বিশ্বজমিন
পহেলগাঁও হামলার ময়দান থেকে বেঁচে ফেরার গল্প
মানবজমিন ডেস্ক
(১৩ ঘন্টা আগে) ২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৩:০৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববাসীর কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত থাকলেও সম্প্রতি মর্মান্তিক এক হত্যাকাণ্ডের জন্য ট্রাজিক স্থানের তকমা পেয়েছে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁও। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার দুপুরের পরপরই আকর্ষণীয় ওই পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের ওপর নিষ্ঠুর হামলা চালায় একদল বন্দুকধারী। যাতে ঝড়ে পড়ে এক এক করে ২৬টি তাজা প্রাণ। প্রকৃতির স্নিগ্ধ পরিবেশে একান্ত সময় কাটাতে পরিবার নিয়ে বছর জুড়েই পহেলগাঁওয়ে বেড়াতে যান হাজার হাজার পর্যটক। যাদের স্মৃতিতে জমা হয় মনোরম সব গল্প। তবে ২২ এপ্রিল পর্যটকদের জন্য ছিল ভয়াবহ একটি দিন। হঠাৎ মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণে জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটেছেন তারা। জীবন বাঁচাতে অনেকে গাছের আড়ালে, আবার অনেকে কাছে থাকা ছোট ছোট গর্তে লুকিয়ে পড়েছিলেন। কাউকে খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছে। আবার কেউ প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছেন। প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারার এক লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ভারতের কর্ণাটকের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করা ওই কাহিনী প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেছে অনলাইন এনডিটিভি।
যাতে বলা হয়েছে, প্রসন্ন কুমার ভাট। কর্ণাটকের এই বাসিন্দা পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর চালানো হামলার দিন তিনিও সেখানে ছিলেন। এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন নিজের এবং অন্য আরও ৩০-৪০ জন পর্যটকের বেঁচে ফেরার গল্প। জানিয়েছেন, অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছিলেন তারা। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে এক্সের পোস্টে প্রসন্ন কুমার লিখেছেন, সেদিন এক মর্মান্তিক ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে এখনও বেঁচে আছি। ওই ঘটনাকে ভয়াবহ কাহিনী হিসেবেই বর্ণনা করা যেতে পারে। কেননা বন্দুকধারীদের হামলা সেখানের স্বর্গীয় সৌন্দর্যকে রক্তে রঞ্জিত করে দিয়েছে।

প্রসন্ন কুমারের দাবি ভারতীয় শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা তার ভাই। যার প্রচেষ্টায় সেদিন ৪০ জন পর্যটকের জীবন বেঁচে গেছে। প্রসন্ন বলেন, ঈশ্বরের করুণা, ভাগ্য এবং একজন সেনা কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টায় সেদিন আমাদের ৩০-৪০ জনের জীবন বেঁচে গেছে। ২২ এপ্রিল দুপুরে পহেলগাঁও সংলগ্ন বৈসারন উপত্যকায় পৌঁছেছিলেন প্রসন্ন ও তার পরিবার। তাদের সঙ্গে তার ভাই এবং ভাবিও ছিলেন। দুদিন আগেই সেখানে যেতে চেয়েছিলেন তারা। তবে বৈরি আবহাওয়ার কারণে তাদের সময় পরিবর্তন করে ২২ এপ্রিল করা হয়। ওই দিন দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে প্রথম গুলির শব্দ শোনা। এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা। সবাই শুধু ভাবছিল কী ঘটছে। এসময় উপত্যকাটিতে শিশুরা তাদের সময়গুলো উপভোগ করছিল। প্রসন্ন বলেন, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই দুটি মৃতদেহ দেখতে পান তারা। ততক্ষণে তার ভাই বুঝে গিয়েছিলেন যে পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে। ওই সময়টাতেই চারদিক থেকে মুহুর্মুুহু গুলির শব্দ আসতে থাকে। মানুষজন এদিক সেদিক দৌঁড়াতে থাকে।
সকলেই নির্দিষ্ট মুখের দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। তবে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে ওই স্থানটিতেই অবস্থান নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। প্রসন্ন লেখেন, আমরা দেখতে পাই একজন সন্ত্রাসী আমাদের দিকে আসছে। তাকে দেখে আমরা উল্টা দিকে দৌড়াতে শুরু করি। ভাগ্যক্রমে আমরা উল্টো পথে একটি গর্ত খুজে পাই। পরে বেশিরভাগ পর্যটককেই আমাদের পালানোর স্থানটি দিয়ে পালাতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, তার ভাই দ্রুত পরিস্থিতির মূল্যায়ন করে এবং তার পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন পর্যটক নিয়ে নতুন একটি পালানোর পথ আবিষ্কার করেন। প্রসন্নের ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যটকরা এমনভাবে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন, যেন তাদের গায়ে গুলি না লাগে। স্থানটি ছিল পাহাড়ের একটি পাদদেশ। যেখান দিয়ে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। তারা মাটির কিনার ধরে এগিয়ে যাওয়ায় অনেকটাই সুরক্ষিতভাবে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন প্রসন্ন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, এভাবে যেতে যেতে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশো মিটার দূরে গাছের শিকরের সংকীর্ণ একটি গর্তে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। সেখানে তার পরিবারের চারজনই ছিলেন। সকলেই প্রার্থনা করছিলেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে গুলির শব্দ। জীবনের চরম ভয়, হতাশা এবং নীরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় নিয়ে এই আধা ঘন্টা পার করেছেন তারা।
প্রসন্ন বলেন, লুকিয়ে থাকার সময়টাতে আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে, আমরা কি সেখানে থাকবো নাকি অন্যস্থানে পালিয়ে যাবো। মনে হচ্ছিল বেঁচে ফেরার আশায় এক মৃত্যু ফাঁদে আটকা পড়েছি আমরা। পুরো সময়টা আমরা বাড়িতে থাকা আমাদের শিশু আর বাবা মায়ের কথা ভাবছিলাম। জানতাম না তাদের সঙ্গে আর দেখা হবে কিনা।
পরে বিকেল ৩টা ৪০ থেকে ৪টার মধ্যে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে সংকেত দিল। তারা আমাদের উদ্ধার করেন এবং নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন প্রসন্ন। তিনি বলেন, তখন আমাদের কানে গুলির তাজা আওয়ার ভেসে বেড়াচ্ছিল। ওই হামলা এতটা ভয়াবহ ছিল যা আমাদের জীবনে একটি দাগ কেটে দিয়েছে। এমন এক স্মৃতি যা কখনই মুছে ফেলা যাবে না। যে স্মৃতিটি জন্ম নিয়েছে কাশ্মীরের সৌন্দর্যের ছায়ায়।
পাঠকের মতামত
আল্লাহ্ বলেন, "যখন কেউ কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল" (সূরা মায়েদা:৩২)!