বিশ্বজমিন
মালদ্বীপে ইসরাইলি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
মানবজমিন ডেস্ক
(৯ ঘন্টা আগে) ১৫ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৭:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৬ পূর্বাহ্ন

ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিলাসবহুল দ্বীপপুঞ্জে ইসরাইলিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে মালদ্বীপ। এ বিষয়ে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে একটি আইন অনুমোদিত হয়। তার পর তাতে সাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু। ফলে এটি এখন আইনে পরিণত হলো। এর ফলে ইসরাইলি পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি মালদ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রেসিডেন্টের কার্যালং থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অনুমোদন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অব্যাহত নৃশংসতা এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে (মালদ্বীপ) সরকারের দৃঢ় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মালদ্বীপ ফিলিস্তিনিদের প্রতি তার দৃঢ় সংহতি পুনর্ব্যক্ত করে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইসরাইল। প্রেসিডেন্ট মুইজুর অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। কৌশলগত অবস্থানে থাকা ১,১৯২টি প্রবাল দ্বীপের একটি ছোট ইসলামী প্রজাতন্ত্র মালদ্বীপ। তার নির্জন সাদা বালুকাময় সৈকত, অগভীর ফিরোজা উপহ্রদ এবং রবিনসন ক্রুসো-শৈলী ভ্রমণের জন্য পরিচিত। সরকারি তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৫৯ জন ইসরাইলি পর্যটক এই দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ করেন। অন্যদিকে মোট ২,১৪,০০০ বিদেশী পর্যটক ছিলেন। গত বছর প্রায় ১১,০০০ ইসরাইলি বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। যা মালদ্বীপের মোট পর্যটকের মাত্র ০.৬ শতাংশ ছিল। মালদ্বীপের বিরোধী দল এবং সরকারি মিত্ররা গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা করে ইসরাইলিদের নিষিদ্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজুর উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন। মঙ্গলবার দেশটি ঘোষণা করেছে, তারা ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে ‘দৃঢ় সংহতি’ প্রকাশ করে এই দ্বীপপুঞ্জে ইসরাইলিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে।
উল্লেখ্য, ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছর তার নাগরিকদের মালদ্বীপ ভ্রমণ এড়াতে অনুরোধ করে। সেই সময় মালদ্বীপ সরকার ইসরাইলি পাসপোর্টধারীদের দেশে প্রবেশ রোধে আইন পরিবর্তন করার এবং প্রক্রিয়াটি তদারকি করার জন্য একটি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইসরাইল তাদের নাগরিকদের মালদ্বীপ ভ্রমণের বিরুদ্ধে একটি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে। কারণ হামাসের সাথে যুদ্ধের সময় ইসরাইল-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৯৭৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে মালদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে মালদ্বীপ ইসরাইলি পর্যটকদের উপর থেকে পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০১০ সালে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়ার পর থেকে ইসরাইলিদের দ্বীপপুঞ্জের জন্য বিখ্যাত এই দেশটিতে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়। যদিও সেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ২০১৪ সালে পরিত্যক্ত হয়। যুদ্ধের ফলে ইসরাইলিদের বিদেশ ভ্রমণের উপর অন্যান্য দিক থেকেও প্রভাব পড়েছে। গাজা এবং এই অঞ্চলে ইরানের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইসরাইলের উপর বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ায় বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা তাদের তেল আবিব রুট বাতিল করেছে। এছাড়াও ইসরাইল-বিরোধী ফিলিস্তিনিপন্থি গোষ্ঠীগুলি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে বিদেশে থাকা ইসরাইলি পরিষেবা কর্মীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করেছে। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ফিলিস্তিনি যোদ্ধা গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলে এক ভয়াবহ আক্রমণ চালায়। এরপর শুরু হয় গাজা যুদ্ধ। হামাসের আক্রমনে ইসরাইলে ১,২০০ জন নিহত হয়। ২৫১ জন জিম্মিকে অপহরণ করে হামাস। ইসরাইল হামাসকে ধ্বংস করার জন্য, ক্ষমতা থেকে তাদের উৎখাত করার জন্য এবং ৫৯ জন বন্দী থাকা জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সামরিক অভিযান চালায়। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের মৃতের সংখ্যা ৫০,৯৮৩ জনে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব নয় এবং বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করা হয় না।