বাংলারজমিন
৮২ কোটি টাকার প্রকল্প
তাহিরপুর সীমান্তের চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট সড়ক নির্মাণে অনিয়ম
এম. এ. রাজ্জাক, সুনামগঞ্জ থেকে
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবারসুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের স্থল শুল্ক স্টেশন চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট সড়ক নির্মাণে অনিয়ম ও প্রয়োজনের চেয়ে নিচু করে নির্মাণকাজ করার অভিযোগ উঠেছে। ৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশের কাজ যেভাবে হচ্ছে, তাতে আমদানিকারকসহ এলাকাবাসীর উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল লিমিটেড মধ্যনগর সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তাহিরপুর সীমান্তের অন্যতম শুল্ক স্টেশন চারাগাঁও এরিয়ার ১৩ কিলোমিটার অংশের নির্মাণকাজ করছে। ৮২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের সবচেয়ে জরুরি অংশ হলো চারাগাঁও শুল্ক এলাকা। এ শুল্ক স্টেশনে প্রায় ২০০ আমদানিকারকের কয়লার ডিপো রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা কয়লা এখানকার ডিপোতে রেখে সারা দেশে বিক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি চারাগাঁও অংশে সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের জিরো পয়েন্টে ভারতীয় ট্রাক নামার যে সড়ক হচ্ছে তা নিচু করে ব্যবসায়ীদের জন্য বিপদ তৈরি করা হচ্ছে।
এখানকার ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সড়কের ডিজাইন করার সময় বা এখন কাজ করার সময় কেউ তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেনি। এখানকার প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে ব্যবসা করে সরকারকে রাজস্ব দেন তারা। অথচ সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ যেনতেনভাবে করা হচ্ছে। তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক সমিতির চারাগাঁও শাখার কোষাধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার বলেন, চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের উপর দিয়ে সড়কের কাজ হচ্ছে। এখানকার জিরো পয়েন্ট থেকে যে পথ চারাগাঁও ডিপোতে এসেছে, ওই পথের একটি অংশ অপেক্ষাকৃত নিচু করে করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শুল্কবন্দরের সিরাজের দোকান থেকে হেকিমের দোকান পর্যন্ত অংশ নিচু করায় বেশি বিপদ হবে তাদের জন্য। চারাগাঁও আমদানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি সামছুল হক জানান, ভারত থেকে তাহিরপুর সীমান্তের চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনে কয়লা নামে। জিরো পয়েন্ট থেকে যে পথ দিয়ে কয়লা নামে সেই পথে সড়ক হচ্ছে। সড়কের উত্তর দিকের প্রায় ৫ মিটার ছেড়ে দিয়ে দক্ষিণ দিকে করা হচ্ছে। সড়কের গার্ডওয়ালে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়ক ডিজাইনের সময় স্থানীয় অভিজ্ঞদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। এখানে সড়ক নিচু করে অর্থ লুটপাটের ধান্দা করা হচ্ছে।
চারাগাঁও আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, সড়ক উঁচু না করলে, এটি যানবাহন ও মানুষের চলাচলের পথের বদলে ছড়া হয়ে গলার কাঁটা হবে। ডিপোতে মজুত করা কয়লা পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল লিমিটেডের প্রকৌশলী শফিউল আলম জানান, তারা ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করছেন। ডিজাইন পরিবর্তন করতে হলে এলজিইডি’র দায়িত্বশীলদের করতে হবে। দু’চারটা ইট হয়তো খারাপ গেছে, তারা ভালো ইট লাগানোর চেষ্টা করছেন। এখানে অনিয়মের কিছু হচ্ছে না। সুনামগঞ্জের এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, হাওর এলাকার সবাই চায় সড়ক উঁচু করে করতে, কিন্তু আরসিসি’র সড়ক নিচু করে করতে হয়। সাবমার্জেবল থাকে। আমি কয়দিন আগে গেছিলাম, তখন তো এখানে কোনো ইট দেখতে পাইনি। এখন যদি ইটসহ অন্য বিষয়ে অনিয়ম হয়ে তাকে, তাহলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।