ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

এমসি’র ছাত্রাবাসের ধর্ষণের বিচার সাড়ে ৪ বছর পর শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

মাঝখানে কেটে গেছে সাড়ে চার বছর। আসামি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ফলে আইনের ফাঁকফোকরে নানা প্রতিবন্ধকতা। অথচ মামলার তদন্তকালে পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তি। ছয় আসামির ডিএনএ টেস্টে মিল পাওয়া যায়। এটি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের আলোচিত ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনা। আশার কথা হলো- দীর্ঘদিন পর সকল আইনি জটিলতা কাটিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে আলোচিত এ ধর্ষণকাণ্ডের বিচার। উচ্চ আদালতের সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলার বিচার একসঙ্গে শুরু হলো। ২০২০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর বিকালে দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারযোগে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। এ সময় কয়েকজন যুবক ওই স্বামী ও তার স্ত্রীকে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ তাদেরকে জোরপূর্বক জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এরপর স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের পঞ্চম তলা বিল্ডিংয়ের সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই গৃহবধূকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। তারা দম্পতির সঙ্গে থাকা টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আটকে রাখে তাদের প্রাইভেটকারও। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা করেন। 

গণধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগ কুর্শী বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার পুত্র শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের পুত্র অর্জুন লস্কর, দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রবিউল ইসলাম, কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির সালিক আহমদের পুত্র মাহফুজুর রহমান মাসুম, সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার মৃত সোনা মিয়ার পুত্র আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের পুত্র মিজবাউল ইসলাম রাজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ঘটনার মাত্র ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেয়া হয়। গণধর্ষণের পর পুলিশ ও র‌্যাব ৮ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে। তারা ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের গডফাদার রনজিত সরকারের অনুসারী। গ্রেপ্তারের পর ৮ আসামির সকলেই অকপটে একেবারে সহজ-সরলভাবে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। 

আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সী ওই নববধূকে সরাসরি গণধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। ডিএনএ রিপোর্টে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর ও মাহবুবুর রহমান রনির ডিএনএ মিল পাওয়া যায়। এদিকে, আইনুদ্দিন ও মিজবাউল ইসলাম রাজনের ডিএনএ মিল পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ঘটনার পর থেকে আসামিরা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, গত ১৭ই মার্চ সোমবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে করা লিভ টু আপিল বাতিলের আদেশ দিয়ে মামলা দুটোর নথিপত্র ৩০ দিনের মধ্যে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের আদেশ দেন। 

এর আগে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে লিভ টু আপিল প্রত্যাহারের আবেদন করা হলে ওই দিন এ বিষয়ে শুনানি শেষে উচ্চ আদালত ওই আদেশ দেন। উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে বহুল আলোচিত এই ধর্ষণ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, মামলার পরবর্তী তারিখ হচ্ছে ১৩ই মে। এদিন আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। আদালতে বিচার শুরু হলেও এখনো সশরীরে বাদী আদালতে আসেননি। পরবর্তী তারিখে তার উপস্থিত থাকার কথা। তিনি বলেন, দুটো মামলার বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করার জন্য প্রথম থেকেই বাদী পক্ষ বলে আসছে। কিন্তু ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পদে পদে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে আপিল দায়ের ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। শেষ পর্যন্ত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে একইসঙ্গে দুটো মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status