শেষের পাতা
৫ কিলারের লোমহর্ষক বর্ণনা
মিস কিলিংয়ের শিকার আইনজীবী সুজন
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে
১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
মিস কিলিংয়ের শিকার হন তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া। ভুল টার্গেটে কিলিং মিশন সম্পন্ন করে কিলাররা। মুঠোফোনে পাঠানো ছবির সঙ্গে মিল ভেবে ভাড়াটে ঘাতকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে কিলিং মিশন। ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে মারতে গিয়ে তারা ভুলক্রমে খুন করে আইনজীবী সুজনকে। মৌলভীবাজার শহরে পৌরসভা এলাকায় ঘাতকদের ছুরিকাঘাতে আইনজীবী সুজন মিয়া চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার ৫ দিনের মাথায় প্রেস বিফিংয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার ও হত্যার নেপথ্যের রহস্য গণমাধ্যমকর্মীদের জানান পুলিশ সুপার। গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে প্রেসবিফিংয়ে পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন ঘাতকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান এ পর্যন্ত আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার রাত প্রায় ১১টার দিকে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানাধীন মৌলভীবাজার পৌরসভার পশ্চিম পাশে মেম্বার রোডের ৪৪নং শাকির ভবনসংলগ্ন তালাবাহ হুমায়ুন হক ফ্রুট স্টোর দোকানের পাশে ফুটপাথের উপর আইনজীবী সুজন মিয়াকে অজ্ঞাতনামা কতিপয় ব্যক্তি ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সুজনের ভাই এনামুল হক সুমনের এজাহারের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় মামলা হয়।
একটি বিশেষ টিম গঠন করে জেলার বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থান, পার্শ্ববর্তী জেলাসহ তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। অভিযান পরিচালনা করে বুধবার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া মুজিব (২৫), পিতা-সামছুল হক, গ্রাম: বাসুদেবশ্রী (কালিশপুর), থানা ও জেলা-মৌলভীবাজার। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মো. আরিফ মিয়া (২৭), পিতা-মৃত সিজিল মিয়া, রঘুনন্ধনপুর, বাসা নং-৫২, থানা ও জেলা-মৌলভীবাজার সদর। হোসাইন আহমদ সোহান (১৯), পিতা-আনসার মিয়া, গ্রাম: দিশালোক, ইটা সিংকাপন, থানা ও জেলা-মৌলভীবাজার। লক্ষণ নাইডু (২৩), পিতা-মনা নাইডু, মাথিউরা চা বাগান, থানা-রাজনগর, জেলা-মৌলভীবাজার। আব্দুর রহিম (১৯), পিতা-মো. রফিকুল ইসলাম, গ্রাম: কাশিপুর পূর্বপাড়া, থানা-কেন্দুয়া, জেলা-নেত্রকোনা, বর্তমান ঠিকানা: মল্লিকসরাই (জসিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া), থানা ও জেলা-মৌলভীবাজার। এদের আটক করা হয়। আসামি নজির মিয়া মুজিবের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। নজির মিয়া মুজিবকে আটক করার পর মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন হয়।
সূত্রমতে, নজির মিয়া মুজিব তার পাশের বাড়ির অগ্রণী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড মিসবাহের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা ছিল। মুজিব চেয়েছিল মিসবাহকে একটা কঠিন জবাব দিতে। দুই বছর পূর্বে নজির মিয়া মুজিব শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় হোটেলে কাজ করাকালীন সময়ে দুধ ব্যবসায়ী লক্ষণের সঙ্গে পরিচয় হয়। লক্ষণের মাধ্যমে মিসবাহকে মারার জন্য টাকার বিনিময়ে কিলার ভাড়া করে মুজিব। মুজিব ভাড়াটিয়া ঘাতক লক্ষণসহ অন্যান্যের মোবাইলের মাধ্যমে মিছবাহের ছবি পাঠায়। ঘটনার দিন শহরের কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের খেলার মাঠে চলা বাণিজ্যমেলায় ভাড়াটিয়া কিলাররা আইনজীবী সুজনকে দেখে মিসবাহ ভেবে মুজিবকে ফোন দেয়। তারা তাকে জানায়, যে লোকের ছবি পাঠিয়েছ সেই লোককে আমরা পেয়েছি। মুজিব ভাড়াটিয়া কিলারদের ভিডিওকলের মাধ্যমে টার্গেট দেখিয়ে নিশ্চিত করতে বলে। খুনের শিকার সুজনকে কিলার আব্দুর রহিম ইমুতে ভিডিওকল দিয়ে মুজিবকে টার্গেট দেখায়। মিল থাকাতে তখন মুজিব তাদের মারতে বলে। তখন তারা সুজনের ওপর আঘাত চালায়। প্রেস বিফিংয়ে জানানো হয়, এই ৫ জন ছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করতে তৎপর রয়েছে পুলিশ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, ডিআইও মো. আবু হোসাইন, মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাজী মো. মাহবুবুর রহমান, ডিবি’র ওসি আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবিরসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।