ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

বিসিবিতে দুর্নীতি, দুদকের অভিযান

মুজিব বর্ষেই ১৯ কোটি টাকা লোপাট!

স্পোর্টস রিপোর্টার
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

গেল ১৬ বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ৫ই আগস্টে দেশের সরকার পতনের পর এ নিয়ে শুরু হয় তদন্তের প্রক্রিয়া। নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন প্রতিটি দুর্নীতি চিহ্নিত করা হবে। তবে গেল ৭ মাসে এ নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে গতকাল হঠাৎ করেই মিরপুরে বিসিবিতে হানা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা যায়, তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল তারা অভিযান পরিচালনা করে। সেই সময় তারা সেই অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন জানিয়েছেন তারা তিনটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিসিবি’র অর্থ বিভাগের কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়েছি। কিছু কাগজ পর্যালোচনায় আমরা বুঝতে পেরেছি, এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকার হিসাবে অস্বাভাবিকতা আছে। এ ছাড়া টিকিট বিক্রির ২ কোটি টাকাও এখানে দেখানো হয়নি। তাই এখানে টাকা আত্মসাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। সব কাগজপত্র হাতে পেলে সুনির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারবো।’ 

এই অভিযানের খবরটা আগে থেকেই বিসিবি দায়িত্বশীলদের জানা ছিল না। যে কারণে দুপুরে দুদকের কর্মকর্তাদের আকস্মিক আগমন তাই কিছুটা হলেও হতচকিত করেছে বিসিবি’র কর্মকর্তাদের। হঠাৎ এ অভিযান নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তারা (দুদক) কিছু বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন। আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বলেছি তাদের সহযোগিতা করার জন্য।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যানেজমেন্ট টিম বিসিবি’র পরিচালনা পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি এবং বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমাদের কাজ হচ্ছে বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা।’
মূলত তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিসিবি’র কাছে তথ্যাদি চাইতে বিসিবি কার্যালয়ে যায় দুদকের প্রতিনিধিদল। এরমধ্যে অন্যতম মুজিব শতবর্ষ উদ্‌যাপনের খরচের হিসাব। এ নিয়ে দুদক কর্মকর্তা আল আমিন বলেন ‘মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল। তবে অভিযোগ আছে, এরমধ্যে মাত্র ৭ কোটি টাকার খরচ দেখানো হয়। বাকি ১৯ কোটি টাকার মতো খরচের হিসাব দেয়া হয়নি।’ এ ছাড়া টিকিট বিক্রি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও জেনেছে দুদক, যেটার হিসাব দেখানো হয়নি। সেটিসহ ২০ কোটি টাকার বেশি গরমিল থাকতে পারে। মূলত তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত বিপিএলের টিকিট বিক্রির হিসাব ও তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফি’র অনিয়ম নিয়েই আপাতত তাদের তদন্ত। দুদক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তারা বিসিবি’র কাছে তথ্যাদি জানতে চেয়েছেন।

বিপিএলের টিকিট বিক্রির আয়েও গরমিলের অভিযোগ পেয়েছে দুদক এবং প্রাথমিকভাবে এখানে তারাও অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে দুদক কর্মকর্তারা জানান, বিপিএলের ১১তম আসরেই যেখানে ১৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেখানে তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত আট মৌসুমে টিকিট বিক্রি থেকে মোট আয় দেখানো হয় মাত্র ১৫ কোটি টাকা। দুদক কর্মকর্তারা বলেন, বিসিবি’র কাছ থেকে তারা তথ্য পেয়েছেন, আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিসিবি চুক্তি করতো এবং ওই চুক্তি অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করতো। টিকিট বিক্রি থেকে নির্দিষ্ট একটা অঙ্ক বিসিবিকে দিতো, যেটা তাদের আয় হিসাবে ধরা হতো। অন্যদিকে তৃতীয় অভিযোগ হলো- সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান দায়িত্বে থাকার সময় তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফি ৫০ হাজার থেকে একলাফে ৫ লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছিল। এতে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যায় প্রায় সব দলই। প্রতিবছর দুটি করে দল উচ্চ এন্ট্রি ফি দিয়ে নামমাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এনিয়েও অভিযোগের তদন্ত করবে দুদক। এনিয়ে দুদক কর্মকর্তারা বলেন, ‘এন্ট্রি ফি বাড়িয়ে দেয়ায় গত কয়েক বছরে এ প্রতিযোগিতায় ২-৩টি করে দল অংশ নিতো। এবার এন্ট্রি ফি কমিয়ে ১ লাখ টাকা করায় ৬০টি দল অংশ নিতে পেরেছে। তাদের মনে হয়েছে, আগে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা না থাকায় বা কোনো ধরনের চাপ থাকাতেই দলগুলো আসেনি। এখানে কোনো অসঙ্গতি থাকলে সেটিও যাচাই করে দেখবে দুদক।’

খেলা থেকে আরও পড়ুন

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status