ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেট গ্যাস ফিল্ড

১৪ কোটি টাকার মালামাল আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৯ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

সিলেট গ্যাস ফিল্ডে পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে। ১৪ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ মালামাল মাত্র আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এতে গ্যাস ফিল্ডের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বৈধ ব্যবসায়ীরা টেন্ডার জমা দিতে না পেরে প্রথমে মৌখিক এবং পরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এখন তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রায় ৫ মাস আগে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের স্ক্র্যাপ বিক্রি করতে গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এই মালামালের মধ্যে রয়েছে জেনারেটর, টিউবিং পাইপ, কেসিং পাইপ, গাড়ির টায়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র, ট্রান্সফরমার, এমএস রড, এমএস পাইপ, শিটের টুকরা, ক্যাবল ট্রে, টারবাইন পাম্প, কাটপিস ঢেউটিন, স্টিল ও প্লাস্টিকের খালি ড্রাম, টুল বক্স, ব্যবহৃত লুব ওয়েল। হিসাব ও অর্থ শাখার মহাব্যবস্থাপকের পক্ষ থেকে এই টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডার অনুযায়ী ১২ই ডিসেম্বর ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। একইদিন সিলেট গ্যাস ফিল্ডের প্রধান কার্যালয়ের টিএসসি বিভাগে টেন্ডার খোলা হয়।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড সূত্র বলছে; বিগত ৮-১০ বছরে স্ক্র্যাপ মালামাল বিক্রির জন্য এবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এই স্ক্র্যাপ মালামালের আনুমানিক মূল্য ১৪ কোটি টাকা। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার জমা নিয়ে সেটি সবার সামনে প্রকাশ করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে মনোনীত করার কথা। কিন্তু ওইদিন টেন্ডার জমাদানকারী শাখায় এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি ছিল না। হরিপুরের স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সিলেট শহরের একাধিক গ্রুপের অপরাধীদের দিয়ে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এই ভয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করতে ওইদিন টেন্ডার জমা দিতে আসা ব্যবসায়ীরা মৌখিকভাবে বারবার গ্যাস ফিল্ডের এমডি ও নিলাম আহ্বায়কের সহায়তা চান। কিন্তু তাদের সেই সহায়তা দেয়া হয়নি। নিলামে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- কেবলমাত্র একটি জায়গায় টেন্ডার জমা দেয়ার বিধান রাখার কারণে এই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের প্রশাসনিক ভবনসহ কয়েকটি জায়গায় টেন্ডার জমার সুযোগ থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেটি না করে তারা গ্যাস ফিল্ডের কার্যালয়ে টেন্ডার জমা দেয়ার স্থান নির্ধারণ করেন। আর এতেই যত বিপত্তি। যারা টেন্ডার জমা দিতে গেছেন তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নিলামে অংশ নিতে চেয়েছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ সেলিম কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমদ। তিনি ৫ কোটি দরের পে-অর্ডারসহ কাগজপত্র নিয়ে দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। তাকেও টেন্ডার জমা দিতে দেয়া হয়নি। এজন্য তিনি গত সপ্তাহে ডাকযোগে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মহাব্যবস্থাপক (এমডি) বরাবর অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন- পুরাতন মালামাল ক্রয়ের জন্য তার প্রতিষ্ঠান ‘সেলিম কন্সট্রাকশন’-এর নামে একটি সিডিউল ক্রয় করা হয়। যার মানি রিসিট নম্বর- ইগজ-১০৪-১১৪১২, তারিখ ২৩.১২.২০২৪। সিডিউলে বর্ণিত শর্তানুযায়ী জামানত বাবদ ব্যাংক থেকে পে-অর্ডার করেন। পে-অর্ডার নম্বর- ৫৫১৪৩৪৫। দরপত্র গ্রহণের দিন সকাল ১১টায় গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে গেলে দরপত্র গ্রহণের বাক্স যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে কিছুসংখ্যক লোক বাক্সে দরপত্র দাখিল করতে বাধা প্রদান করে।

বিষয়টি মৌখিকভাবে নিলাম কমিটির আহ্বায়ককে অবগত করলে আহ্বায়ক আইনগতভাবে বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে দরপত্র বাতিল করে দেয়ার আশ্বাস দেন। আবেদনে সেলিম উল্লেখ করেন- দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২১৩টি দরপত্র সিডিউল বিক্রি হলেও সিন্ডিকেট করে মাত্র ৩টি দরপত্র জমা দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র দাখিলে বাধাগ্রস্ত করেন। পরবর্তীতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের মহাব্যবস্থাপক, প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন (পিএনডি) এর স্বাক্ষরিত ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা প্রদান সাপেক্ষে শাহজান এন্টারপ্রাইজের নামে অর্ডার দিয়ে দেন। আবেদনে তিনি শাহজাহান এন্টারপ্রাইজে যে অর্ডারপত্র দেয়া হয়েছে সেটি বাতিল চেয়ে পুনঃদরপত্র আহ্বান করে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আর্জি জানান। গতকাল বিকালে সেলিম আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- যে মালামাল আড়াই কোটি টাকার বিক্রি হচ্ছে সেটির প্রকৃত মূল্য হবে ১৪-১৫ কোটি টাকা। গ্যাস ফিল্ড কর্মকর্তারা গোপন চুক্তি করে সেটি আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সেটি পক্ষকে সমঝে দেয়া হচ্ছে। গুটি কয়েক কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে চলেছেন বলে জানান তিনি। এজন্য তিনি আইনি উদ্যোগ নিচ্ছেন বলেও জানান। সেলিম ছাড়াও ওইদিন মেসার্স রামিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নছিবুর রহমান নাছিম ৫ কোটি টাকা দরে পে-অর্ডার নিয়ে টেন্ডার জমা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি জমা দিতে পারেননি।

নাছিম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তিনিও ৫ কোটি টাকা দরের টেন্ডার জমা দিতে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে জমা দিতে পারেননি। গ্যাস ফিল্ডের পাশের হরিপুরের প্রভাবশালী চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট ও সিলেটের সিরাজ চক্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুনামগঞ্জের শাহজাহান নামের এক ব্যক্তির নামে ওই মালামাল কম মূল্যে কিনে নেয়। এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানান তিনি। একইভাবে টেন্ডার জমা দিতে চেয়েছিলেন কাজী এন্টারপ্রাইজের কাজী হারুনুর রশীদ। তিনি জানান- জমা দেয়ার পরিবেশ না থাকায় টেন্ডার জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন- ওই স্ক্র্যাপ মালামাল দরদাতাকে সমঝে দিতে এখন তাড়াহুড়া করছেন গ্যাস ফিল্ডের গুটি কয়েক কর্মকর্তা। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের চলতি দায়িত্বে থাকা এমডি আব্দুল জলিল প্রামাণিককে একাধিকবার ফোন দিলেও কোনো সাড়া দেননি। তবে নিলাম কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন মহাব্যবস্থাপক হিসাব ও অর্থ। এই নম্বরে ফোন দিলে রিসিভ করেন বর্তমানে দায়িত্বে থাকা জিএম তারেক। তিনি জানান- টেন্ডারের কোনো কিছুই তিনি জানেন না। দুই মাস আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কিছু করলে এর দায় তার নয়।  

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status