানায়- চিকিৎসা শেষে আসার জন্য। পরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এ ব্যাপারে মেয়ের বাবার সঙ্গে  ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল বলেন, তারা উভয়ই আত্মীয়। ছেলেটি গুরুতর আহত হয়। জেনেছি এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ সালিশি বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় বৈঠক মুলতবি করা হয়।
কুলাউড়া থানার ওসি গোলাম আফছার বলেন, আহত হয়ে থানায় আসলে ছেলের মা’কে মামলা দিতে বলা হয়েছিল। পরে তারা চিকিৎসা নিতে গিয়ে আর আসেনি। তিনি আদালতে মামলা করেছেন আমরা সেটি এফআইআর করেছি। উভয়পক্ষের মামলা তদন্তনাধীন বলে জানান তিনি।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status