অনলাইন
জমি নিয়ে বিরোধ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফ্রিজিং ভ্যানে লাশ আটকে রেখে সালিশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
(৫ ঘন্টা আগে) ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭:২৬ অপরাহ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে প্রথমপক্ষের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের নামে সম্পত্তি লিখে নেয়ার অভিযোগে স্বামী মাজেদ বিশ্বাসের লাশ আটকে দিয়েছেন দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুল বেগমসহ তার আত্মীয়স্বজনরা। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিশে বসেন এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সিদ্ধান্ত হয়েছে মঙ্গলবার উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করার পর লাশ দাফন হবে। সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের মরাপাগলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রী মারা যান। পরে হামফুল বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি এবং এই সংসারে কোনো ছেলে মেয়ে হয়নি। প্রায় ছয় মাস আগে মাজেদ বিশ্বাস শয্যাশয়ী হলে পুলিশে চাকরিরত তার দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে তার বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান এবং সেখানে বাবার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেন। এর মধ্যে গত ১৬ই এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের তালাকনামা উকিল নোটিশের মাধ্যমে হামফুল বেগমের কাছে পাঠানো হয় এবং হামফুল বেগম সেটি গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫ই মে গ্রাম্য সালিসের দিন নির্ধারণ হয়। কিন্তু গত রোববার মাজেদ বিশ্বাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ দাফনের জন্য তার দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে মাজেদ বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুল বেগম এলাকবাসীকে সাথে নিয়ে দাফনে বাধা দেন। এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সালিশে বসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সুন্দরপুর ইউনিয়নের ছোট মরাপাগলা এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, যিনি মারা গেছেন তিনি কিছুদিন আগে অসুস্থ ছিলেন। তার ছেলেরা তাকে চিকিৎসা করানোর নাম করে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে (সৎ মাকে) তালাক দেয়ায় এবং তার সব সম্পত্তি ছেলেরা নিজের নামে লিখে নেন। এর মধ্যে মাজেদ মারা যান এবং তার ছেলেরা দাফন কাফনের জন্য লাশ নিয়ে আসেন। কিন্তু তার ছেলেরা জমি লিখে নেয়ার কারণে দ্বিতীয় স্ত্রী দাফন কাফনে বাধা দেন। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সালিশে বসেছে। একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, সকাল থেকে সালিশ চলছে। তারা ভাইয়েরা জমি লিখে নিয়েছিল এবং সৎ মাকে ফাঁকি দিয়েছিল। এখন শেষ সমাধান হলো সকল জমি আইন অনুযায়ী বন্টন হবে। কিন্তু এর মধ্যে বোন ও ভাবির সাথে ঝগড়া লেগে গেছে এবং তারা সালিশ মানবে না। আমরা এলাকাবাসী সুষ্ঠু বিচার চাই এবং লাশ ভালোভাবে দাফন হোক এটাই চাই।
হামফুল বেগম বলেন, ২০ আগে আমি আমার বিয়ে হয়। দ্বিতীয় সংসারে এসে আমার সৎ ছেলেগুলোকে মানুষ করি এবং তারা সরকারি চাকরি পেয়েছে। এখন তারা ভালোভাবে জীবন যাপন করছে। এই সংসারে এসে আমার স্বামীর সেবা-যত্ন ভালোভাবে করেছি। কিছুদিন আগে আমার ছেলেরা প্রায় ১০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছে তাও কিছু বলিনি। তারপরে আমার স্বামীকে হঠাৎ করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলে গেল এবং সেখানে আমার ছেলেরা জোর করে তাদের নামে মাটি লিখে নিয়েছে। তারপরে আমার স্বামীর হুঁশ না থাকা অবস্থায় আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমার স্বামী তালাক দেবে না। এটা ছেলেরা করিয়েছে। তাই আমি নায্য বিচার চাই।
তবে এই বিষয়ে দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যতটুকু শুনেছি যিনি মারা গেছেন তার দুটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষের ছেলেরা তাদের বাবাকে চিকিৎসা করার নাম করে নিয়ে গিয়ে জায়গা জমি লিখে নিয়েছে। এই নিয়ে মাজেদ বিশ্বাস মারা গেলে এক পক্ষ লাশ দাফনে বাঁধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসা করেছে এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করে তারপর লাশ দাফন করা হবে।
পাঠকের মতামত
এ কুলাঙ্গারদের লোভ বেশি। তাদের পুলিশে আর রাখা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হয়রানির মামলা করতে হবে।