খেলা
যুদ্ধের প্রভাব
শঙ্কায় বাংলাদেশ পাকিস্তান সিরিজ
ইশতিয়াক পারভেজ
৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
পাকিস্তান সফরে কি যাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের! ভারত ও পাকিস্তান কি বাংলাদেশ সফরে আসবে। দেশের ক্রিকেটে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এ নিয়ে শঙ্কা। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এ নিয়ে এক জরুরি বৈঠকও হয়। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে সেই সে আলোচনায় ছিলেন বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকও। সকালেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানে পিএসএল খেলতে যাওয়া দেশের দুই তরুণ ক্রিকেটার রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানাকে নিয়ে বিসিবি বেশ চিন্তিত। কারণ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধ। সংঘাত মানেই বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা! যার প্রভাব থেকে রেহায় পায় না জীব থেকে শুরু করে শহর কিংবা গ্রাম। সেখানে ক্রিকেটতো মামুলি ব্যাপার। তাইতো বিশ্বের দুই বড় শক্তি ক্রিকেট শক্তি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধটা লেগেই চিন্তার সঙ্গে শঙ্কাও তৈরি করেছে। বুধবার রাতে ভারত বিমান ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানে। তার জের ধরে দেশ দিচ্ছে পালটা জবাব।
এরই মধ্যে দুই দেশের সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বাদ পড়েনি ক্রিকেটও। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় ধরণের সংঘাতের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটেও। এ নিয়ে ফারুক আহমেদ দৈনিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন তাদের চিন্তার কথা। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এট বড় একটা চিন্তার বিষয়। ভারত-পাকিস্তান প্রবেশি দেশ। আমাদের পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। যে পরিস্থিতি তাতে আমাদের ক্রিকেটারদের পাঠবো কিনা সেটি নিয়েই আমরা বিসিবিতে জরুরী আলোচনায় বসেছি। আমার বেশ কয়েকজন পরিচালকও আছে। আমরা এখানে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিবো।’ বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে এ মাসের ২৫ মে থেকে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত ৫টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে ফয়সালাবাদ ও লাহরে। তার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে খেলতে দুটি ম্যাচ। সব কিছু ঠিক থাবকলে ২০ মেতেই পাকিস্তানে পৌছানোর কথা টাইগারদের। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়াতে এই সিরিজটি নিয়েভ ভীষণ শঙ্কা। তবে এমনটা যে হতে পারে তার সূত্রপাত বেশ কিছু দিন আগে থেকেই। গত ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তানের সঙ্গে ্তুসীমান্ত-পারাপার যোগাযোগ্থ রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত সরকার। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছে ভারত সামরিক হামলা চালাতে যাচ্ছে পাকিস্তানে। যে কারণে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিরপত্তা পর্যবেক্ষক দল পাঠনো উচিত ছিলো বলে মনে করেন দেশের ক্রিকেট বোদ্ধারা। কিন্তু এখনো সেটি করা হয়নি। এই বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েছে বিসিবির নিরাপত্তা বিভাগের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম। তবে তারা গতকাল আলোচনা করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি। মঞ্জুর বলেন, ‘আমাকে এই বিভাগের চেয়ারম্যান করা হয়েছে তবে আমি এখনো কাজ শুরু করতে পারিনি। আজ (গতকাল) বিসিবিতে যাচ্ছি। পাকিস্তানে ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনা করবো। এছাড়াও আমাদের পাকিস্তানে জাতীয় দলে যাওয়ার কথা, সেটি নিয়েও আলোচনা হবে। এটা বলতে পারি আমরাতো দেশের ক্রিকেটারদের ঝুকিতে ফেলতে পারবোনা।’
শুধু পাকিস্তানে সফরে পাওয়া নয়, তারাও বাংলাদেশে আসবে জুনে। এরপর আগষ্টে ভারতের বাংলাদেশ সফরেও আসার কথা রয়েছে। কিন্তু দুই দেশের যুদ্ধের কারণে সবগুলো সিরিজ শেষপর্যন্ত হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে ভীষণ শঙ্কা। কারণ বাংলাদশে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে ভারতকে। এ নিয়ে মঞ্জর আলম বলেন, ‘ দেখেন ভারত সফরে আসবে না সেটি তাদের একটি পত্রিকাতে প্রকাশ হয়েছে। কোন নিশ্চিত কিছুই নয়, তাদের বোর্ড থেকে এমন কোন কিছু বিসিবিকে জাননো হয়নি। কিন্তু আমাদের্ সবকিছু নিয়েই আলোচনা করতে হবে। প্রথমতো পাকিস্তানে যে আমাদের ক্রিকেটাররা কোন রকম যে ক্ষতির মুখে পড়দে না হয় তা নিশ্চিত করা। এরপর সফরে কোন সমস্যা আছে কিনা সেটি নির্নয়র করে ব্যবমস্থা নেয়া। যে কোন ধরেণের ঝুকি নিয়ে সফর না করতে হয়। এরপর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশও ক্রিকেটের জন্য শতভাগ নিরাপদ ও যে কোন দেশকে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপতবতা দিতে সক্ষম সেটি নিয়েও পরিকল্পনা গুলো সেট করে রাখা। আমরা জিম্বাবুয়েকে যে নিরাপত্তা দিয়েছে তার চেয়ে তিনগুন বেশি নিরাপত্ততা দেয়া হবে ভারত ও পাকিস্তানকে। আমাদের বিশ্বাস সব ঠিক হয়ে যাবে দ্রুতই।’
তবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রভাব থেকে বের হওয়া কঠিন বলে মনে করেন বিসিবির এক সাবেক পরিচালক। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দেখেন আমরা চাই বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন দুই দেশের যুদ্ধের কোন ধরণের প্রভবা পড়ুক। কিন্তু আমরা চাইলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রনে নেই। আপনি কেন জেনে বুঝে একটা যুদ্ধে আক্রান্ত দেশে ক্রিকেটারদের খেলতে পাঠাবেন। ক্রিকেটারদের বিন্দু মাত্র কিছু হলে দায় নিবে কে! শুধু তাই নয় যারা এখন পিএসএল খেলতে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এখনই ফিরিয়ে আনা উচিত।’