সংবিধান সংস্কারে গণভোটের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

সংবিধান সংস্কারের জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ দলটির অন্যান্য নেতারা উপস্থিত। গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি বৈঠকে অংশগ্রহণ করে।

কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন–ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপ শেষে নুরুল হক নুর বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেয়া ১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবনার মধ্যে তাদের দল ১৩৫টিতে একমত, ৭টিতে একমত নয় এবং ২৩টিতে আংশিক একমত পোষণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে কেবল রাজনৈতিক দল নয়, জনগণেরও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। এজন্যই আমরা গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছি।’

গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি জানান, সংবিধানের মূলনীতিতে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। এছাড়া সংসদের মেয়াদ ৪ বছর এবং সংসদ সদস্য হওয়ার বয়সসীমা ২৩ বছর করার প্রস্তাবও দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে, সংসদ সদস্যরা যেন আস্থা ভোট এবং অর্থ বিলে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে না পারেন। এতে সদস্য বিক্রির প্রবণতা বাড়ে।’

সংলাপে গণঅধিকার পরিষদ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ৪ বছর এবং কেউ পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। একজন ব্যক্তি একইসঙ্গে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানের নিয়োগ জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদের অধীনে করার প্রস্তাব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ৪ মাস। স্থানীয় সরকারে স্বতন্ত্র কমিশন গঠন। উচ্চ কক্ষে সংসদ সদস্য সংখ্যা ১০০, যার ২০ শতাংশ নারী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও পেশাজীবী থাকবে।

এছাড়া পেশাজীবী ও শ্রমিকদের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হওয়া ঠেকাতে শাস্তির বিধান এবং নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য অন্তত ৩-৪ বছর সক্রিয় অংশগ্রহণের শর্ত রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা জাতীয় সনদে সব রাজনৈতিক দলের সাক্ষর চাই এবং এই সনদ গণভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে কেউ তা বাতিল করতে না পারে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও মূলনীতি সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের আয়োজন করার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে কিছু বিষয়ে সংসদ সদস্যরা সংশোধনের ক্ষমতা রাখবে। সবশেষে নুরুল হক নুর বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থে আমরা সব ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত। আমরা সত্যিকারের জাতীয় ঐক্য চাই।’