বিশ্বজমিন
গোপন তথ্য ফাঁস, শিন বেতের কর্মকর্তা আটক, তদন্ত, ইসরাইলে তোলপাড়
মানবজমিন ডেস্ক
(৯ ঘন্টা আগে) ১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৮:৩১ অপরাহ্ন

ইসরাইলের আভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতে তোলপাড় চলছে। সাংবাদিক এবং একজন মন্ত্রীর কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে শিন বেতের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। চলছে তার বিরুদ্ধে তদন্ত। একে ‘ডিপ স্টেট তদন্ত’ অভিহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সরকারে থাকা জোটসঙ্গীরা। আইনজীবীদের মতে, ফাঁস হওয়া তথ্যগুলি হামাসের ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবরের হামলার সমসাময়িক ব্যর্থতার বিষয়ে শিন বেটের তদন্তের অপ্রকাশিত অংশগুলির সাথেও সম্পর্কিত। এ ঘটনা রাজনৈতিক মহল, দেশের নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ইতিমধ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা এবং শিন বেটের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে সর্বশেষ এই ঘটনা যুক্ত হয়ে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইসরাইল। এতে মঙ্গলবার বলা হয়েছে, সাংবাদিক এবং একজন মন্ত্রীর কাছে গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে শিন বেট নিরাপত্তা সংস্থা একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সোমবার থেকে এ বিষয়গুলো গুজব আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
লিকুড এমকে দলের ট্যালি গটলিভ এবং আভিহাই বোরন আংশিক বিবরণ টুইট করেন। ফলে মামলার তত্ত্বাবধানকারী বিচারক তদন্তের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে প্রত্যাহার করেন। এই তদন্ত শিন বেত অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবা এবং বিচার মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ পুলিশ তদন্ত বিভাগ (ডিআইপিআই) দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আদালত গ্রেপ্তারকৃত শিন বেত কর্মকর্তার নাম প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। তবে ওই ব্যক্তিকে কেবল হিব্রু অক্ষর ‘আলেফ’ দ্বারা শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ফাঁস হওয়া তথ্যের অভিযুক্ত প্রাপকদের শনাক্ত করার উপর প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তাদের নামকরণ করা হয়েছে প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি, চ্যানেল ১২-এর সাংবাদিক অমিত সেগাল এবং ইসরায়েল হায়োমের প্রতিবেদক শিরিত আভিতান কোহেন। পুলিশ বাহিনীতে ক্রমবর্ধমান ‘কাহানিবাদ’ সম্পর্কিত তদন্তের তিনটি তথ্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিন বেত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি অতি-ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের আওতাধীন। আলেফের আইনজীবীদের মতে, ফাঁস হওয়া তথ্য শিন বেতের ৭ অক্টোবরের তদন্তের সাথেও সম্পর্কিত- যা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। কাহানিজম হলো চরম-ডানপন্থি নেতা রাব্বি মীর কাহানে অনুপ্রাণিত মতাদর্শ। রাব্বি মীর কাহানে নেসেটের সাবেক সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সালে নিউইয়র্কে এক আততায়ীর হাতে মৃত্যুর আগে নিষিদ্ধ অতি-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী কাচের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
বেন গভিরের অতি-ডানপন্থী ওজমা ইয়েহুদিত দলকে কাহানে প্রতিষ্ঠিত নিষিদ্ধ বর্ণবাদী কাচ দলের উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয়, যদিও বেন গভির দাবি করেছেন, তিনি তার মতামত সংযত করেছেন। ক্ষুব্ধ জোট সদস্যরা বলেছেন, তদন্ত আরও প্রমাণ করে যে শিন বেত প্রধান রোনেন বারের পদে থাকা উচিত নয়। কিছু মন্ত্রী দাবি করেছেন, এটি বার এবং বাহারভ-মিয়ারা সহ- সরকারকে উৎখাতের জন্য ডিপ স্টেট ষড়যন্ত্রের প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা গত মাসে বারকে বরখাস্ত করার পক্ষে ভোট দেয় এবং বাহারভ-মিয়ারাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে। হাইকোর্ট বারের বরখাস্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করে।
এক্স-এ এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বলেছে, রোনেন বার এবং বাহারভ-মিয়ারার অধীনে শিন বেত ‘সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে, হুমকি দিয়ে একজন পুলিশ অফিসারকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং জোটের মন্ত্রী এবং নেসেট সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরর্থক রাজনৈতিক তদন্ত শুরু করে। সবকিছুই করার উদ্দেশ্য হলো রোনেন বারের বরখাস্ত রোধ করা। প্রধানমন্ত্রীর দল অভিযোগ করেছে যে, রোনেন বার এবং বাহারভ-মিয়ারা নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু অংশকে ডিপ স্টেট মিলিশিয়ায় পরিণত করেছেÑ যা আইনের শাসন এবং গণতন্ত্রের ভিত্তিকে ক্ষুন্ন করে। লিকুদ পার্টি বলেছে, রাজনৈতিক তদন্ত অবিলম্বে শেষ করা উচিত। বারকে তার পদ ছেড়ে দেয়া উচিত। বলা হয়েছে, শিন বেতে যেসব সদস্য কাজ করেন তাদের প্রয়োজন আলাদা একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। যদিও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করা হয়নি, নেতানিয়াহু তার ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে লিকুদ পার্টির বিবৃতি শেয়ার করেছেন।