বিশ্বজমিন
ক্ষমতা দখলের এক বছর: কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেনি তালেবান
মানবজমিন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার, ৬:০৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
এক বছর হতে চললো আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করেছে তালেবান বাহিনী। ক্ষমতা দখলের পরই তারা বিশ্বকে তাদের স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ জানায়। এ জন্য প্রথম দিকে তাদের মধ্যে উদারপন্থী কথাবার্তা এবং প্রতিশ্রুতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু ক্রমশ আবারও পুরোনো সেই তালেবানকেই দেখছে আফগানরা। তারা আফগানদের এবং বিশ্বকে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কতখানি তারা রেখেছে?
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় এসে তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ শরিয়তি বিধান মেনে নারীর অধিকার রক্ষার কথা বলেছিলেন। কিন্তু জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে বিশেষ অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারীদের অধিকার রক্ষা হয়নি। দেশটিতে বাড়ির বাইরে গেলে মেয়েদের আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। রাস্তায় বেরিয়ে মুখ না ঢাকলে পরিবারের পুরুষ বাবা, ভাই বা স্বামী সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকছেন। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বিমানেও ওঠা যায় না সেখানে। তালেবান মুখপাত্র মুজাহিদ দাবি করেছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় মেয়েদের হাই স্কুলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এছাড়া গত ২০ বছর ধরে যারা তালেবানের বিরোধীতা করে আসছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তালেবান। তবে তারা সেই প্রতিশ্রুতিও রাখে নি। জাতিসংঘ বলছে, ২০২১ সালের ১৫ অগাস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৫ জুনের মধ্যে তালেবান কর্তৃপক্ষ ১৬০টি বিচারবহির্ভূত হত্যা, ১৭৮টি নির্বিচারে গ্রেপ্তার, ২৩টি আচমকা গ্রেপ্তার এবং প্রাক্তন সরকার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্যাতনের ৫৬টি ঘটনা ঘটিয়েছে।
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান জানিয়েছিল, তাদের ‘সাংস্কৃতিক কাঠামোতে’ হস্তক্ষেপ না করলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বজায় থাকবে আফগানিস্তানে। অথচ বাস্তবে দেখা গেছে, ক্ষমতায় এসেই ডয়চে ভেলের এক সাংবাদিকের আত্মীয়কে হত্যা করে তারা। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস জানিয়েছে, ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে তালেবান এবং ন্যাশনাল রেজিস্টেন্স ফ্রন্ট অফ আফগানিস্তানের যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন আফগানিস্তানের জাতীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রধান ফাহিম দাশতি।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের জুলাই মাসে আফগানিস্তানে নিউজরুমে ১০ হাজার জন কাজ করতেন। ডিসেম্বরে কাজ করেছেন চার হাজার ৩৬০ জন। তালেবান শাসনের প্রথম তিন মাসে ৫৪৩টির মধ্যে ২৩১টি সংবাদমাধ্যম আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছে। অধিকার সংস্থাগুলো বলছে, তালেবানদের হাতে সাংবাদিকদের হত্যার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে নেই। তবে তাদের উপরে নির্যাতন এবং চাপের বিষয়টি স্পষ্ট। এ বছরের মার্চ মাসে ডয়চে ভেলে, বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সম্প্রচার বন্ধ করে তালেবান। এপ্রিলে এক ডজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন। সাংবাদিকদের নির্বিচারে আটক বন্ধ করার আহ্বান করেছে জাতিসংঘ।
তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা ক্ষমতায় এলে আফগানিস্তানের মাটিকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে দেবে না। কিন্তু গত এক বছরে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা দেখেছে আফগানবাসীরা। এসব হামলায় টার্গেট করা হয়েছে সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়কে। তাদের একের পর এক মসজিদে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকরী কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি তালেবান। সর্বশেষ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি বাড়িতে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে তালেবানের ওই প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আফগানিস্তান সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গে পরিণত হবে না বলে তালেবান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা সেটি রাখেনি।