ঢাকা, ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

সহযোগীদের খবর

তিন সংস্থার সমন্বয়ে দেশ ছাড়েন হামিদ!

অনলাইন ডেস্ক

(৪ ঘন্টা আগে) ১০ মে ২০২৫, শনিবার, ১১:০৮ পূর্বাহ্ন

mzamin

দেশ রূপান্তর

‘তিন সংস্থার সমন্বয়ে দেশ ছাড়েন হামিদ!’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশ ছাড়া নিয়ে চলছে তোলপাড়। ঘটনাটি জানাজানির পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মিছিলও হয়েছে।

কীভাবে তিনি দেশ ছাড়লেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন, আবদুল হামিদ দেশ ছেড়ে চলে যাবেন সেই তথ্য ছিল না। অথচ তিনি ভিআইপি প্রটোকল নিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি গাড়িতে বসেই ইমিগ্রেশন শেষ করেছেন। তার দেশত্যাগের বিষয়টি বিমানবন্দরের প্রভাবশালী তিন গোয়েন্দা সংস্থার সমম্বয়ে জানাজানি করা হয়েছিল বলে একটি সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় পুলিশের চার কর্তাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই সাবেক রাষ্ট্রপতি থাইল্যান্ড গেছেন। তিনি আসার আগেই তার প্রটোকল অফিসাররা বিমানবন্দরে আসেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়। বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহীও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। আবদুল হামিদ বিমানবন্দরে উত্তর দিক সংলগ্ন ভিআইপি গেইটের সামনে আসেন। ইমিগ্রেশন শেষ করার আগ পর্যন্ত তিনি গাড়িতেই বসা ছিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে তার সামগ্রিক কাজ শেষ হয়।

তিনি আরও বলেন, উড়োজাহাজ ছাড়ার আগ পর্যন্ত বিমানবন্দরে কর্মরত ঊর্ধ্বতনরা তার সঙ্গে ছিলেন। দফায় দফায় তার বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করা হয়। একটি সংস্থার তরফে জিডি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানোকে জিডি বলা হয়। অথচ পুলিশের চার কর্মকর্তাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আবদুল হামিদের দেশত্যাগের আগে ও পরে কী হয়েছে সেই বিষয়ে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। নোটে বলা হয়েছে, ‘টিজি৩৪০ বিমানযোগে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাংককগামী যাত্রী মো. আবদুল হামিদ (ফরমার প্রেসিডেন্ট) ভিআইপি টার্মিনালে এলে টার্মিনাল ইনচার্জ ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যারকে অবগত করেন। আলফা-১১ স্যার দুটি গোয়েন্দা সংস্থাকে অবগত করেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সহকারী পরিচালক ও আরেকটির জিএসও-১ অনাপত্তি প্রদান করেন। দুটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যার এসএস ইমিগ্রেশন (অপারেশন), অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন ও ডিআইজি ইমিগ্রেশন স্যারকে অবগত করেন। অ্যাডিশনাল ডিআইজি ইমিগ্রেশন স্যার এসবি চিফ স্যারের রেফারেন্সে ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যারকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশ প্রদান করেন। ওসি ইমিগ্রেশন আলফা-১১ স্যার এসবির ওপরে উল্লিখিত সিনিয়র স্যারদের নির্দেশে ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অনাপত্তি সাপেক্ষে এবং ইমিগ্রেশন ফরট্র্যাক সিস্টেমে কোনো বিরূপ মন্তব্য না থাকায় ভিআইপি টার্মিনালে কর্তব্যরত ইনচার্জকে ইমিগ্রেশন করার নির্দেশ প্রদান করেন। টার্মিনাল ইনচার্জ ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, উক্ত যাত্রীর সঙ্গে তার পুত্র রিয়াদ আহমেদ ও তার শ্যালক ডা. এএনএম নওশাদ খান গমন করেন।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুপিসারে নয়, বিমানবন্দরে সব গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ঢাকা ত্যাগের সময় সাবেক এ রাষ্ট্রপতি ভিআইপি টার্মিনাল ব্যবহার করেন এবং সার্বিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তিনি প্রায় ৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন বিমানবন্দরে। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছার পর থেকে দেশত্যাগ পর্যন্ত কোন কর্মকর্তা কী করেছেন, কে কার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমিগ্রেশন সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছেন-এ বিষয়ে একটি  গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গোপনীয় প্রতিবেদনটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

তারা জানান, ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। পদাধিকারবলে তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট (লাল পাসপোর্ট) ব্যবহার করতেন। পরে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি কূটনৈতিক পাসপোর্ট সমর্পণ করে সাধারণ পাসপোর্ট নেন। সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার করেই তিনি ইমিগ্রেশন পার হন।  কোনো সংস্থার কাছে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। গত ১৪ জুলাই কিশোরগঞ্জ সদর থানায় জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের বিষয়টি যারা জানার তারা সবাই আগ থেকেই জানতেন। চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বিনা কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম এবং এসবি কর্মকর্তা মো. সোলায়মানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাছাড়া কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে পুলিশের মনোবলে প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, আবদুল হামিদ বুধবার রাত ১১টায় বিমানবন্দরে আসেন। তার আসার বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়। লুকোচুরির বিষয় ছিল না। পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আশা করি, কমিটি প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে প্রতিবেদন দেবে।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মতিউর রহমান শেখ জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) কীভাবে পাসপোর্ট পেয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। কারা তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন তা উদঘাটনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। এই মুহূর্তে আর কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রথম আলো

দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ‘আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে’। খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাতভর অবস্থান এবং মিন্টো রোডের মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভের পর গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত তাঁরা ‘শাহবাগ ব্লকেড’-এর ঘোষণা দিয়েছেন।

একই দাবিতে আজ শনিবার বেলা তিনটায় শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সারা দেশের জুলাই অভ্যুত্থানের স্থানগুলোতেও গণজমায়েত কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এই আন্দোলনের উদ্যোক্তারা বলেছেন, শাহবাগ থেকে তাঁদের ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থান পর্ব’ শুরু হবে।

গতকাল রাতেও শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। নানা স্লোগান ও বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর আহ্বানে গত বৃহস্পতিবার রাতে যমুনার সামনে অবস্থানের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ওই রাতে ও গতকাল শাহবাগের কর্মসূচিতে ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছেন। আছেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিস, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও।

এই বিক্ষোভ চলার মধ্যেই গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনটি দাবির কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দাবিগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এরপর এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অনেকেই একই পোস্ট দিয়েছেন।

যুগান্তর

‘দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল ডিএসবি’-এটি দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে সর্বত্র। বেশ চাপে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ফ্যাসিস্টের দোসর কিভাবে দেশ ত্যাগ করলেন তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে যুগান্তরের হাতে।

সূত্র বলছে, গত ২৬ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের ডিএসবির পুলিশ সুপার এক গোপনীয় জরুরি বার্তায় রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সদর দপ্তরে আবদুল হামিদসহ ৪৫ জনের একটি তালিকা পাঠিয়ে তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। ওই তালিকায় ৩৯ নম্বরে ছিল আবদুল হামিদের নাম। গোপনীয় ওই চিঠির স্মারক নম্বর ৪৫০। চিঠিতে বলা হয়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলায় রুজু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এসব আসামির বিদেশ গমনাগমন রোধের প্রয়োজনীয়তা আছে।

গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক মামলায় আবদুল হামিদকে আসামি করার প্রেক্ষাপটে তার দেশত্যাগে এই নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এসবির ইমিগ্রেশন শাখায় এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা অদ্যাবধি যায়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চিঠি দেওয়ার পর আবদুল হামিদের দেশত্যাগের কোনো সুযোগ থাকার কথা না। এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার এসবি প্রধানসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

কালের কণ্ঠ

দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর ‘সরকার নিষিদ্ধ করলে আপত্তি নেই বিএনপি-জামায়াতের’। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াত এক ধরনের কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এবং গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি জানানো হচ্ছে সে বিষয়ে দল দুটি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে সরকারি উদ্যোগে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলে আপত্তি জানাবে না দল দুটি। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের বেশির ভাগ শরিকদের অবস্থানও প্রায় অভিন্ন।

এ বিষয়ে বিএনপির বরাবরই অবস্থান হচ্ছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনা হোক। গত ১০ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে লিখিত বক্তব্যেও বিএনপি এ দাবি জানিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি তোলা হয়েছে তার মূল নেতৃত্বে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ধর্মভিত্তিক দলগুলো। গতকাল শাহবাগ মোড়ে এনসিপির আন্দোলনে ধর্মভিত্তিক দলগুলো অংশ নিয়েছে।

জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা স্পষ্ট করে কিছু না বললেও দলটির নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ শিবিরের নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা কৌশলী অবস্থানে রয়েছেন।

সমকাল

‘রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরাতে চাইছে সরকার’-এটি দৈনিক সমকালের প্রথম পাতার খবর। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়িতে বার্ক অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের উদ্যোগে ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, অভিযোগ উঠেছে- সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদেরও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রও হয়তো তৈরি করতে চাইছে। এই বিষয়গুলো ঘুরেফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল শাহবাগ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেছে ছাত্র-জনতা। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা অবস্থান এবং শুক্রবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিশাল সমাবেশ শেষে বিকেল থেকে শাহবাগে অবস্থান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ জুলাই অভ্যুত্থানে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

শাহবাগে এনসিপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত ছাত্র মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। এই অবরোধে যেন ফিরে এসেছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের উত্তাল দিনগুলো, যা ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এদিকে একই দাবিতে গতকাল বিকালে উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা।

গতকাল বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের কাছে মিন্টো রোডের মুখে ফোয়ারার পাশে তৈরি করা মঞ্চ থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করার ঘোষণা দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শ্লোগান দেন: ‘ব্যান করো, ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘বাহ ইন্টেরিয়াম চমত্কার, খুনিদের পাহারাদার’  ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘খুনি লীগের ঠিকানা এ বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে’ ইত্যাদি।

বণিক বার্তা

‘উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ড. ইউনূসের অনুরোধের সাড়া মেলেনি এখনো’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরুর ৩৯ দিনের মাথায় ক্ষমতা গ্রহণ করে। কিন্তু ডলারের তীব্র সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট এবং অর্থ পাচারের কারণে নানামুখী সংকটে তখন দেশের অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রীতিমতো পিষ্ট সাধারণ মানুষ।

এমন পরিস্থিতিতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিতে অনুরোধ করা হয়, যা অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই জানান। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েও তিনি দেশ পুনর্গঠন ও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে সহায়তা করতে দাতা সংস্থাগুলোকে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও সে আহ্বানে এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের নয় মাস (জুলাই-মার্চ) পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতি মিলেছে ৩০০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের মতো, যা গত অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ৫৮ শতাংশ কম। অথচ আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) একই সময় প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ৭২৪ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলারের।

দায়িত্ব নেয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ ও আর্থিক খাত সংস্কারে দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বড় আকারে অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এছাড়া পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সহায়তার বাইরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আরো ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চায় ড. ইউনূসের সরকার। এর মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয় আইএমএফের কাছে। আর এক বিলিয়ন করে ২ বিলিয়ন ডলার দিতে বিশ্বব্যাংক ও জাইকাকে অনুরোধ জানানো হয়।

আজকের পত্রিকা

দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘আ.লীগ নিষিদ্ধের প্রস্তুতি’। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ‘গণহত্যাকারী’ দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে গতকাল শুক্রবার সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে।’ সে সময় পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিও আছে। এই দাবির প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে সংশোধনী আনার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।

এ নিয়ে সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের পক্ষ থেকে মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

বাংলাদেশ প্রতিদিন

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতার খবর ‘রাজনৈতিক ঐক্যের খোঁজে বিএনপি’। খবরে বলা হয়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। দাবি আদায়ে ‘সর্বদলীয় জনমত’ গঠনের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর পাশাপাশি ডান, বাম, ইসলামি ছাড়াও ছোটবড়, নতুন-পুরোনো সব দলের সঙ্গে বৈঠক করছে দলটি। লক্ষ্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আদায়। ইতোমধ্যে অর্ধশত দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। দাবি আদায়ে এখনই আন্দোলনের পথে না গিয়ে সংলাপ ও রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমাধান খুঁজছে দলটি।

ঐকমত্য কমিশনেও বিএনপির অবস্থান হলো ন্যূনতম সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারাই রাজপথে ছিলেন, আমরা সবার সঙ্গে কী করা যায় তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। এ আলোচনা শেষে কী করা যায় বা কী করা যায় না তা দেশবাসীকে জানানো হবে। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে সর্বদলীয় ঐক্য ও জনমত গঠন করতে চায় বিএনপি।

১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বলে জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। প্রতিক্রিয়ায় ‘সন্তুষ্ট নয়’ বললেও রাজপথে আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে না। পরিবর্তে সংলাপকেই কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা। ১৯ এপ্রিল ১২-দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করে দলটি। ওইদিন এলডিপির সঙ্গেও আলাদা বৈঠক হয়। এ লক্ষ্যে সিপিবি, বাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি ও গণসংহতি আন্দোলনের মতো দল ছাড়াও অন্তত ৫০টি ছোট ও মাঝারি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি/ ‘নিয়তির সন্তান’

বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় পুলিশ/ ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ, এসআই ক্লোজড

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status