ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

পায়রা বন্দরের ১৪শ’ একর কৃষিজমি লিজ দেয়ার ঘটনায় লালুয়ায় অসন্তোষ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার

পায়রা বন্দরের অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত এক হাজার ৪০০ একর কৃষি জমির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের কাছে লিজ না দেয়ার খবরে অন্তত তিন হাজার পরিবারে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে শান্ত জনপদ লালুয়া অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকের দাবি পায়রা বন্দরের নিয়মনীতি অনুসরণ করে তারা এক বছরের জন্য এই জমি লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু বন্দরের সার্ভেয়ারসহ একটি চক্র বাড়তি মুনাফার লোভে স্থানীয় কৃষক নয় এমন মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীকে এই জমি লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ফলে জীবিকার অবলম্বন চাষাবাদ হারানোর শঙ্কায় এসব কৃষক পরিবারের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন। লিজ প্রক্রিয়ায় থাকা জমির অবস্থান লালুয়া, নয়াকাটা ও চান্দুপাড়া মৌজায়।
কৃষক আনসার উদ্দিন জানান, আমরা ৫০-৬০ বছর ধরে এসব জমিজমা আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। অধিগ্রহণের পর কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বাড়িঘর জমিজমা ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছেন। যেসব জমিতে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে তা নিয়ে কেউ কোনো টুঁ শব্দ করেননি। যে জমি অব্যবহৃত রয়েছে তা যার যার মতো চাষাবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বছর থেকে এই জমি রাজস্ব আয়ের স্বার্থে এক বছরের জন্য লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরপরও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়মনীতি অনুসরণ করে লিজ নেয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের কথামতো ৫০ একর জমি লিজ নেয়ার জন্য তিনি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন।
কৃষকরা জানান, অধিগ্রহণের ফলে তারা শতকরা ৯৫ জন কৃষক পরিবার ২০২১ সালের পর থেকে বেকার হয়ে গেছেন। কাজ-কর্ম নাই। তারপরও বন্দরের অব্যহৃত যেটুকু জমি রয়েছে তাতে ধানসহ রবিশস্য আবাদ করে পরিবার পরিজন নিয়ে যতদিন সম্ভব জীবিকার যোগান দেবেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে তারা পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এমন আকুতি করেছেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেক কৃষক যথাযথ রাজস্ব পরিশোধ করার শর্ত পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন। সেই অনুসারে তাদের মধ্য থেকে কৃষক প্রতিনিধিরা লিজে অংশ নেন। কিন্তু হঠাৎ করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাদ দিয়ে একটি অকৃষকচক্রকে এই ১৪শ’ একর কৃষি জমি লিজ দেয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। তাদের সাফ কথা, যতদিন এ জমি চাষাবাদের জন্য লিজ দেয়া হবেÑ ততদিন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেটের খাবার মেটানোর জন্য দিতে হবে।
কৃষক জসিম হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার বাড়িঘর, পুকুর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আমরা এখনো তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ জমির টাকা তুলতে পারিনি। ঘরবাড়ি গাছপালার টাকা তুলতে ৭-১২ পারসেন্ট ঘুষ দিতে হয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন লিজ মানির বিনিময়ে যতদিন সম্ভব চাষাবাদ করবো, তা যদি না হয় তাহলে আমরা বসে থাকবো না। দেশের উন্ননের জন্য জমি দেয়া হয়েছে। তারা এখন রাজস্ব আয়ের নামে ব্যবসা করবে। আর যারা জমির মালিক ছিলাম তারা চাষাবাদ করতে পারবে না, তা হবে না। সকলের ভাষ্য, জমিজমা নেয়ার পর থেকে বেকার হয়ে আছেন। তাই তারা চাষ করে অন্তত যতদিন সম্ভব ফসল ফলাবেন- এমন মানবিক আবেদন করেছেন। বিষয়টি বিবেচনা না করলে পথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই বলে জানান অধিকাংশ কৃষক।
উল্লেখ্য, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত ১৪শ’ একর কৃষি জমি এক বছরের জন্য রাজস্ব আয়ের স্বার্থে এ বছর থেকে লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। লালুয়ার তিনটি মৌজার এ জমিকে ২৪টি ব্লকের মাধ্যমে লিজ দেয়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা লিজ মানির বিনিময় এ জমি চাষাবাদের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যরা তাদের জমি চাষাবাদ করার সুযোগ দেয়ার জন্য নৌ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এ ব্যাপারে পায়রা বন্দরের সহকারী পরিচালক (স্টেট) মো. ইউসুফ জানান, ২৪টি ব্লকের এক হাজার ৪০০ একর কৃষি জমি লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে মোট ১২০টি আবেদন জমা পড়েছে। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে বন্দরের মাননীয় চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় লটারির মাধ্যমে যথাযথভাবে এই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রত্যকটি ব্লকে একাধিক আবেদন পড়ায় লটারি করা হয়েছে। এখানে কোনো রাখঢাক নেই।

 

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status