ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে বৃহৎ কর্মসূচি দেবে বিএনপি

ইসরাইলি গণহত্যা এবং বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিএনপি’র পক্ষ থেকে শিগগিরই সারা দেশে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় গণহত্যার প্রতিবাদে’ এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা জানান। এই কর্মসূচিতে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের হাতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পতাকা এবং বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ছিল। সমাবেশের পর ছাত্রদলের বিশাল একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি আজকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা দিতে চাই, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে, এই ইসরাইলি গণহত্যা এবং বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিএনপি’র পক্ষ থেকে অতি শিগগিরই সারা দেশে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা একটি বৃহৎ কর্মসূচি ঘোষণা করবো। আমরা এদেশের জনগণকে আহ্বান জানাই, পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম বিশ্বে যারা আছেন তাদের আহ্বান জানাই, যারা পরাশক্তির একটি অংশ যারা মদত দিচ্ছে ইসরাইলিদের তাদের আহ্বান জানাই, এই মুহূর্ত থেকে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য আপনাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরাইলিরা কখনো জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনের প্রতি সম্মান দেখায়নি, এই ইসরাইলি সরকার জাতিসংঘের কোনো নির্দেশনা কোনো অনুশাসন আজ পর্যন্ত মানে নাই।

সালাহউদ্দিন বলেন, এই পরাশক্তির দুই-একটা দেশ তারা সমসময় যখনই ফিলিস্তিনি মসুলমানদের পক্ষে জাতিসংঘে রেজ্যুলেশন পাস করেছে তারা তার বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করেছেন, তা আপনারা সবাই জানেন। তার মানে হচ্ছে, ইসরাইলির মদতদাতা এই কয়েকটি পরাশক্তিকে তাদের ভূমিকা নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত প্যালেস্টাইন মুক্ত না হবে, যত দিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ না হবে, যতদিন পর্যন্ত ইসরাইলি বর্বর আগ্রাসন বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবীর জনগণকে আহ্বান জানাবো যে, আমাদের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতেই থাকতেই হবে।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে আজকে এক কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবং ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যে ইসরাইলিকে যারা মদত দিচ্ছে তাদের সমস্ত মদত বন্ধ করতে হবে এবং ইসরাইলের সমস্ত পণ্য আমরা বর্জন  করবো, তার মানে এই না যে আমরা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা করবো।

সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, গতকালকে (সোমবার) বাংলাদেশে কিছু স্থাপনায় হামলা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই। আমরা বলতে চাই, সরকারের ব্যর্থতা এখানে লক্ষণীয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা এখানে লক্ষণীয়। তাদের উচিত ছিল আগে থেকে এখানে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাহলে বাংলাদেশের নামে এই বদনামটাকে আমাদের নিতে হতো না।

তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে গাজা ও রাফায় গণহত্যা বন্ধ চাই। সারা পৃথিবীর মানুষ জেগে উঠেছে। গতকালকে (সোমবার) সারা পৃথিবীর মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে, নো ওয়ার, নো ওয়ার্ক, নো স্কুল প্রোগ্রাম করেছে- বাংলাদেশেও সেটা পালিত হয়েছে, আমরা সবাই অংশগ্রহণ করেছি। আজকে ছাত্রসমাজের সবচাইতে প্রগতিশীল ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।

বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বাংলাদেশের বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার আওয়ামী লীগ পরোক্ষভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, কীভাবে? তারা বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইল ব্যতীত সকল রাষ্ট্রে গমনের যে নিদের্শনা ছিল, সেখান থেকে ‘ইসরাইল; শব্দটি রিমুভ করে দিয়েছিল, প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তার মানে দাঁড়ায় তারা (ফ্যাসিস্ট সরকার) ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। অথচ তারা বাংলাদেশের মুসলমানদের পক্ষে, সারা পৃথিবীর মসুলমানদের পক্ষে মায়া কান্নাও কাঁদতো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী এবং যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে সকল গণতান্ত্রিক শক্তি, সামাজিক শক্তিসহ এদেশের আপামর জনসাধারণের বিরুদ্ধে আঁড়িপাতা ষন্ত্রের মাধ্যমে যে নির্যাতনের তারা সূচনা করেছিলেন, সেই আঁড়িপাতা যন্ত্র পেগাসাস স্পাইওয়্যার সেটি ইসরাইল থেকে খরিদ করেছিল এই শেখ হাসিনার সরকার।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে যেখানেই হাসিনা আশ্রয় নিন না কেন বাংলাদেশের মানুষ সারাজীবন এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই ধিক্কার জানিয়েই যাবে যে তারা মুসলিম বিদ্বেষী, ইসলাম বিদ্বেষী, আলেম বিদ্বেষী, তারা পৃথিবীতে ইসরাইলপন্থিদের সমর্থক ছিল।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিকুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বক্তব্য রাখেন।