শেষের পাতা
সিলেটে পর্যটনে পরিকল্পনা আছে বাস্তবায়ন নেই
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
সিলেটে পর্যটন নিয়ে পরিকল্পনা আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। এখনো সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমও শুরু হয়নি। এই অবস্থায় সিলেটে এসে বার বারই হোঁচট খাচ্ছেন পর্যটকরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- গত ঈদে সিলেটে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসার কথা ছিল। তবে আশানুরূপ পর্যটক আসেননি। এর অন্যতম কারন- সিলেটে পর্যটকদের জন্য তেমন সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠেনি। সিলেটের জাফলং। গোটা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত একটি স্পট। ছুটি পেলেই পর্যটকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন জাফলংয়ে। কিন্তু জাফলংয়ে নেই পর্যটক-বান্ধব পরিবেশ। মহিলা পর্যটকরা জাফলংয়ে এসে কাপড় বদলানোর মতো কোনো পরিবেশ নেই। বেসরকারি উদ্যোগে কিছু অস্থায়ী স্থাপনা আছে। সেগুলোতে পুরোপুরি নিরাপত্তা নেই। ফলে মহিলা পর্যটকরা সেটি ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তারা জানান- জাফলং বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকই সিলেটের হোটেলে ওঠেন। এরপর জাফলংয়ে বেড়াতে যান। জাফলংয়ের সোনা মিয়া পর্যটন স্পটের স্বত্বাধিকারী খায়রুল ইসলাম জানিয়েছেন- বেসরকারি উদ্যোগে হোটেল-মোটেল রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমান। সরকারি উদ্যোগে জিরো পয়েন্টের কাছে সুবিধা গড়ে তুললে জরুরি প্রয়োজনে পর্যটকরা সেটি ব্যবহার করতে পারেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- জাফলংয়ে পর্যটন স্পটের অদূরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। সেটি দূরবর্তী স্থানে হওয়ায় পর্যটকরা ব্যবহার করতে পারেন না। এতে করে ভোগান্তি চরমে। পাশাপাশি গাড়ি পার্কিং নিয়ে সমস্যা প্রকট। পর্যটকরা এসে দূরবর্তী স্থানে গাড়ি রেখে হেঁটে আসতে হয়। জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- জাফলংকে পর্যটন-বান্ধব করতে বার বার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন উৎসাহ দেখানো হচ্ছে না। কয়েক বছর আগে জাফলংয়ে প্রবেশের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়ায় পরবর্তিতে প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। তবে বিগত সরকারের সময় জাফলংয়ে একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জাফলংকে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। সেটি কয়েক মাসের মধ্যে দৃশ্যমান হবে বলে জানান-তিনি। এদিকে জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতে নেমে পর্যটকদের মৃত্যু ঘটে। এবারো পর্যটকদের মৃত্যু হয়েছে। তবে দুঘর্টনা এড়াতে পর্যটন পুলিশের কোনো কমতি নেই বলে জানিয়েছেন- পর্যটন পুলিশের ওসি সাহাদাত হোসেন। তিনি জানিয়েছেন- মাইকিং করে পর্যটকদের সচেতন করার পরও অনেকেই নদীতে নেমে যায়। এজন্য পর্যটক পুলিশ সার্বিক বিষয়ে লক্ষ্য রাখছে। জাফলংয়ের পর সিলেটের আকর্ষিত পর্যটন স্পটের মধ্যে রয়েছে সাদাপাথর। সেটি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ১০ বছর আগে এই পর্যটন স্পট আবিষ্কৃত হয়। তবে কাগজে-কলমে সেটি এখনো সরকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই পর্যটন স্পটে এবারে কয়েক লাখ পর্যটক ঘুরে গেছেন বলে জানিয়েছেন- স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভোলাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান নোমান। তিনি জানিয়েছেন- পর্যটন এলাকায় সাদা পাথরে সরকারের তরফ থেকে কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। ২০২২ সালে জিরো পয়েন্টের কাছে একটি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছিল। বন্যার ঢলের তোড়ে সেই টয়লেট ভেসে গেছে। এছাড়া পর্যটকদের কাপড় পরিবর্তন ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি। এই পর্যটন স্পটে যেতে হলে ১০ নম্বর এলাকা থেকে নৌকাযোগে যেতে হয়। প্রায় দুইশ’ নৌকা রয়েছে। এবার নৌকা সংকটের কারণে অনেক পর্যটক হেঁটে মূল স্পটে গেছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- আইনি জটিলতার কারণে দুই বছর থেকে খেয়াঘাটটি ইজারা দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের তরফ থেকে খেয়াঘাটে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এবারের উত্তোলিত টাকা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিতর্কিত হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও মুখবন্ধ রয়েছে। ভোলাগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- সাদাপাথরে এখনো পর্যটক পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে ঈদ মৌসুমে সেখানে থানা পুলিশ ও পর্যটক পুলিশের উপস্থিতি ছিল। পুলিশ সক্রিয় থাকার কারণে এবার সাদা পাথরে তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান ঈদ মৌসুমে সাদাপাথর পর্যটন স্পট পরিদর্শন করেছেন। জলাবন রাতারগুলে পর্যটন পুলিশের কার্যক্রম আছে। তবে সুযোগ-সুবিধা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। খালে বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে এবার পর্যটকদের জন্য নৌকায় বেড়ানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। তবে রাতারগুল যাতায়াতে পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সিলেটের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট হচ্ছে বিছনাকান্দি। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় এই পর্যটন স্পটে পর্যটকরা যান না। ফলে দিনে দিনে বিছনাকান্দির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের জন্য কোনো সুযোগ- সুবিধা নেই। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার বিছনাকান্দিতেও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। লালাখাল পুরোটাই পর্যটন স্পট। সেখানে নৌকাযোগে ঘুরে বেড়ান পর্যটকরা। এই স্পটে প্রশাসনের তরফ থেকে নজর দেয়া হয়নি।