ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

আমেরিকান পণ্য বর্জন করছেন কানাডিয়ান এবং ড্যানিশরা

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ সপ্তাহ আগে) ৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১:২১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১১ পূর্বাহ্ন

mzamin

টড ব্রেম্যান আর তার প্রিয় রেড ওয়াইন কিনছেন না, যা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আসতো। কানাডিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর একজন অভিজ্ঞ সৈনিক ছিলেন ব্রেম্যান। কানাডা, ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক লোকেদের মধ্যে তিনিও একজন, যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক এবং মার্কিন মিত্রদের প্রতি তার আচরণের কারণে মার্কিন পণ্য কেনা এড়িয়ে চলেছেন। নোভা স্কটিয়ায় বসবাসকারী ব্রেম্যান বলেন, ‘আমি আমেরিকান বাহিনীর সাথে কাজ করেছি। আমাদের দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক কোথায় যাচ্ছে তা দেখে আমি খুবই হতাশ। কিন্তু আমার মনে হয় এখনই সময় এসেছে উঠে দাঁড়ানোর। আমার মনে হয়, স্থানীয় পণ্য কেনা এবং কানাডিয়ান ব্যবসাকে সমর্থন করার এটাই সঠিক সময়।’

তার স্ত্রীর সাথে বাজারে বেরিয়ে ব্রেম্যান পছন্দের ওয়াইনসহ যে সমস্ত আমেরিকান পণ্য কিনতেন তার পরিবর্তে এখন কানাডিয়ান ওয়াইন পান করা শুরু করেছেন। ব্রেম্যানের কথায়, তবে কোন পণ্যগুলো কানাডিয়ান তা নির্ধারণ করা সবসময় সহজ নয়। কখনও কখনও লেবেলিং বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সাহায্য করার জন্য তিনি এখন তার ফোনে একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন যা কোনও পণ্যের বারকোড স্ক্যান করতে পারে এবং এটি কোথা থেকে এসেছে তা শনাক্ত করতে পারে। ম্যাপেল স্ক্যান নামে এই অ্যাপটি কানাডার স্থানীয় পণ্য কেনাকাটা করতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা।

ম্যাপেল স্ক্যানের প্রতিষ্ঠাতা সাশা ইভানভ বলেছেন যে, গত মাসে চালু হওয়ার পর থেকে তার অ্যাপটি ১০০,০০০ বার ডাউনলোড হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে কানাডিয়ানরা এভাবেই নিজের দেশের জিনিস কিনতে থাকবে। ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত আমদানি শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ব্রেম্যানের মতো কানাডিয়ানরা আমেরিকান পণ্য বর্জন করছেন। ইতিমধ্যেই সমস্ত বিদেশি গাড়ি, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫% শুল্ক এবং অন্যান্য কানাডিয়ান এবং মেক্সিকান পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। তার জেরেই এই প্রতিক্রিয়া।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের উপর ২০% শুল্ক আরোপ করা হবে, যেখানে যুক্তরাজ্য ১০% শুল্ক আরোপের সম্মুখীন হবে।ট্রাম্প বলেছেন যে, এই শুল্ক মার্কিন উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। কর রাজস্ব বৃদ্ধি করবে এবং মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে। তবে, তারা বিশ্ব বাজারকে আতঙ্কিত করে তুলেছে, যা গত মাসে তীব্রভাবে পতনের সম্মুখীন হয়েছে। ট্রাম্প এমনকি কানাডাকে ৫১তম রাজ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যা কানাডিয়ান সরকার তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। অটোয়াও পাল্টা শুল্ক হিসেবে ৬০ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার এবং মার্কিন অটো সেক্টরের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারী কানাডিয়ানদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ইউরোপীয় দেশগুলোতেও মার্কিন পণ্য বর্জনের হিড়িক বেড়েছে। মার্কিন পণ্য বয়কটের জন্য বিশেষভাবে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়েছে ডেনমার্কে, যেখানে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের ভূখণ্ড অধিগ্রহণ করতে চান বলে জানিয়েছেন।ডেনমার্কের বৃহত্তম মুদি দোকান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্যালিং গ্রুপ সম্প্রতি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলোকে ফোকাস করতে পণ্যের ওপর একটি কালো তারকা প্রতীক যুক্ত করেছে। কোপেনহেগেনের শহরতলির স্কোভলুন্ডে বসবাসকারী একটি স্কুলের অধ্যক্ষ বো আলবার্টাস বলেন, তিনি এই বয়কটে যোগ দিয়েছেন।

তার কথায়, ‘গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা মেনে নেয়া যায় না। আমি আমেরিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই হয়তো করতে পারবো না, তবে আমি আমার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ভোট দিতে পারি।’ 

আলবার্টাসসের প্রথম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি ছিল নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাস এবং অ্যাপল টিভিসহ মার্কিন স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলোর সাবস্ক্রিপশন বাতিল করা। আলবার্টাস হলেন ডেনিশ ফেসবুক গ্রুপের প্রশাসক যিনি মার্কিন পণ্য বর্জনে জনগণকে সহায়তা করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ। ৯০,০০০ সদস্য বিশিষ্ট এই গ্রুপে, লোকেরা জুতা থেকে শুরু করে লন মাওয়ার পর্যন্ত মার্কিন পণ্যের স্থানীয় বিকল্পগুলো শেয়ার করে।

কোপেনহেগেনের ব্রডার্স নামক একটি মুদি দোকানের মালিক মেটে হিরুল্ফ ক্রিশ্চিয়ানসেন তার দোকানে চিটোস ক্রিস্পস এবং হার্শি'স চকলেটের মতো আমেরিকান পণ্য মজুদ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। ডেনিশ বা ইউরোপীয় পণ্য দিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপন করছেন। তিনি মনে করছেন যে, কিছু পণ্য প্রতিস্থাপন করা সহজ। যেমন কোকা-কোলা ডেনিশ ব্র্যান্ড জলি কোলা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সহজ। কিন্তু ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি এড়ানো বেশ কঠিন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ডেনমার্কের বয়কট আন্দোলন ট্রাম্পের নীতি এবং বাগাড়ম্বরের প্রতি মানুষের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

মার্কিন বাণিজ্য নীতির ইতিহাসে বিশেষজ্ঞ  যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ডগলাস আরউইন  বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য হ্রাসের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের পণ্য বয়কট কতটা অর্থনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হবে তা বিচার করা কঠিন। অতীতে, বয়কট দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং তা থেকে খুব বেশি কিছু অর্জন করা যায়নি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পদক্ষেপের প্রতি প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া হিসাবে শুরু হয় কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা ম্লান হয়ে যায়।

যদিও  কানাডায় ‘বাই কানাডিয়ান’ মনোভাব বৃদ্ধির ফলে অনেক স্থানীয় ব্র্যান্ডের বিক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কানাডিয়ান মুদি দোকানের সিইও লোবলা লিঙ্কডইনে পোস্ট করেছেন যে কানাডিয়ান পণ্যের সাপ্তাহিক বিক্রয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কানাডার আলবার্টার বাসিন্দা বিয়ানকা পার্সনস, স্থানীয়ভাবে তৈরি পণ্যের প্রচারণার জন্য ‘মেড ইন আলবার্টা’ নামে একটি উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।  তিনি বলেন, ‘শুল্ক আরোপের পর থেকে এই পণ্যের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আমরা এখন প্রতি দুই সপ্তাহে ২০,০০০ এরও বেশি ভিজিটর পাচ্ছি।’

অন্টারিও এবং নোভা স্কটিয়াসহ বেশ কয়েকটি কানাডার প্রদেশ শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় তাদের মদের দোকানের তাক থেকে আমেরিকার তৈরি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় সরিয়ে ফেলেছে। জ্যাক ড্যানিয়েলের নির্মাতা ব্রাউন-ফরম্যানে এই পদক্ষেপকে ‘শুল্কের চেয়েও খারাপ’ বলে অভিহিত করেছেন।বয়কটের শিকার হওয়া আমেরিকান ব্যবসাগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালেডোনিয়া স্পিরিটস, যা কানাডিয়ান সীমান্তের কাছে ভার্মন্টে অবস্থিত একটি ডিস্টিলার। ক্যালেডোনিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান ডিস্টিলার রায়ান ক্রিশ্চিয়ানসেন বলেছেন যে, শুল্ক ঘোষণার পর তার অনেক অর্ডার সরাসরি বাতিল করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত আমেরিকান মশলা কোম্পানি বার্ল্যাপ অ্যান্ড ব্যারেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইথান ফ্রিশ, যারা  কানাডাতেও মশলা রপ্তানি করে, বলেছেন যে তিনি ভোক্তা বয়কটের চেয়ে তার কোম্পানির আমদানির উপর শুল্কের প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বেশি চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এমন একটি ধারণা আছে যে, যদি আপনি কোনও আমেরিকান কোম্পানি বয়কট করেন, তাহলে এর অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়বে। সেইসঙ্গে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, আমার মনে হয় এই ধারণাটি সঠিক নয়। কারণ মার্কিন অর্থনীতি এমনিই ভেঙে পড়ছে। আমাদের মতো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে।’

সূত্র: বিবিসি

পাঠকের মতামত

Amazing and Interesting

জনতার আদালত
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৪:৩১ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status