অনলাইন
সহযোগীদের খবর
বিএনপি সমঝোতা চায়, ক্ষমা ও আওতা ঠিক হবে পরে
অনলাইন ডেস্ক
(১৪ ঘন্টা আগে) ৩ মে ২০২৫, শনিবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৭:১৭ অপরাহ্ন

সমকাল
‘বিএনপি সমঝোতা চায়, ক্ষমা ও আওতা ঠিক হবে পরে’-এটি দৈনিক সমকালের প্রধান শিরোনাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদের বাইরে সংবিধান সংস্কার আইনানুগ হবে না বলে মনে করছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হোক–তাও কাম্য নয় দলটির। আওয়ামী লীগের বিচার চায় বিএনপি; তবে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ নয়। সমকালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজনীতির জরুরি সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহাম্মদ।
সমকাল: বিএনপির ৩১ দফায় বলা হয়েছে–ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমতা নিশ্চিত করা হবে। সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহালের কথা বলা হয়েছে। একে সাংঘর্ষিক মনে করেন কিনা?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: সংবিধান ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে শুরু। পঞ্চম সংশোধনীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানের প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করলেও ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমতা নিশ্চিত করা হয়। সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৪১ অনুচ্ছেদে ধর্ম পালন ও প্রচারের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এত সুরক্ষা সংবিধানে এ কারণেই রাখা হয়েছে, যাতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সমতা থাকে। এ কারণে সংবিধানের মূলনীতিতে ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করলেও ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে না। বৈষম্য হবে না। বরং বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর আবেগ-অনুভূতিকে সম্মান দেওয়া এবং ধারণ করা হবে।
সমকাল: বিএনপি ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ‘ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কমিশন’ গঠন করার কথা বলছে। রিকনসিলিয়েশন বা সমঝোতা কি আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য হবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ : রিকনসিলিয়েশনের সেরা নজির রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। মূল কথা হচ্ছে, রিকনসিলিয়েশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে স্থিতিশীলতা আনা। কত লাখ, কত হাজার মানুষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়? তা করতে গেলে তো রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। ভালো হচ্ছে, রিকনসিলিয়েশনের মাধ্যমে সমাধানের দিকে যাওয়া। বিএনপি সেদিকে গেছে, যাতে রাষ্ট্রে শান্তি, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়।
সমকাল: আওয়ামী লীগের যারা সরাসরি অপরাধে যুক্ত ছিলেন না, এটা কি তাদের রাজনৈতিক পরিসর করে দেওয়ার চিন্তা? আর আওয়ামী লীগের যারা পালিয়ে গেছেন, তারা কি এর অন্তর্ভুক্ত হবেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: কারা রিকনসিলিয়েশনের সুযোগ পাবে, তা বিধিবিধানে উল্লেখ থাকবে। বিএনপি রিকনসিলিয়েশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রে শান্তি বজায় রাখতে চায়– এটাই মূল কথা।
সমকাল: এই বিধিবিধান কি প্রস্তাব করা হয়েছে? ৩১ দফা প্রণয়নের সময় কি এর পরিকল্পনা করা হয়েছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এখনও বিস্তারিত বলার সময় আসেনি। বিএনপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তখন সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে, রিকনসিলিয়েশন কমিশন কীভাবে হবে; বিধিবিধান কী হবে।
সমকাল: বিএনপি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ৩১ দফা দিয়েছে। এর পর ৫ আগস্ট ঘটেছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত ফেব্রুয়ারিতে সমকালকে বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দিক থেকে রিকনসিলিয়েশন কমিশনের প্রস্তাব আছে’। এর মাধ্যমে কি আদতে আওয়ামী লীগকে সাধারণ ক্ষমার কথা বলা হচ্ছে? বা বিএনপিও একই রকম ভাবছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এখনই বিস্তারিত বলব না। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তখন ব্যাপকভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে। তখন ঠিক হবে, কারা রিকনসিলিয়েশনের আওতায় পড়বে।
সমকাল: সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গেও বিএনপির মতৈক্য হচ্ছে না। অন্যেরা আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষ চাইছে। অতীত বলছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংসদ নির্বাচনে ৪০ থেকে ৪৮ শতাংশ ভোটে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে সংবিধান বদল করেছে, যা সংঘাত সৃষ্টি করেছিল। আনুপাতিক উচ্চকক্ষ থাকলে অমন পরিস্থিতি হতো না বলে এর সমর্থকরা যুক্তি দিচ্ছেন। তারপরও বিএনপি কেন আনুপাতিক উচ্চকক্ষের বিরোধিতা করছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: সংবিধানকে গণতান্ত্রিক করতে বিএনপিই সংস্কারের কথা বলেছে। এ অঙ্গীকার এখনও রয়েছে। সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। নিম্নকক্ষে বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে যে সংশোধনী আনা হবে, তাতে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে ৯০ শতাংশের বেশি মিল থাকবে। কিন্তু উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতি রাষ্ট্র পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি করবে।
সমকাল: ১৯৯১ সালে একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীর সময় বিএনপির তো দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। বিরোধী দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করেছিল। ভবিষ্যতে তা হতে অসুবিধা কোথায়?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: ১৯৯১ সালে সংসদীয় পদ্ধতি চালুর রূপরেখায় তিন জোট সই করেছিল। কিন্তু এখন আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষে ঐকমত্য নেই। ঐকমত্য হলে ভিন্ন কথা।
সমকাল: সবার ঐকমত্যে তো জুলাই সনদ হবে। তাহলে তো সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্ন নেই। সংসদে যারা যাবেন, তারা সবাই মিলে সংশোধনী পাস করবেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: তখন কিন্তু প্রশ্ন আসবে, আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ মানলে নিম্নকক্ষের ক্ষেত্রে কেন মানেন না? তাই বিএনপি আনুপাতিক চায় না।
সমকাল: যেসব দেশে এককেন্দ্রিক সরকার আছে, সেখানে নিম্নকক্ষের নির্বাচন বাংলাদেশের মতোই ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতিতে হয়। উচ্চকক্ষের আসন প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে বণ্টন হয়। জাপান, স্পেন, ইতালি এর ভালো উদাহরণ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: ওইসব দেশ কিন্তু উচ্চকক্ষের ক্ষমতা কমাচ্ছে। বিএনপি চায়, বাংলাদেশে উচ্চকক্ষ কার্যকর হোক। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। আবার আইন প্রণয়নেও সমস্যা হবে। বিএনপি বাস্তববাদী দল। আনুপাতিক নির্বাচনে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সরকার গঠনে অন্যদের দ্বারস্থ হতে হবে। কোয়ালিশন করতে গেলে অনেক দাবি-দাওয়া মানতে হয়। অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।
সমকাল: কমিশনের সুপারিশ মানলেও নিম্নকক্ষে বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলই সরকার গঠন করবে। নিম্নকক্ষে পাস হওয়া আইন উচ্চকক্ষ আটকাতে পারবে না। শুধু সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। নিম্নকক্ষের বাকি সব ক্ষমতা অক্ষুণ্ন থাকবে। তাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তো শঙ্কা থাকার কথা নয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: বিএনপি আনুপাতিক নির্বাচনকে উৎসাহিত করবে না।
সমকাল: আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চাচ্ছেন। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবেন– এ নিয়ম অতীতে সমস্যা করেছিল। বিএনপি কেন তাতে ফিরতে চায়?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এ বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব দিতে ঐকমত্য কমিশন ও বিএনপি একমত।
সমকাল: বিচার বিভাগকে বাদ দিলে কে নেবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: বিচার বিভাগকে এর মধ্যে না জড়ালেই ভালো। তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির কারণে বিচার বিভাগকে পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলা হয়। চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র একটি পর্যায়ে উপনীত হলে তখন হয়তো আর তত্ত্বাবধায়ক প্রয়োজন হবে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারিনি বলেই অনির্বাচিত সরকারের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। অনেকটা ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’। তবে এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।
সমকাল: অনেক বছর ধরে আলাপ রয়েছে–অবারিত সাংবিধানিক ক্ষমতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্রাটের চেয়েও ক্ষমতাবান। এই ক্ষমতা কমাতে সংস্কার কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছে। বিএনপি এর বিরোধিতা করছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: হ্যাঁ। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি বিএনপির কাম্য নয়। এর মাধ্যমে কীভাবে রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গকে শক্তিশালী করা যায়, বিএনপি সে প্রস্তাব করছে। যদি বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসে, জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, গণমাধ্যম স্বাধীন হয়, প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত হয়, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্ত হয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে ভারসাম্য আনতে হবে না। তখন আইনসভা, বিচার বিভাগ নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এতে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে।
সমকাল: ২০০৪ সালে দুদক আইন হয় বিএনপির সময়ে। আইন অনুযায়ী দুদক শক্তিশালী। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে অবারিত ক্ষমতা দিয়েছে। এত ক্ষমতা, সাংবিধানিক শক্তির পরও কি প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হতে পেরেছে? বলা হয়, নির্বাহী বিভাগের চাপে পারে না।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে এত অবক্ষয় হতো না। প্রতিষ্ঠানগুলো দেখেছে, ক্ষমতাসীনরাই ক্ষমতায় থাকবে। তাই তারা বশংবদ হয়েছে। যতই ক্ষমতা থাকুক, চর্চা করেনি। গোড়ার কথা হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ক্ষমতার পালাবদল হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের আজ্ঞাবহ হবে না।
সমকাল: ২০০৮ সালের নির্বাচন কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়েছিল। বিএনপি জোটের নিশ্চয়ই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: ছিল না। কারণ, সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছিল বিএনপি যাতে বড় বিরোধী দল হতে না পারে।
সমকাল: তাহলে কীভাবে আশা করেন, পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের পক্ষে নিতে ক্ষমতাসীনরা এমনকি বিএনপিও কিছু কিছু ভুল পদক্ষেপ নিয়েছিল। এখন তো পরিস্থিতি ভিন্ন। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এমন একটি পদ্ধতি দাঁড় করানো হবে, যাতে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে।
সমকাল: স্বাধীন গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলছেন। কিন্তু নিয়োগের ক্ষমতা যদি এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে, তাহলে তারা কীভাবে স্বাধীন হবে? যেমন আপনি গুম হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করা মানবাধিকার কমিশন টুঁ শব্দ করেনি। ওই কমিশনের তো ব্যাপক ক্ষমতা ছিল। ভবিষ্যতেও যদি প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ করা মানবাধিকার কমিশন থাকে, তারাও সরকারের বিরুদ্ধে বলবে না।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: একই কথা ঐকমত্য কমিশনও বলছে। কিন্তু বিকল্প হিসেবে তারা যেসব প্রস্তাব করেছে, তাতে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাই থাকবে না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সব নিয়োগ যদি প্রধানমন্ত্রীর হাতের বাইরে থাকে, তাহলে তিনি সরকার চালাবেন কীভাবে!আবার বলা হচ্ছে, সংসদহীন অবস্থায়ও এনসিসি থাকবে। তখন এনসিসির পাঁচ সদস্যের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ছাড়া বাকিরা হবেন অনির্বাচিত। এতে রাষ্ট্রে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। রাজনৈতিক দল এবং জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি থাকে। সেই জায়গা থেকে বলেছি, অনির্বাচিত বডির কাছে জবাবদিহিহীন ক্ষমতা দেওয়া যায় না। চিন্তা করতে হবে, এর চেয়ে ভালো বিকল্প কী হতে পারে। নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে যাতে সব ক্ষমতা চলে না যায়, তা দেখতে হবে।
সমকাল: ভারতে গত এক দশকে ধীরে ধীরে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ছে। গণতন্ত্রও ভঙ্গুর হচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: ভারতে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করে। বাংলাদেশে বিচার বিভাগকে একই রকম শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি, যাতে তা গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে কাজ করে। সরকার যাতে আইনের বাইরে কিছু করতে না পারে।
সমকাল: বিএনপি সংস্কার বাস্তবায়নে পরবর্তী সংসদের কথা বলছে। বিএনপি যেসব সুপারিশে একমত হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও। পঞ্চম সংশোধনী, একাদশ সংশোধনী সংসদে অনুমোদনের আগেই কার্যকর হয়েছিল। এবার কেন নয়?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: একাদশ সংশোধনী জাতীয় ঐকমত্যে সংসদে অনুমোদনের আগে কার্যকর হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে পদে বহাল রেখেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। কোনো পক্ষই এর বিরোধিতা করেনি। আর পঞ্চম সংশোধনী আগেই কার্যকর হয়েছিল সামরিক আইনের মাধ্যমে। পরে কিন্তু সংসদের অনুমোদন নিতে হয়েছে।
সমকাল: তাহলে অনুমোদনের অঙ্গীকার করে এবার সংসদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের ঐকমত্যে আসা যায় না?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এখন তো সংবিধান বিলুপ্ত হয়নি। সরকার, আদালত চলছে সংবিধান অনুযায়ী। তাই রাজনৈতিক ঐকমত্য হলেও পরবর্তী সংসদে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। একাদশ সংশোধনী কতটা সাংবিধানিক ও আইনানুগ– এটা নিয়ে কিন্তু অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এবারও সংসদের বাইরে এগুলো করলে আইনানুগ হবে না।
সমকাল: নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে জামায়াত ও এনসিপি কমিশনকে স্বচ্ছতা প্রমাণের কথা বলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির তালিকা থেকে এসেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। কমিশন বিএনপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট– এমন অভিযোগও উঠছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: নাসির উদ্দিনের নাম আরও অনেক দলের পক্ষ থেকে এসেছিল। বিএনপি তো নিয়োগ দেয়নি। নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এখনও কমিশনের নিরপেক্ষতায় ঘাটতি দেখছি না। সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাব রয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্বের বিষয় রয়েছে। কমিশন এর বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। এ কারণে বিএনপি ও নির্বাচন কমিশনের মতামত কাছাকাছি মনে হচ্ছে। এ দায় তো বিএনপির নয়।
সমকাল: টানা তিনটি বাজে নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় প্রশ্ন আসে, ভবিষ্যতে প্রহসনের ভোট হলে নির্বাচন কমিশন কোথায় জবাবদিহি করবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: বিএনপি আইনের প্রস্তাব করেছে। সংস্কার কমিশন কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচন কমিশনকে শাস্তির আওতায় আনতে সুপারিশ করেনি। বিএনপির দাবিতে ২০১৪ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সমকাল: সুপারিশে রয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত হলে নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। বিএনপি এর বিরোধিতা করছে। এতে কি আওয়ামী লীগ সুবিধা পাবে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: পৃথিবীব্যাপী রীতি হলো– দণ্ডিত হওয়ার আগে যে কাউকে নিরপরাধ গণ্য করতে হবে। বাংলাদেশে যদি আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্যের বিধান করি, পৃথিবীর কেউ তা সমর্থন করবে না। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই বিধান প্রয়োগ করলে বিএনপিই খুশি হতো। বিএনপিই আওয়ামী লীগের বিচারের প্রধান প্রবক্তা। কিন্তু তা আইনের মাধ্যমে, যথাযথভাবে করতে হবে।
সমকাল: তাহলে আপনারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দেখছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: ৫ আগস্ট জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা তা মানুষ ঠিক করবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ যে সুযোগ দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে আইন সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সরকার আইন সংশোধন থেকে পিছিয়ে এসেছে। বিএনপি আবারও দাবি করছে, আইন সংশোধন করা হোক। আদালত আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করুক। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাহী আদেশে কাউকে নিষিদ্ধ করা ঠিক মনে করে না।
সমকাল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: সমকালকেও ধন্যবাদ।
প্রথম আলো
দৈনিক প্রথম আলো প্রধান শিরোনাম ‘গণহত্যার বিচারে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে’। খবরে বলা হয়, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আরও একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করবে আইন মন্ত্রণালয়। এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলবে বর্তমান ট্রাইব্যুনালের পাশের ভবনে। এ লক্ষ্যে পুরোনো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে একটি ভবনের সংস্কারকাজ এখন পুরোদমে চলছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এখন এই ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও চলছে। পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এই ট্রাইব্যুনালে করা হচ্ছে। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ট্রাইব্যুনালে। এ বিচার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন অনুযায়ী, সরকার চাইলে এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে একজন চেয়ারম্যান থাকেন। তাঁর সঙ্গে দুজন থেকে সর্বোচ্চ চারজন সদস্য থাকতে পারেন। এখন ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হলে সেখানে চেয়ারম্যানসহ সর্বনিম্ন তিনজন বিচারপতি থাকবেন।
নতুন ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোকে বলেন, হয়তো সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন হয়ে যাবে। কারণ, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, গ্রহণযোগ্য বা বস্তুনিষ্ঠ মামলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মামলাগুলো একটু দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি হোক, তা চায় সরকার।
যুগান্তর
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মানবিক করিডর নিয়ে দৈনিক যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম ‘নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা’। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির জান্তা সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) যুদ্ধ যতই তীব্র হচ্ছে, ততই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বেড়ে চলেছে। সংঘর্ষের মধ্যে দুই পক্ষের হামলার মূল লক্ষ্য হয়ে উঠছে সাধারণ রোহিঙ্গা জনগণ। আর এ কারণে অনেকেই জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিমাসে সাড়ে ৬ হাজারের মতো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে।
নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং মানবিক করিডর দিতে জাতিসংঘের আহ্বানকে কেন্দ্র করে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফের বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চাপ ও চক্রান্তের শিকার হতে পারে। এতে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি-এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত দেড় বছরে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার ব্যক্তির বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর বাইরেও কমপক্ষে আরও ৫ থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনিবন্ধিত অবস্থায় বিভিন্ন দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। সে হিসাবে প্রায় প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন অর্থাৎ প্রতিমাসে সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে।
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং ‘খাদ্য সহায়তা’র নামে মানবিক করিডর চালু করার প্রস্তাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়ের দিকে যেতে পারে। তিনি বলেন, এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এটি কেবল মানবিক ইস্যু থাকবে না, বরং বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে। তার মতে, সীমান্তে শৃঙ্খলা, জাতীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা-সবকিছুই চাপে পড়বে যদি নতুন করে করিডরের নামে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়।
কালের কণ্ঠ
‘পঞ্চপাণ্ডবে ধ্বংস বিদ্যুৎ খাত’-এটি দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, বিদ্যুৎ খাতে তাঁরা পরিচিত ছিলেন পঞ্চপাণ্ডব নামে। এই পাঁচজনই ছিলেন বিদ্যুৎ খাতের অর্থ লেনদেনের মূল নিয়ন্ত্রক। প্রকল্প গ্রহণ, কারো পদায়ন বা বিদ্যুত্সংক্রান্ত কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন তাঁরা। তাঁদের হাতেই চলত দেশের বিদ্যুৎ খাত।
তাঁরা লুটেছেন বিপুল অর্থ। পঞ্চপাণ্ডবের গডফাদার ছিলেন তিনজন। গডফাদারদের কমিশন দিতেন বলে তাঁদের অপকর্মের জবাব দিতে হতো না। এককথায় তাঁরা ছিলেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে।
বিদ্যুৎ খাতে এই পঞ্চপাণ্ডব ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক এবং সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সামিট গ্রুপের আজিজ খান ও এস আলম। এই পাঁচজনই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত সর্বনাশের হোতা। বিদ্যুৎ খাতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সব কিছু করা হয়েছে তাঁদের লুটপাটের নীতিকে মুখ্য রেখে। বিদ্যুতে যেখানেই তাঁরা লুটপাটের সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই তাঁরা চেটেপুটে খেয়েছেন।
বিদ্যুতের স্বয়ংসম্পূর্ণতার ঢোল বাজিয়ে আসলে বিদ্যুৎ খাতের বারোটা বাজিয়েছেন তাঁরা। অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, পঞ্চপাণ্ডবের তিনজন গডফাদারকে কমিশন দিয়ে বিদ্যুৎ খাতে নির্বিচারে লুণ্ঠন করতে পেরেছিল পতিত স্বৈরাচার সরকার। এই তিনজন মাফিয়া হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিন গডফাদার ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অপত্য ছত্রচ্ছায়ায়। বিদ্যুৎ খাতের এই লুণ্ঠনের চিত্র বড় ভয়ংকর ও বড় সর্বনাশা।
ইত্তেফাক
দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ‘আরো ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, আবারও সীমান্ত দিয়ে অবাধে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া এলাকার স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করছে, প্রতিদিন গড়ে ১শ’রও বেশি রোহিঙ্গা ঢুকছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গিয়ে বিজিবি সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন নাফ নদে ডুবে মারা গেছেন। যদিও শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলছেন, দিনে গড়ে ৩০ জন করে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। নতুন করে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ করেছে। অন্যদিকে নতুন করে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার বসবাসের জায়গা করে দিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে।
এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থল করে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ইউএনএইচসিআরের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। প্রতিদিন কত জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন গড়ে ৩০/৪০ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য আছে। তবে এ সংখ্যাটি কখনই শতাধিক নয়। জাতিসংঘের চিঠিতে উল্লেখ করা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে আরো ২ হাজার রোহিঙ্গা এ পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে এত বড় পরিসরে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, নতুন আশ্রয়ন প্রকল্প রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরও কঠিন করে তুলবে। কারণ এটি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে উত্সাহিত করবে।
সরকারি সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)। নতুন এ আগমনসহ বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৩ লাখ।
বণিক বার্তা
‘ইঞ্জিন-কোচ সংকটে দেশজুড়ে বন্ধ ৭০ ট্রেন’-এটি দৈনিক বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) ও কোচ সংকটের কারণে সারা দেশে ৭০টি ট্রেন বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৩৩টি কমিউটার ট্রেন, ২১টি লোকাল, ১০টি মিশ্র, চারটি মেইল ও দুটি শাটল ট্রেন। বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোর বেশির ভাগই চলাচল করত স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে, যা ভূমিকা রাখত দৈনন্দিনের পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষের যাতায়াতে। ইঞ্জিন ও কোচ সংকট এবং জনবল স্বল্পতার কারণে সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
সান্তাহার-পঞ্চগড় রুটের উত্তরবঙ্গ মেইল বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলোর একটি। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময় সারা দেশেই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এরপর অন্যগুলো চালু হলেও এ ট্রেনটি তখন থেকেই বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ মেইল ট্রেনটি নিম্ন আয় ও শ্রমজীবী মানুষের অল্প খরচে যাতায়াতের একমাত্র যানবাহন ছিল। ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় তাদের যাতায়াত খরচ ও ভোগান্তি—দুই-ই বেড়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চলাচল দুই অঞ্চলে বিভক্ত—পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল। সংস্থাটির তথ্য বলছে, পূর্বাঞ্চল রেলে বন্ধ রয়েছে মোট ৩২টি ট্রেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের দুটি লোকাল, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটের চারটি লোকাল, সিলেট-ছাতকবাজার রুটের চারটি লোকাল, আখাউড়া-সিলেট রুটের দুটি মেইল, লাকসাম-চাঁদপুর রুটের দুটি কমিউটার, লাকসাম-নোয়াখালী রুটের দুটি কমিউটার, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটের ছয়টি কমিউটার, চট্টগ্রাম-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটের চারটি কমিউটার, ঢাকা-হাই-টেক সিটি রুটের দুটি কমিউটার ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের চারটি কমিউটার ট্রেন।
আজকের পত্রিকা
দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘বিদ্যুতে গ্যাস দিলে শিল্পে টান’। খবরে বলা হয়, দেশের শিল্পকারখানায় চরম গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস না থাকায় অনেক স্থানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও উৎপাদন নেমে এসেছে তিন ভাগের এক ভাগে। শুধু শিল্প নয়, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনেও চলছে গ্যাসের জন্য হাহাকার। গ্রীষ্মে লোডশেডিং কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোয় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন কমতে থাকায় সামনের দিনে সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে দৈনিক ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। ৩০০ থেকে ৩২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। কিন্তু এই চাহিদার বিপরীতে ২৮ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ করা হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট। সেখান থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেওয়া হয় প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট। বাকি ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়ে শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে শিল্প-কারখানাগুলোকে।
ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসংদীর শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংকট চরমে উঠেছে। এতে অর্ডার ধরে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সেখানকার রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানার মালিকেরা। গার্মেন্টস কারখানা ছাড়াও সিরামিক, ইস্পাত, রি-রোলিং মিল ও টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
দেশ রূপান্তর
‘গণমাধ্যমের জন্য আসছে নতুন অধ্যাদেশ’-এটি দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রধান শিরোনাম। খবরে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘সম্প্রচার আইন ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রস্তাবিত সেই আইনে ‘অনলাইন নিউজ পোর্টাল’, ‘রেডিও’, ‘টেলিভিশন’ এবং মাল্টিমিডিয়া-ভিত্তিক ‘সম্প্রচার প্ল্যাটফর্ম’ নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের কারাদ- এবং ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার একটি প্রস্তাবনা ছিল। এবার সেই ধারাসহ বেশ কয়েকটি সংশোধনী এনে নতুন অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এই সংশোধনীতে ৭ বছরের পরিবর্তে সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছরের কারাদন্ড আর ৫০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করতে গত ২১ এপ্রিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে নতুন প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশটি মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ৯ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানার সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নতুন খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়।
খসড়ার বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে গণমাধ্যমের জন্য কোনো ভয়ের কারণ আছে কি না জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারাহ শাম্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৮ সালের আইনের খসড়া সম্পর্কে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে খসড়াটি সংশোধন ও চূড়ান্ত করা হবে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রথম পাতার খবর ‘বিরোধ বাড়ছে রাজনৈতিক দলে’। খবরে বলা হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধ বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোয়। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চায় আগে জাতীয় নির্বাচন। এ দলগুলো মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ স্থানীয় নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচন করা। তাই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তারা সোচ্চার। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন মানবে না এ দলগুলো।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু দল চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য আগে স্থানীয় নির্বাচন প্রয়োজন।
এ ছাড়া নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা আছে তাদের। সব মিলিয়ে স্থানীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক দলগুলো।