শেষের পাতা
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ
১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ, দেয়া হচ্ছে আরও ৭ মিলিয়ন
স্টাফ রিপোর্টার
১১ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবারতৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের জন্য চলতি সপ্তাহে ১৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। আরও ৭ মিলিয়ন ডলারের টাকা সোনালী ব্যাংকে পাঠানোর জন্য জমা দেয়া আছে। এর আগে ১৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়। সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির হাইওয়ে। তথ্যপ্রযুক্তির এই মহাসড়কে বাংলাদেশ বর্তমানে সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৪ এবং সাউথইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-৫ নামক দু’টি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে। দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল এসব তথ্য জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সাবমেরিন ক্যাবলের ভূমিকা অপরিহার্য। বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ, উন্নত ও বৈষম্যহীন বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এই ডিজিটাল সংযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। ১৩২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের জন্য সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী সিমিইউ-৬ কনসসোর্টিয়ামকে মোট ৯৪৬ দশমিক ২৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা দ্বিগুণ করা হলেও ব্যয় কিন্তু অর্ধেকেরও কম বাড়বে।
এর মধ্যে ২০০৯ সালে ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হয় ১০ জিবিপিএস এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬১৮ জিবিপিএসে উন্নীত হয় এবং গত চার বছরে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার ২৪২০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির আয় ২০০৮-৯ অর্থবছরে ৪৩.৫৯ কোটি থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৪ দশমিক ৮৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। মন্ত্রী সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য ডিজিটাল অবকাঠামো উল্লেখ করে বলেন, বিনামাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে। ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে সেই পশ্চাদপদতা অতিক্রমই বাংলাদেশ কেবল করেনি বরং হাওর, দ্বীপ, চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৭ লাখ।
২০২০ সালে কোভিড শুরুর প্রাক্কালে দেশে ১ হাজার জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে তা বেড়ে ৩ হাজার ৪৪০ জিবিপিএসে উন্নীত হয়েছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরও একটি ঐতিহাসিক অর্জন। আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সি-মি-উই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে। ২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৫ সালে সিমিইউ-৬ সংযোগ চালু হওয়ার পর দেশে ২০৪০০জিবিপিএস-এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কেবল দেশের চাহিদা নয় এই কোম্পানি এখন বিদেশেও ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করছে। ইতিমধ্যে ভারতের আগরতলায় ২০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হচ্ছে। ভারতের আসাম রাজ্যের রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান তামাবিল সীমান্ত দিয়ে মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ ছাড়া ভুটান বাংলাদেশ থেকে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আমদানি করার জন্য লেটার অব ইনটেন্ট প্রদান করেছে। তিনি জানান, বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়ার জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সৌদি আরবে আমরা ৬০০ জিবিপিএস এবং ফ্রান্সে ১৩ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করছি। এ ছাড়াও সৌদি টেলিকমও আরও ব্যান্ডউইথ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।